বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চসিকের নির্বাচনেও সেই পুরোনো চিত্র। অতীতে নির্বাচন একটি উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়ে ফজরের নামাজের পরপরই ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতো ভোট দেয়ার জন্য। কিন্তু সেই চিরচেনা দৃশ্য যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হওয়ার বিপরীতে অনেকটাই ভোটকেন্দ্র বিমুখ দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বুধবার সকালে এখলাসুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেন। পরে তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন, দিনভর সুষ্ঠুভাবেই ভোট হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের শুরুতেই এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং মারধর করার অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
বুধবার সকাল ১০টার আগে বাকলিয়া বিএড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার আগমুহূর্তে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘আমার কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের নামে নগ্নতা চলছে। প্রশাসন আর রাষ্ট্রযন্ত্র মিলে একাকার হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমার এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা কেন্দ্রে গিয়েছে তাদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ জন আহত হয়েছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।’
শাহাদাত বলেন, ‘সকালে এজেন্ট দেওয়ার সময় ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমাদের কমিশনার প্রার্থী মহসিনকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। মেয়েদের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলা হয়েছে। এর চেয়ে জঘন্য আর কী হতে পারে!’
দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, প্রশাসন-রাষ্ট্রযন্ত্র একাকার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ভোট হচ্ছে না।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। বুধবার সকাল ৮টায় ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ শুরু হয় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
ভোটের সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ২টি ভোট কেন্দ্র (৪০১ ও ৪০২) থাকলেও কেন্দ্রের প্রবেশ মুখে নৌকার ব্যাজধারী ১৫/২০ জন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এই দু’টি পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬১ জন।
কেন্দ্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সকাল ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত উভয় কেন্দ্রে ১০/১২ জন ভোটার ভোট দিতে এসেছেন। ৪০২ নং ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আ হ ম মিজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন ৯টি বুথের সব ক’টিতে সরকার সমর্থক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছে।
পাশের ৪০১ নং ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা অনিমেষ মজুমদার জানিয়েছেন এই কেন্দ্রের ৭টি বুথে তখন পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোলিং এজেন্ট আসেননি।
সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে কাজির দেউরী সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দু’টি মহিলা ভোটকেন্দ্রের মোট ৩ হাজার ৩৮১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৯ জন। এই দু’টি ভোটকেন্দ্রেও ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ছিল না।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা সড়কে জটলা পাকিয়ে অবস্থান করায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে, ফলে ভোটাররা কেন্দ্রমুখী নয় বলে স্থানীয়রা জানায়। তাছাড়া রাতে নগরীর বিভিন্ন অলি গলিতে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে বলেও কোনো কোনো ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানানা।
এদিকে বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি’র এজেন্টদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে, আবার অনেককে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।