Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্যাপিটল দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন ভাবমর্যাদা

চীনসহ বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ররোচনাতে ক্যাপিটলে সংঘটিত ৬ জানুয়ারীর দাঙ্গার বিষয়ে দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট তার কূটনীতিকদের ‘৬ জানুয়ারির অগ্রহণযোগ্য ইভেন্টের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে’ কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শাসকদের ওপর মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে খবরদারি করা আমেরিকার জন্য ঘটনাটিকে ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা।

রাষ্ট্রীয় আইনের বিরুদ্ধে দাঙ্গা চালানো ‘ভুল’ উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে না। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আমেরিকান রাজনীতিবিদরা চিসিনৌ, হংকং, মস্কো, তাইপেই, তিলিসি এবং অন্যন্য দেশগুলোতে সংসদ অস্থাতিশীল করে দিতে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের উৎসাহিত করেছেন। এখন তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে যে, কেন ওয়াশিংটনে যখন একই ধরনের ঘটনা ঘটল, তখন ভিন্ন মানদন্ড প্রয়োগ হ’ল। চীনা সমালোচকরা ২০১৯ সালে হংকংয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিল (লেগকো)-এর উপর হামলা কথা স্মরণ করেছেন এবং ক্যাপিটলের দাঙ্গায় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কার্যালয় ভাঙচুরকে ‘দেখার মতো সুন্দর দৃশ্য’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন যে, লেগকোর চেয়ে ক্যাপিটলে অনেক বেশি ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং হংকং আক্রমণে কেউ মারা যায়নি; ওয়াশিংটনে ৫ জন মারা গেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো স্থগিত করার মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মে ট্রাম্পকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া নিয়েও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা।

বেইজিংয়ের চায়না ফরেন এফেয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি হাইডংয়ের বরাত দিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গ্লোবাল টাইমস আমেরিকার তথাকথিত নৈতিক উচ্চতাকে নির্লজ্জ রকমের দু’মুখো হিসবে সমালোচনা করেছে। অন্যান্য দেশের সরকারগুলোও চীনের সাথে গলা মিলিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান ঘটনাটিকে ‘গণতন্ত্রের জন্য অপমান’ বলে শোক প্রকাশ করেছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ‘ঘটনাগুলো দেখিয়েছে যে, পশ্চিমা গণতন্ত্র কতটা ভঙ্গুর এবং দুর্বল এবং এর ভিত্তি কতটা দুর্বল।’ রাশিয়ার কর্মকর্তাগণ এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাদের খুশি চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন এ মন্তব্য করে যে, এটি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তারা তাদের উল্লাসের জায়গাটি ক্রেমলিনপন্থী সংসদ সদস্য ও শিক্ষাবিদদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।

জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগোগা দেশটির ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞাগুলোর সমালোচনা করার সুযোগটি লুফে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে সমর্থন করার ছদ্মবেশে অন্য জাতিকে শাস্তি দেয়ার নৈতিক অধিকার আমেরিকার নেই।’

ট্রাম্প যাদের বন্ধু এবং সমর্থক হিসাবে গণ্য করেছেন, সেই আন্তর্জাতিক নেতারাও চুপ করে থাকার বা তাদের প্রাক্তন বন্ধুর থেকে নিজেদের দূরে রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেছেন এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগের ভিত্তিহীনতার পুনরাবৃত্তি করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘বেআইনী’ দাঙ্গার খবরে তার দুঃখ পাওয়ার কথা টুইট করেছেন। তবে তুলনামূলকভাবে ট্রাম্পের সমালোচনা করাতেও অনিচ্ছুক ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার মতো পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোতে বিরোধী রাজনীতিবীদরা ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চাটুকারিতার অভিযোগ করেছেন, তার সাথে হেসে হেসে, করমর্দন করে বা তাকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলে আনন্দ প্রকাশ করার সমালোচনা করেছেন। নিজেকে ‘ব্রিটেন ট্রাম্প’ কলে অভিহিত করা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে নিঃসন্দেহে এখন লজ্জায় মাথানত করতে হবে। তিনি সমালোচনায় রাখঢাক করেননি, ‘প্রেসিডেন্ট অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সন্দেহ পোষণ করেছেন, তিনি যখন মানুষকে ক্যাপিটলে ঝড় তুলতে উৎসাহিত করেছেন, আমি মনে করি এটি সম্পূর্ণ ভুল ছিল।’ ট্রাম্প যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে আমেরিকার বন্ধুবান্ধব এবং মিত্ররা দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। তাদের বিশ্বাস, গত সপ্তাহের শকওয়েভ কেবল ট্রাম্পকেই নয়, ‘ট্রাম্পিজম’কে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এবং ভবিষ্যতে এ জাতীয় প্রেসিডেন্সির সম্ভাবনা ম্লান করে দিয়েছে।

ক্যাপিটলে হামলা পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ : ্এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ক্যাপিটল হিলে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের তান্ডব পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। ইরানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, রুহানি যোগ করেন যে, ট্রাম্প একজন ‘অযোগ্য ব্যক্তি’ যিনি তার দেশকে বিব্রত করেছেন।

তেহরান টাইমস অনুসারে রুহানি বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, গত চার বছরে এক ব্যক্তি তার নিজের দেশের জন্য কী ক্ষতি করেছে, তার জাতিকে অপমান করেছে এবং ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে আমাদের অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে’।

তিনি আরও যোগ করেন, স্বাভাবিকভাবেই, যখন কোনও ‘অযোগ্য ব্যক্তি’ একটি দেশে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন এই দেশ এবং বিশ্ব অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়। সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর।



 

Show all comments
  • ডালিম ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৮ এএম says : 0
    মার্কিন ভাবমর্যাদা বলে এখনও কিছু বাকি আছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:০৯ এএম says : 0
    ট্রাম্প যতটুকু মর্যাদা বাকি আছে সেটুকুও নিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:০৯ এএম says : 0
    পাগলকে প্রেসিডেন্ট বানালে তা তো হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:০৯ এএম says : 0
    খুবই ভালো...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ