Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দৈনিক ইনকিলাব ও মাওলানা এম এ মান্নান রহ.

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

মাওলানা এম এ মান্নান রহ. দৈনিক ইনকিলাবের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। তার আরো পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, খ্যাতিমান শিক্ষক, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অবিসংবাদী সভাপতি, দেশের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ মসজিদে গাউসুল আজমের প্রতিষ্ঠাতা, জনপ্রিয় রাজনীতিক ও মন্ত্রী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর পরিচিতি ও খ্যাতি ছিল কিংবদন্তিতুল্য। ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসক ও রাজনীতিকদের অনেকেই ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি বাংলাদেশ ও ওইসব দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও মিত্রতার সেতুবন্ধ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। মাওলানা এম এ মান্নান রহ. বিস্ময়কর ও বহুমুখী প্রতিভাব অধিকারী ছিলেন। তাঁর দৃশ্যগ্রাহ্য কোনো ব্যর্থতা নেই। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সাফল্য তার হস্তচুম্বন করেছে। এমন উদ্যমী-উদ্যোগী, কর্মিষ্ঠ ও সফল মানুষ আমাদের দেশ ও সমাজে খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায় না।

দৈনিক ইনকিলাব বহুদিন ছিল তাঁর স্বপ্নের অনুষঙ্গী। হৃদয়ে লালিত-বর্ধিত ইনকিলাব বাস্তবে রূপ নিতে অনেক সময় নিয়েছে এবং অবশেষে ১৯৮৬ সালের ৪ জুন ঘটে তার সাড়ম্বর আত্মপ্রকাশ। মাওলানা এম এ মান্নান রহ. অনেক কিছুই করেছেন। তাঁর এই কীর্তিস্তম্ভগুলোর মধ্যে দৈনিক ইনকিলাবের অবস্থান অনেকের মতে, শীর্ষে। মাওলানা এম এ মান্নান রহ. ও দৈনিক ইনকিলাব অভিন্ন সম্পর্কে আবদ্ধ। এক থেকে অন্যকে পৃথক করা যায় না। যেমন মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁকে দৈনিক আজাদ থেকে আলাদা করা যায় না। তাঁকে বাঙালী মুসলিম সাংবাদিকতার জনক বলে অভিহিত করা হয়। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে লেখাপড়া সমাপ্ত করে ১৯০১ সালে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন। তিনি ১৯০৩ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী, পরে মাসিক মোহাম্মদী এবং ১৯৩৬ সালে দৈনিক আজাদ প্রকাশ করেন। তাঁর সম্পাদিত আজাদ ব্রিটিশযুগে মুসলমানদের মুখপাত্র হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। দৈনিক আজাদ পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে যে অবদান রাখে তা ইতিহাসের অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে আছে। মুসলিম সাংবাদিকতার বিকাশে দৈনিক আজাদের অবস্থান পথিকৃতের। ব্রিটিশযুগে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছাড়াও মাওলানা মনিরুজামান ইসলামাবাদীসহ অনেকেই মাদরাসা শিক্ষাধারা থেকে এসে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন এবং খ্যাতি ও সাফল্য লাভ করেন। সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র প্রকাশে আলেম-ওলামার অগ্রবর্তী পদচারণা অলক্ষ্যে মাওলানা এম এ মান্নান রহ.কে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে থাকতে পারে। মাওলানা এম এ মান্নান রহ.-এর প্রিয়ভাজন-স্নেহভাজন সহকর্মী দৈনিক ইনকিলাবের কার্যনির্বাহী সম্পাদক মাওলানা রূহুল আমীন খানের কাছে শুনেছি, মাওলানা হুজুর একটি দৈনিক সংবাদপত্র বের করার ইচ্ছা পোষণ করতেন অনেকদিন ধরে। কিন্তু নানা কারণে সেই শুভক্ষণটি আসেনি। স্বাধীনতার পর ইনকিলাবের মতো একটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। এদেশের মুসলমানদের আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন-প্রত্যাশা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরাসহ বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধির তাকিদ ইনকিলাব প্রকাশকে ত্বরান্বিত করে।

মাওলানা রূহুল আমীন খান ইনকিলাব প্রকাশের পটভূমি বর্ণনা করতে গিয়ে আরো কিছু কথা কলেছেন, যা উল্লেখ করা দরকার। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন একটি বিশ্ব ইসলামী সম্মেলন আহবান করেন, যেখানে মাওলানা এম এ মান্নান রহ. ও ছারছীনার পীর সাহেব মাওলানা শাহ আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহসহ অনেকে শরিক হন। সেখানে হোটেলে অবস্থানকালে একদিন ছারছীনার পীর সাহেব মাওলানা এম এ মান্নান রহ.কে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের অনুরোধ জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন। অতঃপর গাউসুল আজম বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহ. মাজার শরীফ জিয়ারতের পর দৈনিক ইনকিলাবের জন্য দোয়া-মোনাজাত করা হয়। ইরাক থেকে ফেরার পথে পবিত্র মক্কা-মদীনা শরীফে ওমরা ও জিয়ারতের সময়ও হারামাইন শরীফে দোয়া-মোনাজাত করা হয়।

আরো একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন মাওলানা রূহুল আমীন খান। জানিয়েছেন, প্রায় একই সময়ে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে এক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে মাওলানা এম এ মান্নান রহ.-সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সেখানে আলোচনা প্রসঙ্গে শিক্ষক সংগঠনসমূহের একটি ফেডারেশন গঠন এবং শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সোচ্চার করার জন্য একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের কথা ওঠে। এটাও মাওলানা হুজুরকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে।

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, দৈনিক ইনকিলাব চটজলাদি কোনো চিন্তা বা উদ্যোগের ফসল নয়। এ জন্য যেমন আছে দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনা, তেমনি আছে নানা প্রেরণা, দোয়া ও তাগিদ। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও দূরদর্শী উদ্যোগ এর প্রকাশকে সম্ভবপর করেছে। মাওলানা এম এ মান্নান রহ. সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে, তিনি কোনো কাজ করার আগে নিজে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতেন, বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতেন এবং পরিকল্পনা যাতে নিখুঁত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতেন। প্রয়োজনে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ নিতেন। কাজ শুরু করার আগে সময় নিতেন যতটা প্রয়োজন। কাজ শুরু করলে আর পেছনে ফিরতেন না। মাওলানা এম এ মান্নান রহ.-এর এই কর্মপ্রক্রিয়ার কারণেই তার কোনো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়নি।

তিনি যখন দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশ করবেন বলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন তখন এ সিদ্ধান্তও নেন যে, পত্রিকার জন্য নিজস্ব ভবন করবেন, ছাপাখানা করবেন এবং অত্যাধুনিক ছাপার সরঞ্জাম ও মেশিন আনবেন। সৌভাগ্যবশত ২/১, আর কে মিশন রোডে জায়গা পাওয়া গেল। ইনকিলাব ভবন নির্মাণ শুরু হলো। ছাপার সরঞ্জাম ও মেশিন আনার জন্য নেয়া হলো উদ্যোগ। যথারীতি বিদেশ থেকে এসেও গেল সব। বসানো হলো তা ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই। ওদিকে সাংবাদিক নিয়োগসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হলো। প্রবীণ ও অভিজ্ঞদের সঙ্গে একদল তরুণ সাংবাদিক নিয়োগ পেলেন। সম্পাদক হলেন মাওলানা হুজুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীন। ইনকিলাব ভবনে সাংবাদিক-কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা না হওয়ায় মাওলানা হুজুরের বনানীর বাসভবন হলো অফিস। এখানে স্থান স্বল্পতার কারণে বনানীতে আরো একটি ভবন ভাড়া নেওয়া হলো। বলা যায়, সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার আগেই দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশিত হয়।

এই কার্যব্যবস্থাদি প্রমাণ করে দৈনিক ইনকিলাব ছিল মাওলানা এম এ মান্নান রহ.-এর সাধনার ধন। এর জন্য তিনি ভবন নির্মাণ করেছেন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামে তা সজ্জিত করেছেন। ছাপাখানা বসিয়েছেন। ইনকিলাবের জন্য নিজের বাসভবন পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন। ছেলেকে সম্পাদক করে পরিচালনার ভার অর্পণ করেছেন। দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন সেই ১৯৮৬ সাল থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদকতা ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দৈনিক ইনকিলাবই তার ধ্যানজ্ঞান। তিনি আর কিছু করেন না। সম্মানিত পিতার দেয়া দায়িত্বকে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন। মাওলানা হুজুর জীবিতকালে সাংবাদিক-কর্মচারীদের সঙ্গে তার সকল সভায় মোনাজাত করতেন এই বলে যে, ‘হে আল্লাহ ইনকিলাবকে কেয়ামত পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখো’। যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশিত হয়, এখানো সেই নীতি-আদর্শ অব্যাহত আছে। এর এতটুকু ব্যত্যয় ঘটেনি। এই নীতি-আদর্শই এর প্রাণ। ইনকিলাব চিরজীবী হোক, এই প্রার্থনা আমাদের। এইসঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে আমরা মাওলানা এম এ মান্নান রহ.-এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দৈনিক-ইনকিলাব
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->