মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তুরস্কের তৈরি ড্রোনগুলি লিবিয়ায় যুদ্ধ জিতেছে, এর টিভি অপেরা এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক পণ্যগুলি মুসলিম দেশগুলির হৃদয় ও মন জয় করেছে, যারা বেশিরভাগই এক সময় অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। দেশটির মুসলিম রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোগান সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, গ্রিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি রাশিয়া ও উপসাগরীয় দেশগুলির সাথে প্রতিযোগিতা করে আঞ্চলিক আধিপত্যের খেলোয়াড় হিসাবে আঙ্কারার ভূমিকা জোরদার করেছেন। ইউরোপের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির, বিশেষত ফ্রান্সের মুখোমুখি দাড়াতে এবং নিজেকে মুসলিম বিশ্বের একজন ত্রানকর্তা হিসাবে উপস্থাপন করার অভিলাষ তাকে উত্তর আফ্রিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলেও সমীহের পাত্র পরিণত করেছে।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিগ্রহণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এরদোগান প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরদোগানের অধীনে তুরস্ক আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে লিবিয়াতে সেনা সহায়তা পাঠিয়েছে। দেশটি সিরিয়া, ইরাক, কাতার, সোমালিয়া, আজারবাইজান এবং আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতির পাশাপাশি বালকানে শান্তিরক্ষী বাহিনী বজায় রেখেছে। একই সাথে, তুরস্ক তার জ্বালানী শক্তি এবং আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় ভূমধ্যসাগর এবং এজিয়ান সমুদ্রাঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য গ্রিস এবং সাইপ্রাসের সাথে বিরোধের জড়িয়ে পড়ার পর তুর্কি নৌবাহিনী সেখানেও টহলে রয়েছে। তুরস্ক কোথায় নিজের পেশীশক্তির বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং কেন, তা এই প্রতিবেদনের তুলে ধরা হয়েছে।
লিবিয়া : তুরস্ক লিবিয়াতে জাতিসঙ্ঘ অনুমোদিত প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ আল-সারাজের সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য সারাজের প্রতিপক্ষ রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত খলিফা হাফতারকে পরাজিত করতে সেনা, নৌ ও স্থলবাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র ড্রোন পাঠিয়েছিল। এবং এর পরিবর্তে, সারাজ সরকার পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তুরস্কের দাবিকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে একটি বিতর্কিত সমুদ্র চুক্তিতে লিবিয়ার সমর্থন জিতে নেয়, যেখানে গ্রিসের সাথে তার সীমানা বিরোধ রয়েছে।
সিরিয়া : তুরস্কের অভ্যন্তরীণ কুর্দি অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যুদ্ধরত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি-পিকেকে’র সাথে জড়িত ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এরদোগান ২০১৬ সালে সিরিয়ায় সেনা পাঠান।
ইরাক : তুরস্ক ব্রিটিশ এবং মার্কিন ক‚টনীতিকদের মধ্যস্থতায় এঅঞ্চলে প্রতিদ্ব›দ্বী কুর্দি দলগুলির মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার লক্ষ্যে ১৯৯০-এর দশকে শান্তিরক্ষা মিশনের গড়ে তোলা সামরিক ঘাঁটিগুলির দখল বজায় রেখেছে। চলতি ডিসেম্বরে তুরস্কের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরাক বিরোধিতা কাটিয়ে পিকেকের বিরুদ্ধে সমর্থন দিয়েছে, যা এখন ইরাকি কুর্দি বাহিনীকে টার্গেটে পরিণত করেছে।
কাতার : সউদী আরবের নেতৃত্বাধীন একটি আঞ্চলিক জোটের সাথে গ্যাস সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশ কাতারের মনোমালিন্যের পর তুরস্ক ২০১৭ সাল থেকে কাতারে একটি অবিচ্ছিন্ন ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে তুরস্ক ও কাতারের অভিন্ন সমর্থন তাদের এমন একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে একত্রিত করেছে, যা সউদী এবং অন্যান্য বেশিরভাগ উপসাগরীয় রাজতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
আজারবাইজান : মস্কোর মিত্র আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানের বিজয়ে তুরস্ক সহায়তা করেছে। তুরস্কের সামরিক বাহিনীর আজারবাইজানের একটি সেনা ঘাঁটিতে উপস্থিতির এবং সেখানে একটি বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশাধিকার রয়েছে। তুরস্ক দেশটিকে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং বৈদ্যুতিক সমরাস্ত্র সহ নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করে আসছে।
সোমালিয়া : ২০১৭ সালে তুরস্ক মোগাদিশুতে তার বৃহত্তম বিদেশী ঘাঁটি খুলেছে। কয়েক দশকের গোত্র যুদ্ধ এবং আল-শাবাব বাহিনী দ্বারা বিধ্বস্ত দেশটিকে পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য সেখানে কয়েক শ’ তুর্কি সেনা বিস্তৃত তুর্কি পরিকল্পনার আওতায় সোমালিয়ার সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তুরস্ক হর্ন অফ আফ্রিকার দেশটিতে আধিপত্য বিন্তার করে চলেছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের পাশাপাশি প্রতিরক্ষার মতো পরিষেবাগুলি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। ২০১৫ সালে এরদোগান সোমালিয়ায় ১০ হাজার নতুন বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রæতি দেন এবং দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও শিল্প চুক্তিগুলিও স্বাক্ষরিত হয়। এবং এবছর এরদোগান জানান যে, সোমালিয়ার উপক‚লে তেল অনুসন্ধানে অংশ নেওয়ার জন্য দেশটি তুরস্ককে প্রস্তাব দিয়েছে।
সাইপ্রাস : দ্বীপ রাষ্ট্রটির জলসীমায় সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য তুরস্কের দাবিকৃত উত্তর নিকোশিয়া এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাইপ্রিয় সরকার উভয়ই লাইসেন্স অনুমোদন করায় দু’ পক্ষে মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং তারা অঞ্চলটিতে নিজেদের অবস্থান জোরদার করেছে।
গ্রীস : গ্রিসের সাথে বিরোধের জের ধরে এজিয়ান ও ভ‚মধ্যসাগরীয় সমুদ্রসীমাতেও অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক। উভয় দেশই দাবি করেছে যে, তুরস্কের দক্ষিণের সমুদ্রাঞ্চল তাদের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলির অংশ, যেখানে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তলোনের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে।
আফগানিস্তান : ন্যাটো নেতৃত্বাধীন জোটের ৫০ টিরও বেশি দেশের একটি জোটের অংশ হিসাবে তুরস্কের সেনা আফগানিস্তানেও অবস্থান করছে, যারা তালেবানদের বিরুদ্ধে আফগান সুরক্ষা বাহিনীকে সমর্থন করছে। উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থাতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে তুরস্ক দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী হিসেবে রয়েছে।
কোসোভো ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনা : তুর্কি সামরিক বাহিনী ১৯৯০-এর দশকের যুদ্ধের পর থেকে কোসোভো এবং বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় তুর্কি সম্প্রদায়কে রক্ষার বিশেষ আগ্রহ নিয়ে দেশটি ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে।
সুদান : উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং দেশটির সাথে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন চুক্তি করেছে তুরস্ক। বিনিময়ে সুদান তুরস্ককে ৯৯ বছরের জন্য সুকিন দ্বীপের ইজারা দিতে সম্মত হয়, যা আঙ্কারাকে একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে শাসিত দ্বীপটিতে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার এবং লোহিত সাগরে তার আধিপত্য সম্প্রসারণ করার পথ আরো প্রশস্ত করে দিয়েছে।
তিউনিসিয়া ও মরক্কো : আফ্রিকার ওপর নীতিগত কৌশলের অংশ হিসাবে পশ্চিমের মুসলিম দেশগুলির সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে তুরস্ক। হেগের ক্লিঙ্গেনডায়েল ইনস্টিটিউটের জালেল হারশাউই জানিয়েছেন, ‘তিউনিশিয়া সীমান্তে তুরস্কের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি, একটি নৌঘাঁটি এবং সিরিয়ান ভাড়াটে সৈনিকদের একটি আবাসিক শিবির রয়েছে।’
আলজেরিয়া ও আলজিয়ার্স: তুরস্ক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আলজিয়ার্সে অটোম্যান যুগের কেতশাওয়া মসজিদটি সংস্কারে সহায়তা করেছে এবং পশ্চিম মুসলিমাঞ্চলে ‘মেড ইন তুরস্ক’ পণ্যের তুর্কি আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তুরস্ক আলজেরিয়ান পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে এবং দুই দেশের বাণিজ্য প্রতি বছর ৫শ’ কোটি ডলার বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ পিয়ের ভার্মেরেন বলেছেন যে, ‘পশ্চিম মুসলিমাঞ্চলে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এরদোগানের নব্য-অটোমান এবং প্যান-ইসলামিক বৈদেশিক নীতি কৌশলের ফলাফল।’ তিনি বলেন, ‘উত্তর আফ্রিকার করোনা সংক্রমিত বেকারত্ব কবলিত ক্রমবর্ধমান যুবসমাজে এরদোগান ব্যাপক সমীহ অর্জন করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নিজেকে মিসরের জামাল আবদেল নাসেরের মতো ‘ইউরোপের সমালোচনাকারী এবং মুসলমানদের ক্রানকর্তা’ হিসাবে উপস্থাপনকারী একজন ঐতিহ্যবাহী ভ‚মধ্যসাগরীয় নেতা হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। বর্তমানে মুসলিম যুবসমাজের একটি বিশাল অংশ এ তুর্কি উদাহরণকে স্বাধীনতার মডেল হিসেবে বিবেচনা করে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, ইন্টারনেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।