Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করবে আইসিসি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৫০ পিএম

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত ও বিচার শুরুর রায় দিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, আইসিসি।ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শিগগিরই তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, এমন প্রত্যাশা ফিলিস্তিনের। বিচারের পরিধি নিয়ে আইসিসির রায়কে স্বাগতও জানিয়েছেন তারা। -রয়টার্স

অন্যদিকে বিচারিক এখতিয়ার প্রত্যাখ্যান করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। যুগের পর যুগ ধরে নিজ ভুখন্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা অবশেষে পাচ্ছেন বিচার চাওয়ার সুযোগ।ফিলিস্তিনে ভুখন্ডে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ তদন্তের এখতিয়ার আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের, শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ট বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে এ রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, আইসিসি। আইসিসির এই রায়ের ফলে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তের পথ উন্মুক্ত হলো। তাই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষ।তারা বলেন, দখলকৃত অঞ্চলে নিপীড়িত মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার পেলাম। গাজায় তিনটি যুদ্ধে লিপ্ত ছিল তারা। আশা করব শিগগিগরই ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, রায়ের মাধ্যমে কখনও না হওয়ার থেকে দেরিতে হলেও ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েল বাহিনীর আক্রমণের বিচার পাবে বলে প্রত্যাশা করছে। তবে শুক্রবারের আন্তর্জাতিক আদালতের ওই রুলিংয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইসরায়েল। তারা নিজেদের ভালো মানুষ দাবি করে বলছে, ফিলিস্তিনিদের সংহিংসতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তারা পাল্টা আক্রমণ করে। এর আগে গত শুক্রবার আইসিসির প্রি-জাস্টিস চেম্বারের তিনজন বিচারক ফিলিস্তিন অঞ্চলে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং নৃশংসতার বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির আছে বলে রায় দেয়। রুলে বলা হয়, হামাসসহ ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণের ঘটনা আন্তর্জাতিক আদালত তদন্ত করতে পারবে। যদিও নিকট ভবিষ্যতেই কোনো ঘটনা তদন্তের সম্ভাবনা নেই। আইসিসির প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা বলেন, তিনি এখন ২০১৪ সালে ইসরায়েল এবং চরমপন্থি হামাসের মধ্যে গাজার যুদ্ধ এবং ২০১৮ সালের গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ এবং দখলকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলর বসতি তদন্ত করবেন।

গাজার খান ইউনুসের তওফিক আবু জামা নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সাত সপ্তাহব্যাপী ওই যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তার যৌথ পরিবারের ২৪ সদস্য নিহত হয়। ওই যুদ্ধে মোট ২১ শ ফিলিস্তিনের মৃত্যু হয় যাদের অনেকেই ছিল সাধারণ নাগরিক। অন্যদিকে, একই যুদ্ধে ইসরায়েলের ৬৭ জন সৈনিক ও ছয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। তিনি বলেন, খান ইউনুস এলাকায় বিমান হামলার ঘটনার বিষয়ে ইসরায়েলির সামরিক আদালত একটি তদন্ত করে। ওই বিমান হামলা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে করা হয়েছিল এবং আইন সম্মত ছিল বলে ইসরায়েলের আদালত রায় দেয়। আইসিসির রায়ের বিষয়ে ইসরায়েল সীমান্ত এলাকায় গাদি বারকোনি যিনি ফিলিস্তিনিদের মর্টার এবং বোমার আঘাতে দুই পা হারান, তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।বারকোনি বলেন, ‘আমরা ভালো মানুষ, নিষ্পাপ শিশুদের হত্যার জন্য আমরা গুলি করি না। কিন্তু তারা আমাদের হত্যার জন্য গুলি করে। ’ গাজা সীমান্ত এলাকার ‘ইসকল’ আঞ্চলিক কাউন্সিলের এই প্রধান বলেন, গাজা এবং পশ্চিম উপত্যাকার প্রত্যেক নাগরিকের মৃত্যুতে আমি কাঁদি। কিন্তু সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল উভয়ই একটি বিষয়ে একমত হয়েছে। সেটা হলো, আইসিসির কাছ থেকে তারা দ্রুত কোনো তদন্ত প্রত্যাশা করে না। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, এমন নয় যে আগামীকাল সকালেই গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারি হবে। আইসিসির রায়ের বিষয়ে তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে করণীয় ঠিক করতে পরামর্শ করবেনে জানিয়ে আইসিসির রায়কে তিনি রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করেন। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সাবেক আইন উপদেষ্টা ডায়না বাট্টু বলেন, ফিলিস্তিনিরা এখনো অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রকৃত বিচারের পথ এখনো অনেক দূরে। আইসিসি যেন অগ্রসর হতে না পারে তার জন্য নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হবে। আন্তর্জাতিক এই আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এমন নয়। পূর্বেই আইসিসি এমনটি করেছে কিন্তু জবাবে বিশ্ব নেতারা কিছুই করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাবার তিন সপ্তাহ পর আইসিসি এই রায় দিল। ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আদালতের বেনসোদাসহ দুই কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডন্টে হিসেবে বাইডেন শপথ নেয়ার পর স্টেট ডিপার্টমেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। শুক্রবারের আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু আইসিসির রায়কে ইহুদিবিরোধী বলে উল্লেখ করে সকল শক্তি দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি রাযের পর ঐতিহাসিক দিন বলে অভিহিত করেন। অতীতে ইসরায়েল আইন-কানুন না মেনে ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত থেকে ফিলিস্তিন বাদ যাবে না। ফিলিস্তিনের হামাসকে ইসরায়েল এবং ‍পশ্চিমা বিশ্ব ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে গণ্য করে। তাদের অভিযোগ, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামাস ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করে। তবে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। আইসিসির তদন্তে তাদের ভয় নেই জানিয়ে হামাসের মুখপাত্র হাজেম বলেন, ‘হামাস এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ বৈধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইসিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ