পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেখার দিহানের পক্ষে অদৃশ্য কোনও শক্তি কাজ করছে বলে দাবি করেছেন নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা। তার দাবি, সবকিছু দেখে আমাদের মনে হচ্ছে মামলার শুরু থেকেই তারা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। গতকাল রোববার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ভিকটিম কিশোরীর বাবা।
ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজাদ্দুর রহমান বলেন, ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফারদিন ইফতেখার দিহানের দুইমাস আগে থেকে সম্পর্ক ছিল। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেইসাথে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দিহানের তিন বন্ধুকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আটক দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হলেও পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে তারা। ডিএনএ পরীক্ষায় তাদের সম্পৃক্ততা পেলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
কিশোরীর বাবা আরো জানান, দিহান নির্যাতিত কিশোরীর অপরিচিত ছিল না। তবে তাদের জানাশোনা পরিবার পর্যন্ত গড়ায়নি। বন্ধু মহলের কয়েকজন শুধু জানতো। মামলার বাদী ও ভিকটিম কিশোরীর বাবা বলেন, আমার মেয়ের স্কুলের বান্ধবীর এক বড় ভাই আছে। দিহানসহ ওই তিন ছেলে তার বন্ধু। ওখান থেকেই আমার মেয়ের সঙ্গে দিহানের পরিচয় বা চেনাজানা। ঘটনার দিন ঠিক ১২টা ১৯ মিনিটে আমার মেয়ের নম্বর থেকে কল আসে। আমি মিটিংয়ে থাকায় ফোনটা কেটে দেই। তারপর আর ফোন করেনি। তার কিছু সময় পর আমার স্ত্রীর ফোনে কল আসে। ফোন করে আমার মেয়ের অসুস্থতার কথা জানায়। প্রথম ফোনটা না ধরাটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমার মেয়েকে যখন জোর জবরদস্তি করা হচ্ছিল তখনই সে আমাকে ফোন করেছিল। আমি যদি ফোনটা ধরতে পারতাম বিষয়টা এতদূর গড়াত না। পরে আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন করা হয়। তবে সেটা হাসপাতাল থেকে না ওই বাসা থেকে এটা আমরা জানি না। হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা আমাকে বলেন, মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আমার মনে হয়, এমনও হতে পারে ও কোচিং এ যাচ্ছিল। তখন ওই ছেলেরা রাস্তায় তাকে বাধা দেয়। তখন আমাকে আমার মেয়ে ফোন করে। কিশোরীর বাসায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিন রুমের বাসার পশ্চিম দিকের শেষ ছোট রুমটি নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া মেয়েটির। রুমের ভেতরে ছোট্ট একটা খাট, পড়ার টেবিল আর একটা কাঠের আলমারি। ঘড়ির কাটা তখন ঠিক সাড়ে ১২টা। দক্ষিণের জানালাটা অর্ধেক খোলা। বিছানার থেকে একটু নিচেই জায়নামাজ। দুটো কোরআন শরীফ ভাজ করা। এক বোন আর এক ভাই আছে মেয়েটির। বোনের বয়স দু বছর। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাই ক্লাস সিক্সে পড়ে। অন্য রুমে খাটে চুপচাপ বসে আছে। মেয়ের মৃত্যুর তিন দিন পরেই সকল স্মৃতিকে পাশ কাটিয়ে চাকরিতে যেতে হয়েছে মাকে। বাবা বসে আছেন। পুরো বাসাজুড়ে পিনপতন নীরবতা।
মামলার বাদীর অভিযোগ দিহানের পক্ষে অদৃশ্য এক শক্তি কাজ করছে। তিনি বলেন, মামলার শুরু থেকে মনে হচ্ছে তারা বেশ সুবিধা পাচ্ছে। প্রথমে হাসপাতালে কালক্ষেপণ করা। থানা থেকে মামলার কাগজ ঢাকা মেডিক্যালে রাতে বা সকালে না পৌঁছানো। দেরিতে ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে অসঙ্গতি। সবশেষে আদালতেই উঠেই কারাগারে গিয়ে ঘুরে বেড়ানো। সব কিছু দেখে আমাদের মনে হচ্ছে তারা বিশেষ কোনও সুবিধা পাচ্ছেন। পুলিশ বললো, আমরা এটা নিয়ে বসবো। তারপর জানাবো। সেটাও দুদিন হয়ে গেল। কিভাবে যেন তারা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না।
কিশোরীর বাবা বলেন, যখন এজাহার লেখা হয় তখন খুব তাড়াহুড়া করা হচ্ছিল। কেননা আমাদের হাসপাতালে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তখন আমি পুলিশকে বলে ছিলাম আমি ৪ জনকে আসামি করতে চাই। কেননা ছেলেটা যখন আমার স্ত্রীকে ফোন দেয় তখন সে বলেছিল, আমরা বাসায় চারজন আছি। আবার হাসপাতালেও দেখি চারজন। কিন্তু পুলিশ বললো মেডিক্যাল রিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত তাদের নাম না দেই। পরে যদি তাদের তিনজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাদের নাম যোগ করা হবে। আমিও মনে করলাম মিথ্যা বলে একটা দুইটা ছেলের জীবন এভাবে নষ্ট করতে চাই না। কারণ আমি জানি একটা সন্তান মানুষ করতে কত পরিশ্রম লাগে। কিন্তু এখন সবকিছু দেখলাম। মেডিক্যাল রিপোর্ট শুনলাম। আমার বাচ্চাকে প্রচন্ড নির্যাতন করা হয়েছে। এ নির্যাতন আসলে একজনের পক্ষে করা সম্ভব না। এখন আমাদের মনে হচ্ছে, এ ঘটনার সঙ্গে চারজনই জড়িত থাকতে পারে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দিহানের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দিহানের বড় ভাইও নাকি তার ভাবিকে মেরে ফেলেছিল। আমার মেয়ের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। তাদের শাস্তি চাই।
দিহানের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগের মামলায় আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানের (১৮) ডিএনএ টেস্ট এবং জব্দকৃত আলামত পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরার আদালতে এ সংক্রান্ত আবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ.ফ.ম আসাদুজ্জামান। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি দিহান দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবিন্দ দিয়েছে। বর্তমানে দিহান কারাগারে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।