মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চারিদিকে ধু ধু মরুভূমি। তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে সউদী আরবের অতি প্রাচীন পরিত্যক্ত শহর মাদাইন সালেহ বা হেজ্রা। যার ইতিহাসের খুব সামান্যই জানা যায়। প্রায় ২ হাজার বছর পর প্রথমবারের মতো আবারও মানুষের পদচিহ্ন পড়তে চলেছে প্রত্মতাত্তি¡ক শহরটিতে। এটি দেশটির ইউনেস্কো স্বীকৃত প্রথম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
অর্থনীতির দিক থেকে সউদী আরব চিরকাল খনিজ তেলকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তবে খনিজ তেলের মতো আরবের ইতিহাসও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তাই দেশটির ‘মিশন ২০৩০’-এর দিকে লক্ষ্য রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশটির পর্যটনক্ষেত্রকে। আর সেই লক্ষ্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে শহরটি।
ইতিহাসপ্রসিদ্ধ হেজ্রা প্রতিষ্ঠা করেন যাযাবর ‘নাবাতিন’ অর্থাৎ প্রাচীন আরববাসীরা। তারাই জর্দানের পেত্রায় ‘সিস্টার সিটি’ গড়ে তুলেছিলেন। আজ থেকে প্রায় ২৪শ’ বছর আগে হেজ্রা শহরের পত্তন হয়েছিল। মরুভ‚মির বুকে গড়ে ওঠা এই বিশাল সম্রাজ্যের সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিষ্টাব্দ প্রথম শতক। বলা হয়ে থাকে, প্রচীন আরবের সামূদ জাতি অঞ্চলটির উত্তর-পশ্চিমে বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজ্র’ যা শামদেশ অর্থাৎ সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়িন সালেহ’ বলা হয়ে থাকে।
‘আদ জাতির ধ্বংসের পর ছামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানারূপ প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর গায়ে ইরামী ও ছামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে।
উনবিংশ শতকে যখন পেত্রাকে পুনরায় আবিষ্কার করা হয়, তখন থেকে পাদপ্রদীপের আড়ালে চলে যায় হেজ্রা। যদিও তাতে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব কমে যায়নি। পেত্রায় সমাধি সৌধ আছে ৬শ’র বেশি। আর হেজ্রায় রয়েছে ১১১টি। সেগুলির মধ্যে ৯০টিরও বেশিকে সংস্কার করা হয়েছে। সমাধিগুলির বেশিরভাগেরই গায়ে শিলালিপি খোদাই করা, যেগুলোতে ঐতিহাসিক দলিলকে কোনওভাবে নষ্ট না করার হুঁশিয়ারি সংকলিত রয়েছে। আর আছে নাবাতিন আমলের গুহাচিত্র এবং শিলালিপি।
গিলগামেশ এবং মেসোপটেমিয়ার মতো করে এশহরটির কোনও পৌরাণিক গ্রন্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে, গ্রীক, মিসরীয় এবং রোমান নথিগুলি থেকে বোঝায় যারা যে, নাবাতিনদের সাথে তাদের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল। হেজ্রার অলঙ্করণ এবং স্থাপত্য শৈলীতে গ্রীক, রোমান এবং মিসরীয় সংস্কৃতি স্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আসিরিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া এবং ফিনীসিদের মতো বৃহদাকারে পানি সংরক্ষণ, ব্যাপক চাষাবাদ এবং ধূপ ও মশলা বিক্রি করা মাদাইন সালেহ বা হেজ্রা সেকালের সবচেয়ে ধনী শহরগুলোর মধ্যে একটি ছিল। সেসময়কার কৃত্রিম জলাধারের চিহ্ন এখনও অবশিষ্ট রয়েছে শহরটিতে। আরব এবং জর্দান ছাড়াও সিনাই, ইসরাইল, সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়ায় উটে চড়ে ঘুরে বেড়াত তারা।
তারপর ৪শ’ বছরের মধ্যে নবাতিন উপজাতির ইতিহাস শেষ হয়ে আসে। প্রথম শতাব্দীতে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে, যার ফলে এর জনসংখ্যা ও প্রভাব হ্রাস পেতে শুরু করে। অটোমান সাম্রাজ্যের যুগে শহরটি ধীরে ধীরে খালি হয়ে যায় এবং একসময় ধ্বংস হয়ে যায়। সেই থেকে শ্মশানভূমির মতো পড়ে আছে হেজ্রা।
চলতি বছরের গোড়াতেই সউদীর পর্যটনমন্ত্রী জানান যে, পর্যটন শিল্পে ঘাটতি হ্রাসে সরকারের তরফ থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। সেই লক্ষ্যেই জনসাধারণের জন্য হেজ্রাকে উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। তাহলে আর দেরি কেন, মহামারী শেষের বিদেশ ভ্রমণের প্রথম লক্ষ্য হতেই পারে ইতিহাসে মোড়া হেজ্রা। সূত্র : মাই মডার্ন মেট, ইন্টারনেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।