পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাইসেন্সধারী মদের বারগুলোতে বিদেশি মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে শুল্ক ও গোয়েন্দারা। বৈধ পথে বিদেশি মদ আমদানিতেও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাতে আটকে আছে চালান। এতে করে হঠাৎ করেই বাজার থেকে বিদেশি মদ উধাও হয়ে গেছে। কৃত্রিম এই সঙ্কট সৃষ্টির কারণে সাধারণ মানের যে মদ কদিন আগেও আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ৬ থেকে সাড়ে ৭ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের বোতলে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল, স্পিরিটের পাশাপাশি নেশাজাতীয় অন্যান্য পদার্থ মেশানো ভেজাল মদে বাজার সয়লাব। ভেজাল মদ প্রস্তুতকারীরা বাড়তি লাভের আশায় বিষাক্ত মদ দেদার বিক্রি করছে, যা পান করে সম্প্রতি মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গত এক মাসে নকল ও বিষাক্ত মদ পান করে অন্তত ৩৫ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একের পর এক এমন মৃত্যুর খবরে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। এরই মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় ভেজাল মদের কারখানা শনাক্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে গত বুধবার রাজধানীর ৫০টি থানার ওসি ও মাঠপর্যায়ের সব ইউনিট প্রধানকে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বৈধ চ্যানেলে বিদেশ থেকে মদ আসা কিছুটা কমেছে; আবার বিশ্ববাজারে বেড়েছে মদের দামও। আগে ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকে বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় লাগেজে করে কিছু মদ নিয়ে আসতেন। শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের কড়াকড়ির কারণে বিদেশি নাগরিক ছাড়া এখন বিদেশফেরতদের লাগেজে করে মদ আনা যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে বৈধ পথে মদ আমদানিতেও নতুন নতুন নিয়ম কার্যকর করার নামে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হচ্ছে। বড় বড় চালান আটকে পরায় ওয়্যারহাউজগুলো অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বারগুলোতেও বিদেশি মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মূলত এই কয়েকটি কারণেই দেশে মদের সংকট তৈরি হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েই অসাধু কারবারিরা নকল ও বিষাক্ত মদ তৈরি করছে। একই সুযোগ নিচ্ছে দেশের বিয়ার উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান। বিদেশি মদের সরবরাহ কম থাকায় তাদের বিয়ারের কদরও বেড়েছে। অনেকের ধারণা, বিদেশি মদের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পেছনে তাদেরও হাত থাকতে পারে। কাকরাইল এলাকার একটি বারের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা নিয়মিত বারে আসেন বা মদ পান করেন তাদের একটা চাহিদা থাকে। বারগুলোতে এসে তারা চাহিদা মতো মদ না পেয়ে বিকল্প কিছু খুঁজবেন এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অনেকেই এখন দেশি বিয়ার পান করছেন। বিদেশি মদের সঙ্কট সৃষ্টি না হলে দেশি বিয়ারের চাহিদা হয়তো এতটা বাড়তো না।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীতে এখন ভেজাল মদ সিন্ডিকেটের অর্ধশতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। তারা বাসা-বাড়িতে তৈরি করছে ভেজাল মদ। হোম সার্ভিসের মাধ্যমে সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারে এসব প্রাণঘাতী মদ তারা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। অনুসন্ধানে ঢাকায় নকল মদের একাধিক সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই চক্রের কাছে গোপনে স্পিরিট, নকল মদের লেবেল, বোতলের কর্ক সরবরাহ করছেন পুরান ঢাকার মনির। এ ছাড়া গুলশান, বনানী ও বারিধারার ওয়্যারহাউস থেকে অবৈধ পথে মদ বের করে এরই মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন জনৈক কবীর গাজী। ভাটারার নূরেরচালা ও গাজীপুরে তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। চার ভাগ্নেসহ একাধিক বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমে অভিজাত এলাকায় তিনি দীর্ঘকাল ধরে মদ সরবরাহ করে আসছেন।
জানা গেছে, ঢাকায় ৫টি বৈধ ওয়্যারহাউস থেকে লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরা মদ নিতে পারেন। এই ৫টি ওয়্যারহাউস হলো- গুলশান-১-এর এসটিএল সাবের ট্রেডার্স, মহাখালীর এসকে কবীর এন্টারপ্রাইজ, টসবন, ন্যাশনাল ও ঢাকা ওয়্যারহাউস। বিদেশি পাসপোর্টধারী যে কেউ মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক বোতল মদ এসব ওয়্যারহাউস থেকে কিনতে পারেন সস্তা দামে। ওয়্যারহাউস থেকে মদ কিনে গাড়িতে লুকিয়ে রেখে এই কবীরচক্র ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়। গুলশান-বনানী এলাকায় বহু বাসাবাড়িতে এভাবে মদ বিক্রি করা হতো। এমনকি গাড়িভর্তি মদ মাসের পর মাস কোনো কোনো বাড়িতে পার্কিংয়ের জায়গায় পড়ে থাকত। যখন প্রয়োজন হতো তখন ওই গাড়ি থেকে মদ বের করে বিক্রি করা হতো।
দীর্ঘদিন ধরে বৈধ মদের অবৈধ কারবারে জড়িত এমন একজন জানান, ওয়্যারহাউস থেকে অবৈধভাবে মদ কেনা চক্রের অন্যতম হোতা কবীর গাজী। সঙ্গে তার ভাগ্নে ইমরান, রানা, রাজীব এবং আপন ভাই মাসুদ গাজী। তিনি মাসে কোটি কোটি টাকার মদ বিক্রি করেন। এর বাইরে আরেকটি চক্র ওয়্যারহাউসকেন্দ্রিক মদের কারবারে সংশ্নিষ্ট। এই চক্রে রয়েছেন নকীব, মনোজ ও ফারুক। তারা একটি ওয়্যারহাউস থেকে অবৈধ চ্যানেলে মদ কিনে বাইরে বিক্রি করেন। মদ নিয়ে চলমান সংকটের পর এই সিন্ডিকেটকে এখন খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার স্পিরিট আমদানিকারক একটি নামী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ভেজাল মদ কারবারীদের সাথে লেনেদের অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকাকেন্দ্রিক অবৈধ মদের কারখানায় গোপনে স্পিরিট সরবরাহ করছেন পুরান ঢাকার মনির। কারও স্পিরিট দরকার হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর নিজেই গাড়িতে তা ক্রেতার কাছে ড্রামে করে পৌঁছে দেয়। এক ড্রাম (২৭ লিটার) স্পিরিটের দাম রাখা হয় ১০-১১ হাজার টাকা। অধিকাংশ চালান তিনি মিটফোর্ড এলাকায় হাতবদল করে থাকেন। ভাটারা এলাকার নকল মদের কারবারি নাসির আহমেদ রুহুলের কাছে গত দুই মাসে পাঁচ ড্রাম স্পিরিট বিক্রি করেন মনির। আর প্রতিবার নাসিরের বিশ্বস্ত কর্মচারী জাহাঙ্গীর এই চালান নিয়ে যান। একসময় ওয়্যারহাউসের সামান্য কর্মচারী ছিলেন নাসির। বৈধ মদ সংকটের সুযোগ নিয়ে তিনি দুই মাস আগে ভাটারা এলাকায় নকল মদের কারখানা করেছেন। এরই মধ্যে নাসির ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পাঁচ দিনের রিমান্ডে নাসির স্বীকার করেছেন, শুধু স্পিরিট নয়, দামি ব্র্যান্ডের মদের নকল স্টিকার প্রতি পিস ১৫-২০ টাকা ও বোতলের কর্ক প্রতিটি ৩০-৪০ টাকা দরে সরবরাহ করতেন তিনি। স্পিরিট সরবরাহকারী মনিরকে পুলিশ এখন খুঁজছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মদ্যপানকারী জানান, আগে বিভিন্ন বার, ওয়্যারহাউস থেকে সহজেই মদের বোতল কেনা যেত। এখন দ্বিগুণ দাম দিয়েও মদ মিলছে না। তাই তারা অনেকেই পরিচিত ডিলার বা সরবরাহকারীর কাছ থেকে মদ নিচ্ছেন। কেউ সামাজিক যাগাযোগমাধ্যমের তথ্য পেয়ে মদ কিনছেন। তবে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনার পর অনেকেই এসব জায়গা থেকে মদ আর কিনছেন না। কেউ কেউ দেশীয় মদের দিকে ঝুঁকছেন। কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈধভাবে দেশে মদ আনতে হলে ৪০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এ কারণে অনেকে অবৈধ পথ বেছে নেয়। বারের মালিকরা জানান, বৈধ মদের সংকট নিরসনে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে নকল মদের কারবারিদের তৎপরতা বাড়তেই থাকবে। সে ক্ষেত্রে আরও অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলেও প্রাণহানি ঠেকানো মুশকিল হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজা ইনকিলাবকে বলেন, বারগুলোতে কড়াকাড়ি সব সময়ই ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে বারগুলোতে কড়াকড়ি কিছুটা বড়ানো হয়েছে। বিদেশী মদের সঙ্কট ও মদের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে জানেতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। বিষয়টি বার মালিক পক্ষ ভালো বলতে পারবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনি। তবে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নিয়ম মেনে যারা লাইসেন্স চায় বা মদ আমদানির জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চায়, আমরা সেটা দিয়ে থাকি। মদের সংকটের কারণ হিসাবে তিনি বলছেন, একটা কারণ হতে পারে যে মহামারির সময়ে বারগুলো বন্ধ ছিল। প্রায় দুইমাস আগে বারগুলো খোলা হয়েছে, তারা হয়তো যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি করতে পারে নাই। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, অতিরিক্ত লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মদ তৈরীর কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে অনেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে। এসব অপরাধে জড়িত বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
বারে অভিযানে সম্পর্কে উত্তরা জোনের এডিসি মো. কামরুজ্জামান সরদার ইনকিলাবকে বলেন, উত্তরা এলাকায় কয়েকটি বার, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। ওইসব বারে দেশি মদ বিক্রয় করার অনুমোদন ছিল। কিন্তু তারা অবৈধভাবে বিদেশী মদ বিক্রি করছি। তাই অভিযান চালানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।