পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
তুরস্ক ও পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী আজারবাইজান। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সামরিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্ক ও পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতার সম্পর্কে আজারবাইজানের এই আগ্রহ আরো স্পষ্ট হয় গত সপ্তাহে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ইসলামাবাদ ঘোষণা স্বাক্ষরের মাধ্যমে। আজারবাইজানের সেন্টার অব অ্যানালাইসিস অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. ভাসিফ হুসেইনভ তার লেখা এক প্রবন্ধে সাম্প্রতিক বছরে এই তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে এনেছেন। সেই সাথে ওই প্রবন্ধে ইসলামাবাদ ঘোষণায় এশিয়ান ও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ককে কী করে বৃদ্ধি করবে, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন। হুসেইনভ তার প্রবন্ধে বলেন, ‘আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতের সমাধানের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক যাতায়াত ও যোগাযোগের পথ খুলে যায়, যা এই সংঘাতের কারণে বন্ধ ছিল। দক্ষিণ ককেশাসে বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রস্তাব আজারবাইজানের সাথে তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য বিপুল সুযোগ এনে দিয়েছে।’ বিরোধপূর্ণ নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়ার সাথে সা¤প্রতিক সংঘর্ষে আজারবাইজানের জয়ে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সংঘর্ষে দেশটি আজারবাইজানকে সকল ক্ষেত্রেই মৌখিক সমর্থন ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদি দিয়ে সাহায্য দিয়েছে। সংঘর্ষের গতি পরিবর্তন করা আঙ্কারার ড্রোন অথবা আন্তর্জাতিক সকল প্লাটফর্মে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের সমর্থনম‚লক বিবৃতির মাধ্যমে এই সাহায্য হয়েছে। অপরদিকে ইসলামাবাদ ১৯৯০-এর দশকে বাকুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর আজারবাইজানকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর অন্যতম পাকিস্তান। হুসেইনভ লিখেন, আজারবাইজানের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ত্রিদেশীয় এই সহযোগিতামূলক প্লাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে। তিনি আরো লিখেন, ‘এটি আজারবাইজানকে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আরো সফলভাবে মোকাবেলা করতে শুধু সক্ষমই করবে না, বরং দেশটির অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের অনন্য এক সুযোগ দান করবে, যা তেলের মূল্যের অধোগতি ও কোভিড-১৯ মহামারীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।’ পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ১৩ জানুয়ারি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুশওলু ও আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেইহুন বাইরামভ ত্রিদেশীয় এক বৈঠকে মিলিত হন। ত্রিদেশীয় বৈঠকের দ্বিতীয় রাউন্ডে তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে একমত হন এবং ‘ইসলামাবাদ ঘোষণা’ স্বাক্ষর করেন। ঘোষণায় নাগরনো-কারাবাখ, সাইপ্রাস ও জম্মু-কাশ্মীর সংকটে তিন দেশের পারস্পরিক সহায়তার অঙ্গীকার করা হয়। জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় উল্লেখ করে তিন দেশ বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলের সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রস্তাব অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানায়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামোফোবিয়া, মুসলিম সংখ্যালঘু বৈষম্য ও নির্যাতন মোকাবেলায় একত্রে কাজ করতে তিন দেশ সম্মত হয়। আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেইহুন বাইরামভ আর্মেনিয়ার সাথে সংঘর্ষে অবিচল সমর্থনের জন্য তুরস্ক ও পাকিস্তানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাইরামভ বলেন, ‘বন্ধু এই রাষ্ট্রগুলো আর্মেনিয়ার দখলদারিত্ব, আগ্রাসন ও যুদ্ধ অপরাধের নিন্দা জানিয়েছে, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখন্ডতার ভিত্তিতে আলোচনায় সমর্থন জানিয়েছে এবং জোরের সাথে রাষ্ট্রীয় সীমানা ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেছে। আমরা তাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছি।’ বর্তমানে আজারবাইজান ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি কোনো বিমান চলাচল চালু নেই। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বিরতিহীন বিমান চলাচলের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা উভয়দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ইয়েনি সাফাক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।