Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিখাতকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

কৃষিই দেশের মূল ভিত্তি, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। করোনা মহামারিতে দেশের সব খাতেই ধস নেমেছে। কিন্তু কৃষির উন্নতি অব্যাহত আছে এবং দেশকে রক্ষা করেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট থেকে। দ্বিতীয়ত: স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কৃষিখাতের যত টেকসই উন্নতি হয়েছে, তা অন্য কোনো খাতে হয়নি। বর্তমানে দেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে। বিশেষ করে চাল, মাছ, গোশত ও সবজিতে। অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তাই এখনও কৃষির অবস্থান জিডিপিতে তৃতীয় এবং কর্মসংস্থানে প্রায় অর্ধেক। তবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জিত হয়নি এখনো। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ, চাল। এবার বন্যার কারণে আমন ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ কারণে চালের মূল্য রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে ধানকাটা মওসুমেই। তাই সরকারিভাবে চাল আমদানি করা হয়েছে ও হচ্ছে। বেসরকারিভাবেও আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খবরে প্রকাশ, এবার ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের মূল্য পড়েছে প্রতি কেজি ৩৮ টাকা। তাও ২৫% শুল্ক ও পরিবহন ব্যয়সহ। তাতে অনুমেয় ভারতে চালের উৎপাদন ব্যয় হয়, ২০ টাকার মতো। অথচ এবার আমন মওসুমে দেশীয় চালের সরকারি ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সিদ্ধ চাল প্রতি কেজি ৩৭ টাকা। এতে বুঝা যায় দেশে চালের উৎপাদন ব্যয় প্রতি কেজি ৩০ টাকার বেশি। অর্থাৎ ভারতের চালের উৎপাদন ব্যয় এ দেশের চালের উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে দেড়গুণ কম। অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও প্রায় অনুরূপ। কৃষির অন্য সব পণ্যের ক্ষেত্রেও তাই। এর প্রধান কারণ, বেশিরভাগ দেশের সমগ্র কৃষি যান্ত্রিকরণ হয়েছে। সেচযন্ত্র বিদ্যুৎচালিত, কৃষি উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যের ও স্বল্প সুদে পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই তাদের পণ্যের উৎপাদন মূল্য কম হচ্ছে অনেক।
আমাদের কৃষি উৎপাদনের ব্যয় অত্যধিক হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, কৃষিখাতের প্রতি সরকারিভাবে যথেষ্ট নজর না দেয়া। গত ৮০ দশকের দিকে কৃষিখাতের উন্নতিতে গুরুত্ব না দিয়ে শিল্পায়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিল্পায়ন তো হয়-ই নি, বরং শিল্পের নামে হরিলুট হয়েছে ব্যাংক ঋণ, সরকারি জমি ও বিরাষ্ট্রীয়করণকৃত কল-কারখানা নিয়ে। অন্যদিকে, কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক। সরকারিভাবে কৃষি খাতের প্রতি অবহেলা এখনও চলছে। যেমন: সামান্য লোকসানের কারণে সব সরকারি পাটকল বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের চাকরি থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে গত ১ জুলাই হতে। অথচ করোনাকালে সব পণ্যের রফতানি হ্রাস পেলেও পাট ও পাট পণ্যের রফতানি বেড়েছে ৪০%। সর্বোপরি পাট থেকে পলিব্যাগ আবিষ্কার করার পরও তার উৎপাদন করা হচ্ছে না। এতে পরিবেশের ধ্বংস অব্যাহত আছে। অথচ ভালো ব্যবস্থাপনা ও সংস্কার করা হলে সরকারি পাটকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব। তা করা হচ্ছে না। ফলে পাটের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা চাকরি ফিরে পাচ্ছে না। একই অবস্থা হয়েছে সরকারি চিনি কলেরও। লোকসানের অজুহাতে এ বছর সরকারি কয়েকটি চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে শ্রমিক ও আখ চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। চিনির মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
এখন কৃষির আরও উন্নতির জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং তা সরকারিভাবেই। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, মানুষ বাড়ছে, কৃষিজমি কমছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর ক্ষতি তো আছেই। এই অবস্থায়ও ২০৩৫ সাল নাগাদ খাদ্য উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ করতে হবে বলে স¤প্রতি জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কৃষিখাতকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা লাভ করতে হবে।
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজন খরা, বন্যা, লবণ সহিষ্ণু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ সর্বশেষ উদ্ভাবিত অধিক উৎপাদনশীল বীজ তথা হাইব্রিড উদ্ভাবন ও ব্যবহার করা। এ ধরনের অনেক বীজ দেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন। ব্রির মহাপরিচালক গত ১৪ জানুয়ারি বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ব্রি ১০৫টি উচ্চফলনশীল জাত ও ২৫০টি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে’। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল বীজ উদ্ভাবন করেই ক্ষান্ত হলে চলবে না, উদ্ভাবিত এ বীজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর, বীজ সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। উপরন্তু আরও অধিক উৎপাদনশীল বীজ উদ্ভাবন করতে হবে। এইসঙ্গে গমের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে গমের উৎপাদন খুব কম হওয়ায় বিপুল পরিমাণে আমদানি করতে হয় প্রতি বছরই। এ আমদানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ গমের খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। গমের প্রয়োজনীয়তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে, যেসব পণ্যের উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে সেসবেরও উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় আমদানি জনিত বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। সর্বোপরি সব কৃষিপণ্যের মানও বৈশ্বিক পর্যায়ের হওয়া উচিৎ। নতুবা মানুষ বিদেশি পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাতে দেশি পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের কৃষিখাতকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রয়োজন। যার অন্যতম হচ্ছে: কৃষিকে সম্পূর্ণরূপে যান্ত্রিকরণ, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, সব ফসলি জমিকে সেচের আওতায় আনা ও সব সেচযন্ত্রকে বিদ্যুৎ চালিত করা, সব কৃষি উপকরণের মূল্য সাশ্রয়ী করা এবং কৃষকের প্রয়োজন মোতাবেক স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এখনও কৃষি জমির ২৭% সেচের আওতার বাইরে রয়েছে। যে জমি সেচের আওতায় এসেছে, তার বেশিরভাগই চালিত হচ্ছে জ্বালানি তেল ভিত্তিক সেচযন্ত্র দিয়ে। এ ব্যাপারে ১০ জানুয়ারি এক দৈনিকে প্রকাশ,‘বিএডিসির তথ্য মতে, দেশের সেচ কাজে অবদান, গভীর নলক‚পের ১৯.২৬%, শক্তি চালিত পাম্পের ২২.৩৫% ও অগভীর নলক‚পের ৫৩.৫৯%। ২০১৮-১৯ সেচ মৌসুমে মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ছিল ৫৫.৮৭ লাখ হেক্টর, যা মোট সেচযোগ্য জমির ৭৩%। মোট সেচকৃত এলাকার ৪৪% জমিতে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র আর ৫৬% জমিতে ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহারের কারণে ৫,৬২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। অথচ ডিজেল চালিত ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি অগভীর নলক‚পকে বিদ্যুৎ বা সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্পে রূপান্তরকরণে সেচযন্ত্র পরিচালনা বাবদ বাড়তি খরচ হবে ১১৬ কোটি টাকা। উপরন্তু এতে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে’। ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রকে বিদ্যুৎচালিত করতে ১১৬ কোটি টাকার ব্যয় খুব সামান্য ব্যয়। দেশে বিদ্যুতের অভাব নেই এখন। বরং সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে চাহিদা না থাকায়। এতে বিপুল অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। তাই খুব দ্রুত সব ডিজেল চালিত সেচযন্ত্রকে বিদ্যুৎ চালিত করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাহলে কৃষিপণ্যের উৎপাদনে সেচের ব্যয় কম পক্ষে প্রতি সেচ মওসুমে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি হ্রাস পাবে। এতে ফসল উৎপাদনের ব্যয় হ্রাস পাবে। আরও হ্রাস পাবে সব সেচযন্ত্রে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারলে। পাশাপাশি যেসব কৃষিজমি এখনও সেচের আওতার বাইরে রয়েছে, সেসব জমি সেচের আওতায় আনা জরুরি। তাহলে ফসল উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে। বিএডিসির জরিপ রিপোর্ট মতে, ‘বর্তমানে সেচ কাজে মাত্র ২৭% ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার হচ্ছে। বাকী সেচ কাজ চলছে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে।এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে’। পানির স্তর নেমে যাওয়া দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই শতভাগ সেচকাজে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা দরকার। সেচের দক্ষতা শতভাগ করা প্রয়োজন। তাহলে পানির অপচয় বন্ধ হবে এবং ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে।বর্তমানে দেশে সেচদক্ষতা ৩৮% বলে জানা গেছে।
দেশে কৃষিশ্রমিকের সংকট তীব্র। মজুরি অত্যধিক। ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সমগ্র কৃষিকে যান্ত্রিকরণ করতে হবে। এতে মজুরি সংকট দূর হবে, অপচয় হ্রাস পাবে, সময় কম লাগবে।ফলে ফসলের উৎপাদন ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। কৃষিমন্ত্রী গত ১২ জানুয়ারি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের কৃষিকে যান্ত্রিকরণে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। সরকার এ বছর ২০০ কোটি টাকার মাধ্যমে ৫০-৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপারসহ কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। এছাড়াও, ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৫১ হাজার কৃষিযন্ত্রপাতি দেয়া হবে। বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতির বাজার বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের, যা বছরে ১০% হারে বাড়ছে। ভারতের মাহিন্দ্র অ্যান্ড মাহিন্দ্র লিমিটেড বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতির সংযোজন কারখানা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, প্রান্তিক পর্যায়ে যন্ত্রের ব্যবহার জনপ্রিয় ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজতর করতে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহণ করবে’। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। তাই গুরুত্ব দেওয়া দরকার। পাশাপাশি অন্য দেশের কৃষিযন্ত্র উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকেও এ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহী করা প্রয়োজন বিকল্প হিসেবে। কারণ, এতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে, যার সুফল পাবে দেশ।
ভারতের ব্যবসায়িক নীতি ভাল নয়। সে ইচ্ছা মতো জিনিস দেয়,আবার হুট করে দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে চরম সংকটে ফেলে দেয়। পিয়াজ তার প্রকৃত উদাহরণ। যা’হোক, দেশে কৃষি যন্ত্রের সংযোজন ও প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ হলে স্বল্পদিনের মধ্যেই দেশে কৃষি যান্ত্রিকরণ ও কৃষিযন্ত্র ব্যবহার-মেরামত করার জন্য দক্ষ লোক তৈরি হবে। উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক হ্রাস পাবে। তবে, যতদিন দেশে কৃষিযন্ত্র সংযোজন ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি বিনিয়োগ না হবে, ততদিন কৃষি যন্ত্র আমদানি ও ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে।
দেশের কৃষিখাতের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কৃষি উপকরণের মূল্য কমানো দরকার। বিশেষ করে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধের স্থলে জৈব সার ও প্রাকৃতিক নিয়মে বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।তাহলে উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে যাবে। জমির উর্বরা শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। গত ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের সমীক্ষা রিপোর্ট মতে, ‘মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমাণ ৫% হলে সে মাটিকে সবচেয়ে ভালো বলা হয়। ন্যূনতম ২% থাকলে সেটিকে ধরা হয় মোটামুটি মানের। কিন্তু দেশের মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমাণ এখন গড়ে ২ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া জৈবপদার্থের ঘাটতি রয়েছে দেশের মোট জমির প্রায় ৭৯%’। অপরদিকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহারের ফলে ভারতের পাঞ্জাবের কৃষিজীবীদের ন্যায় এ দেশের কৃষকেরও ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদন মতে, ‘প্রতি বছর হাসপাতালটিতে যত রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। এর পেছনে কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকেই দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টরা’। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করার দিকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে দেশ-বিদেশে।
শ্রমের বিনিময়ে আর্থিক লাভ না হলে কেউই শ্রম বিনিয়োগ করে না। এটা মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব। তেমনি কৃষকের লাভ না হলে তারা ফসল ফলাবে না। তবুও কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না দীর্ঘদিন যাবত। ফলে তারা দিনে দিনে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে দেশের সার্বিক উন্নতিতে।তাই দেশের কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য দাবি করে আসছে বহুদিন যাবত। এ প্রেক্ষিতে বেশ কয়কে বছর যাবত ন্যায্যমূল্যে ধান-চাল ক্রয় করা হচ্ছে সরকারিভাবে। তাতে কৃষক কিছু লাভবান হচ্ছে। আরও বেশি লাভ হতো যদি প্রয়োজন মোতাবেক ক্রয় করা হলে। তা সম্ভব হচ্ছে না গুদাম না থাকায়। কৃষকের লাভের লক্ষ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবারের শীত মৌসুমের জন্য ১৪টি কৃষিপণ্যের তথা পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, মসুর ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, টমেটো, কাঁচা পেঁপে, ঢেঁড়স, শীম, বেগুন, কাঁচামরিচ এবং লাউয়ের উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করেছে। এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতে পারে এবং একই সাথে পাইকারি, ফঁড়িয়া ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও যেন যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিপণন করে, সেদিকে লক্ষ্য করেই এটা করা হয়েছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ।তাই প্রতি বছর এটা হালনাগাদ করা প্রয়োজন।
দেশে কৃষিপণ্যের প্রকৃত চাহিদা, উৎপাদন ও ঘাটতির সঠিক তথ্যের অভাব রয়েছে। চোখ কান যাদের খোলা আছে, তারা দেখতে পেয়েছে, এবার আমন ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না তা নিশ্চিত ছিল।তাই খাদ্য আমদানি করা দরকার বলে প্রকাশিত পত্রিকায় নিবন্ধে বলাও হয়েছে। কিন্তু ব্রি বলেছে, ‘বন্যায় গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন কমতে পারে আমন চালের উৎপাদন। তবে উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনায় দেশে খাদ্যঘাটতির কোনও আশঙ্কা আপাতত নেই। আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত থাকবে কমপক্ষে ২৮ লাখ টন চাল’। ফলে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত হয়েছে। সেই সুযোগে মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাতে সাধারণ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপরন্তু সরকারি মজুদ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সরকারি ক্রয় অভিযানও সফল হচ্ছে না আমন মওসুমে। কারণ, মিলাররা ধান-চাল দিচ্ছে না সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায়। কৃষিমন্ত্রীও স¤প্রতি বলেছেন চালের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্যের মধ্যে তারতম্য আছে। অবশ্য তথ্যের গোলমাল দেশের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে।তাই সব ক্ষেত্রেই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা না থাকায় এটা হচ্ছে। কাজেই ভুল তথ্য প্রদানকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং সঠিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন