Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাম্পকে অপসারণ করতে হাউসের দ্রুত পদক্ষেপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:১১ পিএম

অভিশংসনের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পদচ্যূত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে মার্কিন সংসদের নিম্ন কক্ষ তথা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। সোমবার সেখানে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে ‘বিশৃঙ্খলায় উসকানির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।

হাউসের এই পদক্ষেপের ফলে ট্রাম্প হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি দুবার অভিশংসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবেন। অভিশংসন প্রস্তাবে নির্বাচনে জয়ের ট্রাম্পের ভুয়া দাবি ও ৬ জানুয়ারি সহিংসতার আগে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তার দেয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে জর্জিয়ার রিপাবলিকান সেক্রেটারি অব স্টেটকে ফোন করার কথাও উল্লেখ করা হয়, যাতে ট্রাম্প রাজ্যে তার জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট ‘খুঁজে বের করতে’ তাকে চাপ দিয়েছিলেন। অভিশংসন প্রস্তাবে বলা হয়, এসব কিছুর মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপন্ন অবস্থার মধ্যে ফেলেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অখণ্ডতাকে হুমকি দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তরে হস্তক্ষেপ করেছেন। অধিকন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বরা হয়, ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় নিজের সমর্থকদের সহিংসতায় উসকানি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই ঘটনার পর তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের বিষয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার শুরুতেই বলেছিলেন, ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যদি সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ না করেন, তবে তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করবেন। পরে ২৫তম সংশোধনীর প্রয়োগের জন্য মাইক পেন্সকে সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। বলা হয়েছিল, এই সময়ের মধ্যে পেন্স কোনো পদক্ষেপ না নিলে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব তোলা হবে। এ বিষয়ে প্রতিনিধি পরিষদের রুলস কমিটির চেয়ারম্যান জিম ম্যাকগভার্ন বলেন, ‘আমাদের সক্রিয় হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, এমন জরুরি ভিত্তিতে ও সুচিন্তিতভাবে আমাদের এই সক্রিয় হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বুধবার বিষয়টি প্রতিনিধি পরিষদে উঠবে বলে আমরা আশা করি। আমার বিশ্বাস, এই প্রস্তাব পাস হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রেসিডেন্ট অন্যায্য কাজ করেছেন, যার জবাবদিহি থাকা উচিত।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ জানুয়ারি হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়কে প্রত্যয়নের লক্ষ্যে বসা কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা আইনপ্রণেতাদের সবার প্রাণকে ঝুঁকিতে ফেলা সেই হামলায় উসকানি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই ঘটনায় ক্যাপিটল পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচজন। এই ঘটনায় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতাদের অনেকেই খোলাখুলি বলেছেন, আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা রাখাটা আর নিরাপদ নয়।

ক্যাপিটল হিলে ওই হামলার পর সহিংসতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২৫টি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল রোববার ন্যান্সি পেলোসি প্রতিনিধি পরিষদে তার দলের নেতাদের উদ্দেশে লেখেন, ‘সংবিধান ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার স্বার্থেই আমাদের জরুরি ভিত্তিতে সক্রিয় হতে হবে। কারণ, এ দুটিই এই প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে হুমকির মুখে রয়েছে।’ এ বিষয়ে প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য কেভিন ম্যাককার্থির মন্তব্য জানতে চেয়েও পায়নি রয়টার্স। উল্লেখ্য, ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনের জয়ের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন ম্যাককার্থি।

তবে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প এবারও অভিশংসিত হলে সিনেটে বিষয়টি ১৯ জানুয়ারির আগে উঠবে না। সে ক্ষেত্রে সিনেটে অভিশংসন শুনানি বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এটি নতুন প্রশাসনের জন্য এক সমস্যা তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্য জিম ক্লাইবার্ন জানান, কয়েক মাস অপেক্ষা করে পরে প্রস্তাবটি সিনেটে পাঠানো যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে জো বাইডেন নিজের প্রশাসন গুছিয়ে নিতে পারবেন। ট্রাম্পকে তখন হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু ২০২৪ সালে তার আবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়াটা ঠেকানো যাবে। সূত্র: এপি, সিএনএন, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ