Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সু চি গণতন্ত্রের নায়িকা না ভিলেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:১৭ পিএম

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় থাকার সময় গৃহবন্দী থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের নায়িকা মনে করে সু চি’র ছবি গোপনে লুকিয়ে রাখতেন সাধারণ মানুষ। তবে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তার দল বিজয় এবং গত বছরে নির্বাচেন আবারও একটি ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে বোঝা যায় তার জনপ্রিয়তা মিয়ানমারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে বাইরের বিশ্ব তাকে সম্পূর্ণ আলাদা চোখে দেখে। তারা মনে করে, তিনি একজন পতিত নেত্রী যিনি সামরিক নেতৃতত্বের সাথে জোট গঠন করেছিলেন এবং তার নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্য ছিল না।

শেষ অবধি, ৭৫ বছর বয়সী অং সান সু চি না নিজের সমর্থকদের রক্ষা করতে পারলেন, না জেনারেলদের সাথে জোট। সোমবার দেশটির সেনাবাহিনী, যারা প্রায় পাঁচ দশক ধরে শাসন করেছিল, একটি অভ্যুত্থানে আবার ক্ষমতা দখল করে, এর মাধ্যমে মাত্র পাঁচ বছরই গণতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থার অবসান হয়।

১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি ২০১৭ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উচ্ছেদ এবং গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হন। কেননা সেসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় সু চি ছিলেন। গণতন্ত্রের নেত্রীর রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিশ্চুপ ভূমিকায় বিশ্ব বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যায়। দাবি ওঠে সু চি’র নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার। সে সময়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং উচ্ছেদ প্রসঙ্গে সু চিকে সামরিক জান্তাদের সঙ্গে সুর মেলাতে দেখা গিয়েছিল। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই তিনি এমন করছেন বলে তখন অনেকেই মনে করতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হলো না! পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের দিনই তাকে কারাবন্দি হতে হলো।

গত বছরের ৮ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে সু চি’র দল এনএলডি ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও উচ্ছেদের অভিযোগে অভিযুক্ত সু চি’র দল তারপরও জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। কেননা বিরোধী পক্ষ ছিল সেনা মদদপুষ্ট- ইউএসডিপি। ২০০৮ সালের সংবিধান সংশোধনে মিয়ানমারের সংসদে ২৫ শতাংশ আসন সেনা সদস্যদের জন্য বরাদ্দ। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ও (স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্ত) তাদের হাতে। ফলে ক্ষমতায় এমনিতেই সেনাদের ভাগ থাকার পরও আবারও একটি সেনা মদদপুষ্ট দল ক্ষমতায় দেখতে চায়নি মিয়ানমারের জনগণ। তাই তারা সু চি’র দলকেই বেছে নেয়।

এদিকে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে মেয়াদের শেষ দিকে সু চি সংবিধানে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। বলাবাহুল্য বিষয়টি সামরিক বাহিনী ভালো চোখে দেখেনি। তারা এখন ভাবছে সু চি’র দল এবার ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছে, ফলে তারা আরো বেশি সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা করবে। যদিও সেটা পুরোপুরি অসম্ভবই বলা চলে। কারণ সংসদের ২৫ শতাংশ সেনাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু তারপরও ক্ষমতা নিজেদের হাত থেকে বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় সু চি এবং এনএলডি’র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে ভোট কারচুপির। এক বছরের জন্য জারিকৃত জরুরি অবস্থার ঘোষণায় বলা হয়- বিগত নির্বাচনে এক কোটিরও বেশি ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

এশিয়া অঞ্চলের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, ‘অং সান সুচি দাবি করেছিলেন যে তিনি মানবাধিকারকর্মী নন বরং রাজনীতিবিদ। তবে দুঃখের বিষয় হ’ল তিনি কোনটিতেই ভূমিকা রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সু চি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা লুকিয়ে একটি দুর্দান্ত নৈতিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সামরিক বাহিনীর সাথে তার জোট কখনই বাস্তবায়িত হয়নি এবং নির্বাচনে তার ভূমিধস বিজয় এখন একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

গত নভেম্বরেও তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে সামরিক বাহিনীর ছায়া দল হিসাবে মনে করা হতো। তবে অনেক ভোটারই তাকে ভোট দিয়েছিলেন এই আশায় যে, জেনারেলদের শাসন অবসানে তার চেয়ে ভাল বিকল্প আর কেউ নেই।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রের ইতিহাসই খুব নড়বড়ে এবং যৎসামান্য। যে কারণে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী খুবই রাজনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। সু চি হয়তো সেনা ছত্রছায়া থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন, যেটা সামরিক বাহিনী বুঝতে পেরেছিল। তার সেই চেষ্টা থামিয়ে দিতেই তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হলো। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ