মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত আমাদের পরম বন্ধু রাষ্ট্র। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি কখনো বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী বাঙ্গালীদের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে।’ কখনো বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী বাঙালিরা হচ্ছে উই পোকা’। এধরনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অভব্য কথাবার্তা শুধু তিনিই বলেন না, তার দল ও সরকারের বড় বড় চাঁইরা প্রায়ই বলেন।
সাম্প্রদায়িক বিজেপির ততোধিক সাম্প্রদায়িক নেতা ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সফরে এসে হুংকার ছেড়েছেন : ‘বিজেপি রাজ্য ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না।’
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই রাজ্যে রাজনৈতিক সফরে এসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যুকে আবার খুঁচিয়ে তুলেছেন। বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে দু’দুটো জনসভা থেকে শাহ দাবি করেছেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে সীমান্ত দিয়ে “কোনও মানুষ দূরে থাক- একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না।”
‘বন্ধু রাষ্ট্র’ ‘মহান’ ভারতের এই হুংকারবাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলে মনে হতে পারে, বাংলাদেশ থেকে হরদম লোকজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভিড় করার জন্য লাইন ধরে থাকে! ভারত এবং তার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ হঠাৎ করেই বিলেত-সুইজারল্যান্ড বনে গেছে। টাকা পয়সায় সুখে-শান্তিতে সেখানে বসবাস করার জন্য আশপাশের দেশ থেকে পঙ্গপালের মত লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেছে। অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত। জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের দশা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের চেয়ে ভালো নয়। কিন্তু লজ্জা কম থাকলে ডায়লগ ছাড়তে সমস্যা হয় না।
অমিত শাহ লোকটাই ‘অমিত’। পরিমিতি, লাজ-লজ্জা কিংবা নিয়ন্ত্রণ সম্ভবত তার অভিধানে নেই। এজন্যই হয়তো পার্শ্ববর্তী দেশকে চাপে রেখে রাজনীতির প্রয়োজনে নির্লজ্জের মতো কথা বলতে তাকে মোটেও কুণ্ঠিত হতে হয় না।
যদিও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দাবি করছে, তাদের শাসনামলে অনুপ্রবেশ মদত পেয়েছে বলে কেন্দ্রীয় (বিজেপি) সরকার যা বলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যুর আড়ালে বিজেপি আসলে সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকেই সামনে আনতে চাইছে।
বিবিসির বিশ্লেষণ, বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন মাত্র মাসদুয়েক দূরেÑ আর সে রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের প্রধান চ্যালেঞ্জার বিজেপির প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই। ইদানিং খুব ঘন ঘন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সফরেও আসছেন এবং গতকাল বৃহস্পতিবার সবশেষ সফরে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে তিনি দুটো বড় জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন।
কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে দুটো জনসভা থেকেই তিনি তার রাজনৈতিক চালবাজির ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেন যে, বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যু ভোটে বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে যাচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক অমিত শাহ জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “অনুপ্রবেশ নিয়ে আপনারা বিরক্ত কি না বলুন? আর মমতা ব্যানার্জি কি আদৌ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবেন?” তিনি যোগ করেন, “জেনে রাখুন, রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তবেই কেবল অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। বিজেপি সরকার গড়লে সীমান্ত দিয়ে মানুষ তো দূরে থাক- একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না দেখে নেবেন!
অথচ মজার ব্যাপার দেখুন, কোচবিহার বা ঠাকুরনগরে অমিত শাহ যখন বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ নিয়ে এসব উস্কানিমূলক কথা বলছেন- ঘটনাচক্রে ঠিক তার আগের দিনই তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে লিখিত জবাবে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় পরের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ক্রমশ বিপুল হারে কমেছে।
রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং তার কর্তারা কতটা আমাদের বন্ধু আর কতটা তাচ্ছিল্য-প্রবণ নিম্ন রুচির শত্রু, তা এইসব বক্তব্য ও চালবাজির রাজনীতি থেকে বোঝা যায়। এরপরও আমাদের ‘গ্রামে’ একতরফা অন্ধ প্রেমিকের অভাব নেই। তারা শুধু দিয়েই সুখ পেতে চান। একবারের জন্যও চোখটা তুলে দেখতে চান না, যাকে বন্ধুত্বের মোড়কে এত আনুগত্য দেওয়া হচ্ছে, সে আসলে মানুষ না অন্য কিছু! দেশের প্রয়োজনে অন্তত মূল্যায়ন ও পরখের এখন সময়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।