পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন কাজের ফলে রাজধানীতে জনভোগান্তি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে চলা বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নগরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এ ভোগান্তি যেমন যাতায়াতের ক্ষেত্রে ঘটছে, তেমনি উন্নয়ন কাজের ফলে সৃষ্ট ধুলো-বালি পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের উপর সারাবিশ্বে জোর দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদি পরিবেশগত প্রভাব ও জনদুর্ভোগ যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করা হয়। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম ঘটছে। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে সময় ব্যয় করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাসযোগ্যতা, বায়ুদূষণ, পরিবেশগত দূষণ, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি মানদÐে ঢাকা শহর বিশ্ব র্যাংকিংয়ে প্রথম দু’তিনটি শহরের মধ্যে স্থান পাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে শহরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বায়ুদূষণ ছাড়াও সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যাওয়া, রাস্তায় কাদামাটি ও ময়লার স্তুপ, নির্মান সামগ্রী ফেলে রাস্তা বøক করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের দেশে দেশে চমক লাগানো সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের খবর পাওয়া যায়। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর আগেই তার সম্ভাব্য সময়সীমা এবং বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের চিত্র সম্পুর্ন ভিন্ন।
গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে ‘উন্নয়নের চাপে ন্যুব্জ ঢাকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা, যানজট ও নাগরিক জীবনের উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্তত ৮টি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো, সঞ্চালন লাইনেই সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও থেমে নেই। তবে প্রধান প্রকল্পগুলোর কোনোটিরই কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। প্রকল্পগুলোর কাজ সময়মত শেষ করতে না পারায় নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত অশেষ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঢাকায় গণপরিবহনের চাপ ও যানজট কমাতে গ্রহণ করা বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের কাজ গত ৮ বছরেও শেষ হয়নি। এই প্রকল্প এলাকার অন্তত ১৩ কিলোমিটার জুড়ে বছরের পর বছর ধরে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একই এলাকাসহ পুরো ঢাকা শহর জুড়ে বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্টোরেল, হাইস্পিড ট্রেন, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর গোলচত্বর ও রেলস্টেশনকে ঘিরে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবসহ নির্মানাধীন মেগা প্রকল্পের কোনটাই সময়মত শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ। দেখা যাচ্ছে, এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে করতে একেক জেনারেশন পার হয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের সময় নির্ধারিত করা হলেও তা সময় মতো শেষ করা হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকল্প নির্মাণের মেয়াদ দশ বছর ধরা হলেও সেখানে তার অর্ধেক সময়ে শেষ করা হয়। আমাদের দেশে ঘটে উল্টো ঘটনা। প্রকল্প শেষ করার মেয়াদ পাঁচ বছর ধরা হলে তা শেষ করতে সময় লাগে দশ বছর। এর কারণ, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ও বাস্তবানুগ পরিকল্পনা না থাকা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শীতার পাশাপাশি কমিশন বাণিজ্য জড়িয়ে থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে সময়মতো কোনো প্রকল্পই শেষ করা হচ্ছে না। এতে যেমন জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে, তেমনি বছরের পর বছর ধরে জনদুর্ভোগও সৃষ্টি হচ্ছে।
শহরের যানজটসহ নানাবিধ সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার কথা বলা হচ্ছে। ঢাকার দুই মেয়রের পক্ষ থেকে সমন্বয়হীনতা দূর করার প্রস্তাবনাও এসেছিল। তবে তার কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। সেসব প্রস্তবানায় যাই থাকুক, সরকারি যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার সম্ভাব্য সুদূর প্রসারি ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে যে ফিজিবিলিটি রিপোর্ট সামনে রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করার কথা তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। একেকটি উন্নয়ন প্রকল্প বছরের পর বছর ধরে ধীর গতিতে চলমান রাখায় প্রকল্প এলাকায় যে জনদুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে তা বিশ্বের কোথাও দেখা যায় না। উন্নয়নের বিপক্ষে কেউ নয়। তবে যেভাবে এবং যে প্রক্রিয়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে উন্নয়ন করা হচ্ছে, তা কাম্য হতে পারে না। ফ্লাইওভারসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বার বার সময়সীমা বাড়ানোর সাথে সাথে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়বৃদ্ধির নজির রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়সীমা ঠিক রাখতে ব্যর্থতার পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার যেমন দায় রয়েছে, তেমনি প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির দুষ্টচক্র সক্রিয় থাকে। যারা নানা অজুহাতে প্রকল্পের সময়সমীমা বাড়িয়ে বাজেট বৃদ্ধির ফায়দা হাসিল করতে তৎপর থাকে। ঢাকার মত জনবহুল শহরে প্রধান প্রধান রাস্তাগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বছরের পর বছর ধরে বাড়িয়ে দেয়া কোনো কাজের কথা নয়। সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়নে তাগিদ এবং প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণ না করার জন্য সম্প্রতি খোদ প্রধানমন্ত্রীও তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কাজেই, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আগে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও জনদুর্ভোগ যাতে সৃষ্টি না হয়, এ বিষয়ে ভালভাবে গবেষণা করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করা এবং বাজেট বৃদ্ধির অস্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে প্রশ্রয় না দিয়ে স্বল্পতম সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ণের রূপরেখা সম্পর্কে ভাবতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।