পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মধ্যে পেঁয়াজ ও বেগুন রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত মানুষকে কাঁদিয়েছে। হঠাৎ করে এই দুটি পণ্য বেশি দামে কিনতে হয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ ভোক্তাদের কাঁদিয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেই পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় হু হু করে দাম নীচে নেমে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সে পেঁয়াজ দিনাজপুরের হিলি বন্দরে ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দিনাজপুরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা কেজি দরে।
অথচ রাজধানীতে পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। দাম কমে যাওয়ায় টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করেছে। গতকাল টিসিবি ট্রাকে পেঁয়াজের দর কেজিতে ৩০ টাকা থেকে ১০ টাকা কমিয়ে ২০ টাকা করেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজের দাম কমেছে বলে জানা যায়।
যারা উৎপাদন করেন সেই কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও বেগুনের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। দিনাজপুর, রংপুর ও পাবনার কয়েকটি উপজেলায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজের দাম নিয়ে এতোদিন তারা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। এতে করে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপা মধুপুর গ্রামের কৃষক মো. মকবুল হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছি। ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ না হলে ঘরে পেঁয়াজ পঁচে যাবে। একই দাবি করেছেন পীরগাছা উপজেলার কয়েকজন কৃষক। তাদের বক্তব্য ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ না করলে কৃষকরা মাঠে মারা যাবেন। অথচ ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানির সময়সীমা ২৯ মার্চ থেকে এক মাস বাড়িয়ে ঈদুল ফিরত পর্যন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে হিলি থেকে সংবাদদাতা জানান, ক্রেতার সঙ্কটের কারণে দিনাজপুরের হিলি বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা দরে। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২ থেকে ৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকরা জানান, এলসি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় এবং দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ আমদানি করে বিপাকে পড়েছেন।
এছাড়া প্রচণ্ড গরমে ভারতের পাইপলাইনে দীর্ঘ সময় পেঁয়াজ লোডিং অবস্থায় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে অনেক পেঁয়াজ। গতকাল সোমবার হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজের গুদাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গুদামে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে পঁচে যাচ্ছে আমদানিকরা এসব ভারতীয় পেঁয়াজ। অনেক আমদানিকারককে মাটিতে ঢেলে পেঁয়াজ শুকাতে দেখা গেছে। আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজের বস্তা বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
অপরদিকে ভালো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা বস্তা। তবে এ সময় আমদানিকারকদের গুদামগুলোতে পেঁয়াজের তেমন একটা ক্রেতা দেখা যায়নি। যার কারণে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে। এছাড়া এই বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবুল হোসেন বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ পেঁয়াজ আমদানির পারমিট বন্ধ হয়ে যাবে। এই কারণে আমাদের এলসি করা পেঁয়াজ দ্রুত আমদানি করেছি। আর ভারতের পাইপলাইনে অনেক গাড়ির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় গরমে তা নষ্ট হয়ে গেছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমিয়েছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এখন থেকে ন্যায্যমূল্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হবে ২০ টাকায়। টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে টিসিবির পেঁয়াজের মূল্য প্রতি কেজি ভোক্তা মূল্য ২০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৩০ টাকা।
আমদানির সময় এক মাস বাড়ছে : ভরা মৌসুমে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ আসায় পণ্যটির দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের যখন ত্রাহি অবস্থা; তখন পণ্যটি ভারত থেকে আমদানি আরো এক মাস বাড়ানো হচ্ছে। পেঁয়াজের আমদানি অনুমতি ইস্যু কার্যক্রমের সময়সীমা ছিল ২৯ মার্চ পর্যন্ত। আমদানির সময়সীমা বাড়ানো হলে বিদ্যমান সুযোগের আওতায় পেঁয়াজ আমদানিকারকরা আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজের আইপি ইস্যু কার্যক্রম চালাতে পারবেন। একই সঙ্গে এলসি খুলতে পারবেন।
এতে রমজানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল থাকবে এমন অজুহাত তুলে পণ্যটি আমদানি অব্যহত রাখার প্রস্তাব করা হয়। গত রোববার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পরিচালকের কাছে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও) পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। এতে বলা হয় বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতি (ইমপোর্ট পারমিশন/আইপি) ইস্যু কার্যক্রমের সময়সীমা আগামীকাল ২৯ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। ২৯ মার্চের পর আইপি ইস্যু না করলে পেঁয়াজের বাজার আকস্মিক অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি শাখার উপসচিব খন্দকার নুরুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের চাহিদাকৃত পেঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর ও একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পচনশীল পণ্য। বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা রয়েছে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টনের। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ ক্ষতি ব্যতীত প্রায় ৬-৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
নিকট অতীতে এ পণ্যটির বাজার বেশ কয়েকবার অস্থিতিশীল হয়েছে। বর্তমানে ২৯ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজের আইপি ইস্যু চলমান থাকায় বাজারমূল্য সাম্প্রতিক সময়ে আগের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানির সময়সীমা বাড়ানো হলে বিদ্যমান সুযোগের আওতায় পেঁয়াজ আমদানিকারকরা আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজের আইপি ইস্যু কার্যক্রম চালাতে পারবেন। একই সঙ্গে এলসি খুলতে পারবেন। এতে রমজানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল থাকবে।
উত্তরাঞ্চলে বেগুনের দুর্গতি : দিনাজপুরের হিলি পাইকারি সবজি বাজারে বেগুনের কেজি ৫ টাকা ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফলন ভাল উৎপাদন বেশি যার কারণে বেগুনের দাম কমে গেছে। এদিকে দাম কম পাওয়াতে খুশি ক্রেতারা। তবে কৃষকরা হতাশ। রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও বগুড়ার বিভিন্ন গ্রামীণ হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগুনের দাম কমে গেছে আশঙ্কাজনক ভাবে। কয়েকদিন আগে যে বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতো; সেই বেগুন এখন গ্রামের হাটে ‘ভাগা’ দিয়ে বিক্রি হচ্ছে।
রংপুরের পীরগাছার কৃষক (বেগুন চাষি) রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা বছর আমি ২২ কাঠা জমিতে বেগুনের চাষ করি। এবছরও আমার বেগুনের ফলন ভাল হয়েছে। প্রথম দিকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করেছিলাম। অনেক ভাল দাম পেয়েছি। বর্তমান সব জায়গায় বেগুনের ফলন ভাল হওয়াতে দাম একেবারে কমে গেছে। এখন আমি ৫ টাকা কেজি দরে বেগুন পাইকারি বিক্রি করছি।
গতকাল রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি বাজার এবং পাড়া মহল্লায় দেখা যায় বিক্রেতাদের কেউ কেউ বেগুনের ‘ভাগা’ দিয়ে বিক্রি করছেন। বাজারে বিক্রেতারা জানান বেগুনের দাম কমে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।