পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় পেঁয়াজের দাম যখন কমতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কৃষিপণ্যে ভারত নির্ভরতা আমাদের জন্য মাঝে-মধ্যেই বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনো চাল, কখনো পেঁয়াজ, কখনো বা অন্য কোন পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পণ্য সঙ্কট ফেলা হয়। পন্যের দাম বাড়ে। জনগণকে বাড়তি মূল্য গুনতে ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবশ্য এসব রফতানি নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি সঙ্কট সেই সাথে প্রতিটি ক্ষেত্রে সংকট উত্তরণেও বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে সাফল্যের অভিজ্ঞতা আমাদের কম নয়। প্রায় একযুগ আগে ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভারতের চাল রফতানি বন্ধের প্রতিক্রিয়ায় বেশ বড় সংকট দেখা দিয়েছিল। ইতিমধ্যে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠলেও কোনো এক অদৃশ্য কারেণে ধান কাটার ভরা মওসুমে ভারত থেকে চাল আমদানি করে আমাদের কৃষকদের লোকসানের মুখে ঠেলে দেয়া হয়। বিজেপি সরকার তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দিন বাংলাদেশে গরুর গোশতের আকাল পড়েনি। দেশের খামারিরা সারা বছরের প্রয়োজনীয় গরুর গোশতের যোগানসহ কোরবানীর ঈদে পশুর চাহিদা পুরণে যথেষ্ট সফল হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গরুর গোশত রফতানি করা সম্ভব। একইভাবে চাল, পেঁয়াজ, আলুর চাহিদা পুরণ করে বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়া কোনো অসম্ভব কাজ নয়।
গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কয়েকদিন আগে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এবাও পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় পেঁয়াজের দামে বেড়ে যায়। সঙ্কট মোকাবিলায় মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর, চীন, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করে পেঁয়াজের চাহিদা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই সাথে দেশের কৃষকরাও বেশি পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে, যার ফল আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ যখন ভারতীয় পেঁয়াজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখনই তারা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ও বাড়তি শুল্ক আরোপ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাংলাদেশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেলে দেয়। অথচ নিত্য ব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি কৃষিপণ্যেই স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের কৃষক ও খামারিদের সামর্থ্য রয়েছে। এ জন্য তাদের উৎপাদিত পণ্যের সর্ঠিক মূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার ভরা মওসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভারত থেকে কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী ও স্থিতিশীল নীতিমালা অনুসরণ করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকদের স্বার্থ এবং দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি কার্যকর গাইডলাইন ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পুর্ণ, এই দাবিকে সামনে রেখেও ভারত থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে ধানের মূল্যে ধস নামিয়ে দেয়া হলেও চালের মূল্য অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সিন্ডিকেটেড কারসাজি বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ধান, আলু , পেঁয়াজের মত নিত্য পণ্যের চাহিদা উৎপাদনের যে হিসাব পাওয়া যায়, তাতে কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। আকস্মিক ভারতের রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা বা অস্বাভাবিক শুল্ক আরোপের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রতিক্রিয়া হওয়ার পেছনে বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। একদিকে ভারতীয় রফতানিকারক অন্যদিকে এক শ্রেণীর আমদানিকারক, মিলার, মজুদদাররা শত শত কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এ ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। একইভাবে চীনের সাথেও বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের নয় শতাধিক পণ্যের জন্য চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে চীন বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও ভারত পাটের মত ট্রাডিশনাল কৃষিপণ্যের উপর অস্বাভাবিক হারে এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করে দেশের কৃষি ও শিল্পকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে এখন পেঁয়াজসহ ভারতীয় কৃষিপণ্যের অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।