Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিউ নর্মাল যুগের অ্যাবনর্মাল ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৫১ পিএম

করোনা মহামারির সময় ভারতের অর্থনীতি থেকে স্বাস্থ্যপরিষেবা- সব বিষয়েই করুণ হাল দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২১ দিন সময় চেয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাঝে কেটে গিয়েছে নয় মাস। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। আপাতত সকলেই তাকিয়ে আছেন টিকার দিকে। যদিও সেই টিকা কাহিনি কতটা সুখের হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতে করোনার তেজ ততটা বাড়েনি। দৈনিক সংক্রমণ হাজারেও পৌঁছায়নি। কিন্তু ইউরোপে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতি। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাই কয়েক হাজার। আমেরিকাতেও করোনা থাবা বসিয়েছে তত দিনে। বিভিন্ন দেশ ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করতে শুরু করেছে। সমালোচকরা বলে, ট্রাম্পের ভারত সফরের জন্য অপেক্ষা করছিল সরকার। সফর কেটে গেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘জনতার কারফিউ’ ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, একদিন সকলে বাড়িতে বসে থাকলে করোনার চেন ভাঙা সম্ভব। জনতার কার্ফিউ সফল হয়েছিল। তবে এক দিনে করোনার সংক্রমণে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। এর কয়েকদিনের মধ্যেই মোদি ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। ওই ২১ দিনে করোনার চেন ভাঙবে এবং সকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২১ দিনে করোনার চেন ভাঙেনি। লকডাউনও ২১ দিনে ওঠেনি। প্রায় দেড় মাস কমপ্লিট লকডাউনে ভারতের রাস্তায় রাস্তায় ইতিহাস তৈরি হয়েছে।

রাজপথ দেখেছে ভুখা মিছিল। হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক হাজার হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে ফেরার চেষ্টা করেছেন। গরমে, অনাহারে রাস্তাতেই মৃত্যু হয়েছে অনেকের। এখনো পর্যন্ত যার কোনো পরিসংখ্যান সরকার তৈরি করে উঠতে পারেনি। সংসদে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। প্রথম দিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরকার সে ভাবে চিন্তাও করেনি। কিন্তু মৃত্যুমিছিল শুরু হওয়ার পরে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের খানিকটা টনক নড়ে। ঠিক হয়, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ট্রেন চালানো হবে। সেই ট্রেন থেকেও নামতে থাকে শ্রমিকদের লাশ। দেশভাগের পর ভারতের রাস্তা দিনের পর দিন ধরে এত মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেনি।

একদিকে যখন পরিযায়ী শ্রমিকদের হাহাকার চলছে, ঠিক তখনই মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত চাকরি হারাতে শুরু করে। মাত্র কয়েক মাসে ১২ কোটি মানুষ কাজ হারান। তারও বেশি মানুষের বেতন কমে যায়। ভারতের অর্থনীতি লকগেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। সরকারি হিসেবে ২০২০ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে প্রায় ২৪ শতাংশ জিডিপি নেমে যায়। করোনার সময়ে গোটা বিশ্বের কোনো দেশে এই পরিমাণ জিডিপির পতন হয়নি। লকডাউনের পর অর্থনীতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতির পতনের ট্রেন্ড কমেনি। তৃতীয় কোয়ার্টারে ভারতীয় অর্থনীতির আরো সাত শতাংশ পতন হয়েছে। অর্থনীতির এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্যই সরকার লকডাউন তুলতে বাধ্য হয়। যখন তোলা হয়, ভারতে তখন দৈনিক করোনা সংক্রমণের পরিমাণ বিশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যত দিন গিয়েছে, সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে দৈনিক প্রায় এক লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। গোটা ভারত জুড়ে কার্যত এক প্যানডেমোনিয়াম তৈরি হয়। বোঝা যায়, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা। সরকারি হাসপাতালে জায়গা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে পকেট ফাঁকা করে দেয়। সঙ্গে রয়েছে অশুভচক্র। দিল্লির মতো রাজধানী শহরেও দালালচক্র কার্যত ওপেন সিক্রেট হয়ে গিয়েছে। লাখ লাখ টাকা ডিপোজিট না করলে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না, এই অভিযোগও উঠেছে। বিভিন্ন কোভিড সেন্টারের বেহাল দশা সামনে এসেছে। সেখানে ধর্ষণ পর্যন্ত হয়েছে। দিল্লির সরকারি হাসপাতালের দশা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ধমক খেতে হয়েছে সরকারকে। সরকার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে পারেনি। আশ্বাস দিয়েছে দ্রুত টিকা সরবরাহের।

বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই টিকা পাবে ভারত। কিন্তু কী ভাবে সেই টিকা দেয়া হবে। কারা আগে পাবেন? টিকার দাম কে দেবে, কোন সংস্থার টিকা কোথায় যাবে- কোনো বিষয়েই সরকার স্থির কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি। সব বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য এক মত হয়নি। ফলে অচিরেই যে টিকা নিয়ে রাজনীতি বেশি হবে এবং কাজ কম হবে, এ বিষয়ে কারো মনে কোনো দ্বিধা নেই। এক কথায় ভারতের করোনা এক নতুন রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ইতিহাস যাকে করোনা রাজনীতি বলেই চিনবে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ