পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শারীরিকভাবে চীনারা অনেক ফিট। কোনরকম শারীরিক অসুস্থতা ছাড়া অনেক বয়স্ক ব্যক্তি নির্দ্বিধায় মনের ফুর্তিতে তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করে। জীবনকে সার্বক্ষণিক আনন্দ-ফুর্তি, মজা-মাস্তির ভিতর দিয়ে পরিচালনা করতে এরা সর্বদায় ব্যাতিব্যস্ত থাকে। যখন দেখা যায়, একজন সত্তরোর্ধ্ব পুরুষ বা মহিলা যেই হোক না কেন শারীরিক কোনো অসুস্থতা ছাড়াই নির্দ্বিধায় দিনাতিপাত করছে, তখন এদের শারীরিক ফিটনেস নিয়ে মনে বিস্ময় জাগাটাই স্বাভাবিক।
পূব আকাশে সূর্যের দেখা মেলার আগেই খুব ভোরে এদের প্রতিদিনকার রুটিন মাফিক দিন শুরু হয়। বেশিরভাগ অফিসের কর্মঘণ্টা শুরু হয় সকাল আটটা থেকে, তাই ইচ্ছা থাকলেও চাকরিজীবীরা কেউ বেলা অব্দি ঘুমাতে পারে না। বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেন, প্রাইমারি স্কুলের গাড়ি চলে আসে সকাল সাতটায়। হাইস্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস শুরু হয় সকাল আটটা থেকে। সেজন্য ভোরে উঠেই যে যার কাজে বেরিয়ে পড়ে। বয়স্ক ব্যক্তিদেরও কিছু রুটিন মাফিক কাজ করতে দেখা যায় এবং বয়স্করা সকলেই চেষ্টা করে ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃভ্রমণে বের হওয়ার।
বেশিরভাগ চাকরিজীবী এবং ছাত্রছাত্রীরা সকালে অফিস বা ক্লাসের যেতে পথেই নাস্তা সেরে ফেলে। আবার কেউ কেউ বাসায় খেয়েও রওনা দেয়। সকালের নাস্তায় খাবারের ভিতর চীনাদের ডামপ্লিং বা মম (ময়দার খামির ভিতর রান্না করা সবজি, মাংসের পুর ভরে বাষ্পে ভাপানো এক ধরনের খাবার), স্টিম বান (শুধুমাত্র ময়দা দিয়ে বানানো বাষ্পে ভাপানো রুটি), নুডুলস, সয়াবিন বেশ উল্লেখযোগ্য। সাথে পানীয় হিসেবে সুপ বা বিভিন্ন ধরনের জুস বা দুধ খেতে দেখা যায়।
সময়ের ব্যাপারে চীনারা খুবই সচেতন, তাই এদের কাছে অফিসের সেবাদান পদ্ধতিটা একটু ব্যতিক্রম। যদি সকাল আটটা থেকে অফিস শুরু হয়, তাহলে ঠিক আটটায় সেবাগ্রহীতার সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা এরা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ তাদের কাছে কর্মঘণ্টা শুরুর অর্থ হচ্ছে সব কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজস্ব ডেস্কে প্রস্তুত থাকবে। অফিসের পোশাকের ক্ষেত্রে তেমন কড়াকড়ি কোনো নিয়ম-নীতি নেই। তবে ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, সুপারশপের ক্ষেত্রে তাদের কর্মীদের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত একই রকমের বিশেষ পোশাক পরতে দেখা যায়। বাকি ক্ষেত্রে যে যার ইচ্ছা মতো পোশাক-পরিচ্ছেদ পরতে পারে। পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যাথা না থাকায় সবাই খুবই সিম্পল পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। গায়ের রঙ সবারই সাদা হওয়ায় যেকোন পোশাকে তাদের ভালো দেখায় বলেই তারা মনে করে। তবে সবাই পোশাকে শালীনতা বজায় রেখে চলে। মহিলা এবং পুরুষ প্রায় একই ধাঁচের পোশাক পরিধান করে। যেমন, উভয়ের ফরমাল ড্রেসের পাশাপাশি টিশার্ট, জিন্স, ট্রাউজার, হাফপ্যান্ট, কেডস পরতে দেখা যায়। যেকোন পোশাকে এদের যেকাউকেই দেখলে মনে হয় এরা পোশাক-পরিচ্ছদেও বেশ সৌখিন। সার্বক্ষণিক সবার চেহারার ভিতরে একটা সতেজতা কাজ করে।
সকাল ১১টা বাজতেই দুপুরের খাবারের জন্য সবাই বারবার ঘড়ির কাটার দিকে লক্ষ করে। সকাল ১১.৩০ থেকে দুপুর ২.০০টা পর্যন্ত (কিছু কিছু অফিসের ক্ষেত্রে আধা ঘণ্টা আগে পিছে হতে পারে) বেশিরভাগ অফিসের দুপুরের খাবার এবং খাবারের পরে ভাতঘুমের জন্য কর্মবিরতি থাকে। বিরতি শুরুর সাথে সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। খাওয়ার পরে সবাই প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো ভাতঘুম সেরে নেয়। নিজেদের কর্মস্থলেই এই ঘুমের ব্যবস্থা আছে। ঘুমের সময় সবাই লাইট অফ করে, রুমের পর্দা টেনে কর্মস্থলকে ঘুমানোর উপযোগী করে তবেই ঘুমাতে যায়। সে সময়ে তারা পুরো অফিসে নিরবতা বজায় রেখে সবাইকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। কর্মস্থলে ঘুমের সময়ে নিজেদের কাজের ডেস্কসহ কেউ কেউ ফোল্ডিং বেড, সোফা ব্যবহার করে এবং ঘুমকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য নিজ উদ্যোগে কর্মস্থলে আগে থেকেই এক সেট বালিশ, কম্বলের ব্যবস্থা করে রাখে। ঘুমের পরে নির্দিষ্ট সময় আবার নতুন উদ্দ্যামে কাজ শুরু করে। খাবারের পরে এই ঘুম নাকি তাদের শরীরকে ফিট রাখার জন্য অধিক উপযোগী বলে তাদের দাবি। সেজন্য বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রছাত্রীদের ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা আছে।
অফিসের কর্মঘণ্টা শেষ হয় ৫টা বাজলে। অফিস শেষে বাসায় ফিরেই রাতের খাবারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিকাল ৫.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭টার ভিতরেই সবাই রাতের খাবার সেরে ফেলে। রাতের খাবারের পরে সবাই অনেক হাঁটাহাঁটি করে। হতে পারে সেটা একঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা বা তারও বেশি। শরীরকে ফিট রাখার জন্য রাতের খাবার সন্ধ্যা ৭টার ভিতর খেয়ে এবং খাওয়ার পরে একটু হাঁটাহাঁটি করাই যথেষ্ট বলে মনে করে চীনারা। মনকে সবসময় দুশ্চিন্তামুক্ত আর প্রশান্তিময় রাখার ব্যাপারে এদের অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। তাই সন্ধ্যায় ডিনারের পরপরই মধ্য বয়সী পুরুষ বা মহিলারা একসাথে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে দিয়ে মনের উৎফুল্লে নাচে। এই নাচের দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর, সব টিমে একজন দলনেতা থাকে, তাকে সবাই অনুসরণ করে। প্রতিটা কমিউনিটিতে পর্যাপ্ত জায়গা আছে এই নাচের টিমদের জন্য। এছাড়া কমিউনিটি কর্তৃপক্ষ প্রতিরাতে বড় পর্দায় বিভিন্ন মুভি দেখায় এবং সেখানে সবাই সমবেত হয়ে সেটা উপভোগ করে। গোসলের ব্যাপারেও একটু ভিন্নতা আছে। রাতের ঘুমকে প্রাশান্তিময় করতে ডিনারের পরে রাতের ব্যায়াম সেরে বাসায় ফিরে ঘুমানোর আগে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল সেরে ঘুমাতে যায় চীনারা। সবাই চেষ্টা করে রাত ১১টার ভিতর ঘুমানোর।
প্রতিটা কমিউনিটিতে সুইমিং পুল, এক্সারসাইজের বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা বাচ্চাদের নাচ, গান, বিনোদনোরে ব্যবস্থাসহ খেলার জন্য অত্যাধুনিক খেলার রাইড আছে। চীনাদের জনপ্রিয় খেলার ভিতর বাস্কেট বল, ভলি ভল, ব্যাডমিন্টন, গলফ, টেবিল টেনিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বেশীরভাগ চাকরিজীবীরা সন্ধ্যায় ডিনারের পরে তাদের বন্ধু বান্ধব বা নির্দিষ্ট টিমের সঙ্গে উক্ত খেলাগুলো খেলার জন্য বের হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও লং জাম্প, হাই জাম্প, দড়ি লাফ ও চোখে পড়ে। কিছু কিছু জায়গায় ফুটবল খেলতেও দেখা যায়। কিন্তু ক্রিকেট এরা একেবারেই বোঝে না বা খেলে না।
এরা সবাই খুবই স্বাধীনচেতা। স্বামী-স্ত্রী সবাই যে যার মতো স্বাধীনতা ভোগ করে এবং কেউ কারও পার্সোনাল লাইফে হস্তক্ষেপ করে না। ছেলেমেয়েদেরও ছোট থেকে সেভাবেই স্বাধীনতা দিয়ে বড় করে। সবাই সেলফ ডিপেন্ডেন্ট অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী কেউ কারো আয় ইনকামের উপর নির্ভরশীল নয়। পারিবারিক জীবন মোটামুটি সুখের বলা যায়। সবাই সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে কাছে বা দূরে পরিবারের সাথে ঘুরতে বের হয়। প্রতিমাসের আয় থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রেখে দেয় ঘোরার জন্য। লাইফকে যতভাবে উপভোগ করা যায় তার সবগুলো পন্থাই চীনারা অনুসরণ করে।
জনসংখ্যার আধিক্য থাকায় চীনা প্রশাসন পূর্বে একের অধিক সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করলেও বর্তমানে তা শিথিল করেছে। কিন্তু পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেশিরভাগ চীনা পরিবার একটি সন্তান নিয়ে (ছেলে বা মেয়ে যেটাই হোকনা কেন) খ্যান্ত থাকে। এখানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও যথেষ্ট কর্মঠ এবং সমান সুযোগ-সুবিধা পায়। অর্থাৎ ছেলেদের সমমর্যাদা পায়। তাই কন্যা সন্তান হলেও দম্পতি খুশি থাকে। তবে একের অধিক সন্তানও এখন কিছু কিছু সচ্ছল পরিবারকে নিতে দেখা যায়। কারণ একের অধিক সন্তান হলে সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে সার্বিক খরচ বেড়ে যায়, এ চিন্তা তাদের মাথায় থাকে।
চীনারা সচারাচার খুবই হিসাবী হয়। ছোটকালে আমরা জেনেছি যে, চীনারা এতটাই হিসাবী যে একটা দেশলাইয়ের কাঠি নাকি কয়েকভাগে ভাগ করে ব্যবহার করত। কথাটা কতটা সত্য জানি না, তবে এদের ভিতরে বেশ মিতব্যয়ীতার লক্ষণ দেখা যায়। তারা সবসময় চিন্তা করে কীভাবে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়। এজন্য কেউ অলস সময় কাটাতে পছন্দ করে না। এরা এতটায় কর্মঠ হয় যে, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের সবারই সচল এবং কর্মক্ষম দেখা যায়। সবাইকে সময়ের যথাউপযুক্ত সদ্ব্যবহার করতে দেখা যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, বেশ কিছু সৃজনশীল কাজে তারা সময় দিচ্ছে। হতে পারে সেটা বাসায় বসে বিভিন্ন কারুশিল্পের কাজ, বাসায় নাতি-নাতনিকে নিয়ে খেলতে যাওয়া, স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং সর্বোপরি বিভিন্ন ছোট খাট প্রতিষ্ঠানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সহজ কাজগুলো করা। এখানে একটা জিনিস বেশ লক্ষনীয় যে, বেশিরভাগ শিশু তাদের মা-বাবার চেয়ে দাদা-দাদির সাথে বেশি সময় কাটায়। বাবা-মা সারাদিন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকায় বাচ্চাদের ঠিকমত সময় দিতে পারে না। বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিরা শিশুর সেই একাকীত্বকে একেবারেই বুঝতে দেয় না।
ছেলেমেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। যেমন, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই যখন বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে যায়, তখন ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করে। দেশি টাকায় যার সর্বনিম্নমান ২৫ লাখ থেকে উপরে যেকোন পরিমাণ হতে পারে। তবে নিন্মবিত্তদের ক্ষেত্রে তাদের সামর্থ্য না থাকায় এই রীতি লক্ষ করা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারও ছেলের পরিবারকে অর্থ প্রদান করে। এখানে কেউ চাইলেই ইচ্ছামত একের অধিক বিয়ে করতে পারে না। তবে দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিবাহ বিচ্ছেদ একেবারে কম না। শতকরা ৩০ ভাগের মতো বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটতে দেখা যায়। বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হলে তারা চাইলে স্বেচ্ছায় বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে কিছু আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সেটা সম্পন্ন করা লাগে।
পরিবারের মধ্যে যেকারো বিয়োগান্তক ঘটনা নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। চীনাদের ভিতরেও সেটা স্বাভাবিকভাবে দৃশ্যমান। তবে কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী কিছু নিয়ম নীতি দেখেছি। এদের থেকে শুনেছি এই নিয়ম নীতিও নাকি প্রদেশ থেকে প্রদেশে ভিন্ন থেকে ভিন্নতর। কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরে যথাসম্ভব দ্রুত বেশ কিছু পটকা সদৃশ বাজি পুড়িয়ে থাকে চীনারা। এদের বিশ্বাস, এই পটকা সদৃশ বাজি মৃত দেহের আশপাশ থেকে সকল অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে দেয়। এরপর দ্রুত মৃতদেহকে বাসা থেকে বের করে বসবাসকৃত কমিউনিটির নির্দিষ্ট জায়গায় তাবু খাটিয়ে তার চারপাশ দিয়ে ঘিরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষ চেম্বারে মৃতদেহকে সংরক্ষণ করে। মৃতদেহের সাথে তার ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্রও বের করে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর চলতে থাকে তাদের সৎকারের একের পর এক ভিন্ন ভিন্ন পর্ব। ৪ থেকে ৫ দিন ওই মৃতদেহের পাশে ২৪ ঘণ্টা মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন এবং পড়শিরা বিভিন্ন সৎকারমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে। ওই ৪-৫ দিনের প্রতিদিন খুব ভোরে সবাই বিভিন্ন তত্ত¡ নিয়ে বসবাসকৃত কমিউনিটির আশপাশে অবস্থিত মন্দিরগুলোতে যাতায়াত করে। মন্দিরগুলোতে যাওয়া এবং আসার সময়ে অনবরত চলতে থাকে পটকা বাজির মুহুর্মুহু আওয়াজ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিশেষ ধরনের পোশাক পরে মৃত ব্যক্তির খুব কাছের মানুষরা (মৃত ব্যক্তির ছেলে-মেয়ে সাথে পড়শিরা) বিভিন্ন ধরনের করুণ সুরের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মুকাভিনয়ের মতো উপস্থাপনার কিছু পর্বও চোখে পড়ে।
দূর-দূরান্ত থেকে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনরা মূল সৎকার পর্বের আগে সবাই চলে আসে। মৃত দেহের পাশে স্বজনেরা বিশেষ এক ধরনের কাগজ (জজ পেপার) পুড়িয়ে তাদের মৃত ব্যক্তির আত্মাকে স্মরণ করে। যেদিন মৃত দেহকে সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন খুব ভোরে রওনা হয়। যারা মৃত দেহের সাথে যায়, তারা সবাই একই রকমের পোশাক পরে। কোনো কোনো পরিবার সাদা ধবধবে পোশাক পরিধান করে আবার কোনো পরিবার রঙিন পোশাকও পরে। পূর্বে চীনাদের মৃতদেহ সৎকারে মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও (এখনো কোথাও কোথাও আছে) এখন বেশিরভাগ জায়গায় বৈদ্যুতিক হিটারে পুড়িয়ে মৃতদেহ নিঃশেষ করা হয়। এই জায়গাগুলো সাধারণত বসবাসকৃত কমিউনিটি থেকে ৩-৪ কি.মি. দূরে হতে দেখা যায়। যেদিন ভোরে মৃতদেহ নেওয়া হয় সেদিন ওই ৩-৪ কি.মি. রাস্তার দু’পাশ দিয়ে আগে থেকে কয়েক স্তরের বাজির পশরা সাজানো হয়। মৃতদেহের নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ দিয়ে বাজি অনবরত পুড়িয়ে অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই বাজির ভিতর স্থান পায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পটকা সদৃশ বাজি এবং আতশ বাজি। এসময়ে ২ থেকে ৩ দলের ভিন্ন ভিন্ন পোশাকের ভিন্ন ভিন্ন ব্যান্ড দল তাদের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় দিয়ে আসে। ভিন্ন ভিন্ন ব্যান্ড দলের সদস্যদেরও নির্দিষ্ট সজ্জা দেখা যায়। যেমন তিন দল থাকলে প্রথমে, মাঝে এবং সবশেষে এক দল করে স্থান পায়। দুই দল হলে প্রথমে এবং শেষে থাকে। সাথে যুক্ত হয় বহু পড়শি এবং স্বজনেরা। মৃত দেহ বহনকারী শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িটির স্থান পায় মধ্যবর্তী স্থানে। খুবই ধুমধাম করে, বাজি-বাজনা করে মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় দিতে খুবই সকালে সবাই বের হয়। এর ঘণ্টা দুই-তিন পরেই সবাই আবার দলবেঁধে ফেরে, তবে ফেরার ক্ষেত্রেও একটু ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন, যে পথ দিয়ে তারা গিয়েছিল সেই পথে না ফিরে অন্য পথে ফেরে। ফেরার সময়ও থাকে প্রচুর বাজির আওয়াজ এবং সর্বশেষ কমিউনিটির গেটে প্রবেশের আগে অসংখ্য আতশ বাজি একের পর এক পুড়িয়ে তবেই মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করে। যারা মৃতব্যক্তির সৎকারে সঙ্গী হয়েছিল তাদের সবাইকে মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু কিছু জিনিস (ছাতা, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট) দিতে দেখা যায়।
বিভিন্ন প্রদেশের নিয়ম নীতিতে ভিন্নতা লক্ষ করা গেলেও অফিস টাইম, দুপুর এবং রাতের খাবারের নির্ধারিত সময়, দুপুরের খাবারের পরে হালকা বিশ্রামের রীতি, রাতের খাবারের পরে ব্যায়াম, রাতে ঘুমানোর আগে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল এগুলো সামান্য এদিক সেদিক হয়ে প্রায় সবখানেই একইরকম দৃশ্য চোখে পড়বে। নিজেদের শরীরকে ফিট রাখতে এসব নিয়মনীতি মেনে চলাকে চীনারা প্রতিদিনকার গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে তারা মনে করে। আর সেজন্য তাদের সবাইকে যথেষ্ট নিরোগ বলেও প্রতীয়মান হয়।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজিয়ান, চীন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।