Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রক্তপাতেও দমছে না মিয়ানমারের আন্দোলন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৪০ এএম

মিয়ানমারে রক্তপাত সত্ত্বেও স্বৈরাচারী সেনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত, গণতান্ত্রিক সরকারকে উপড়ে ফেলে মায়ানমারের ক্ষমতার দখল নিয়েছে সেনাবাহিনী। এই সামরিক অভ্যুত্থানে সেনার হাতে বন্দি হন নেত্রী আং সান সুচি ও তাঁর অনুগামীরা। গণতন্ত্রের এমন অপমানে সরব সাধারণ জনগণ।

বুধবার গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবথেকে হিংসাত্মক দিন দেখল মায়ানমার। বিক্ষোভ রুখতে ৩০ শহরে কার্ফু জারি করেছে সেনা। নিষিদ্ধ ফেসবুক, টুইটার-সহ সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ। তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি প্রতিবাদের মুখ। সুচির মুক্তির দাবি নিয়ে বার্মিজ সেনার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাজধানী নেপিডোর পথে নামেন লাখ লাখ মানুষ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান থেকে গুলি সবই ব্যবহার করে পুলিশ। সংবাদ সংস্থা সূত্রে, মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে এক বিক্ষোভকারীর, জখম বেশ কয়েকজন। তা সত্ত্বেও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে প্রতিবাদের পথ থেকে এক চুলও সরছেন না আন্দোলনকারীরা তা স্পষ্ট।

জানা গিয়েছে, বুধবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ১০০-এরও বেশি সরকারি কর্মচারী আইন অমান্য কর্মসূচিতে অংশ নেন। মিছিলে ছিলেন সরকারি চিকিৎসক, শিক্ষক থেকে রেলের কর্মীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। রাজধানী নে পি দ্য-এ সেই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে হাওয়ায় গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এক আন্দোলনকারীর মাথায় লাগলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় তাঁর। প্রত্যক্ষদর্শী এক সরকারি চিকিৎসক জানিয়েছেন, পুলিশের চালানো রবারের গুলিকেও অনেকে জখম হয়েছেন।

শুধু নেপিডো নয়, মায়ানমারের ম্যান্ডেলে সহ বাকি শহরেও গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলন রুখতে একই পন্থা নিয়েছিল সেনা। কোথাও কোথাও থেকে আন্দোলনকারীদের তরফেও পাল্টা পাথর ও ইঁট ছোড়ার খবর মিলেছে। গণতন্ত্রের দাবিতে চলা আন্দোলনকে যে পথে দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া যুবনেতা এস্টার জে নাও বলেন, ‘আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সময়ই যদি রক্তপাত হয়, তাহলে আমরা তাদের (সেনাবাহিনী) দেশটি দখল করতে দিলে আরও অনেক কিছুই হবে।’ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মঙ্গলবার ছিল সবচেয়ে সহিংস দিন

বিক্ষোভে শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা গণতন্ত্র পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তিদের তাৎপর্যপূর্ণ পরিণতির মুখোমুখি করতে তারা কাজ করছে। মিয়ানমারকে করা সহায়তার বিষয়টি তারা মূল্যায়ন করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘ক্ষমতা ত্যাগ, নির্বাচিত সরকার পুনর্বহাল, আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সব বাধা প্রত্যাহার ও সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা আবার আহ্বান জানাই।’

মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ওলা আল্মগ্রেন বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো দমনপীড়ন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সেনা অভ্যুত্থান হয়। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। একই সঙ্গে তারা দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের আটক-গ্রেপ্তার করেছে। তারা সু চির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে তাঁকে রিমান্ডে নিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ