Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে সুভাষকে নিয়ে রাজনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:২৩ পিএম

স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর এবার সুভাষচন্দ্র বসু। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের টানাপোড়েনের একটা অধ্যায় হয়ে উঠেছেন বাংলার মনীষীরা। এবার ভোটের আগে বাংলার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়কের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর আয়োজনে সমান উদ্যোগী কেন্দ্র ও রাজ্য।

সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালনে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচি নির্ধারণে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে, যার মাথায় রয়েছেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্র নেতাজির জন্মদিনকে এবার কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একথা জানিয়ে বাংলায় টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “নেতাজি সুভাষের সাহস সুবিদিত। তিনি একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত, সৈনিক, শ্রেষ্ঠ জননেতা। তার ১২৫তম জন্মজয়ন্তী আমরা শীঘ্রই উদযাপন করতে চলেছি। আসুন, আমরা সকলে মিলে এটিকে সাড়ম্বরে উদযাপন করি।” এই কমিটিতে রয়েছেন নেতাজি বিশেষজ্ঞ, ইতিহাসবিদ, লেখক ছাড়াও নেতাজির পরিবারের সদস্যরা। শুধু ভারত নয়, সুভাষচন্দ্রের অবদান তুলে ধরতে নানা কর্মসূচি পালিত হবে বিদেশেও।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন বিশেষজ্ঞদের কমিটি। নিজেই হয়েছেন কমিটির চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কবি শঙ্খ ঘোষ, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান। চলবে এক বছর ধরে। শুধু রাজ্যস্তরে নয়, তৃণমূল স্তরে নেতাজি স্মরণের উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, এই দিনটিতে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হোক। এমনকি নেতাজির স্মৃতির সঙ্গে জুড়তে মাঝেরহাট ব্রিজের নাম পাল্টে করা হয়েছে ‘জয় হিন্দ’ সেতু।

নেতাজি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতাজিকে নিয়ে প্রতি বছরই আলাদা কর্মসূচি নেয়। শতবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করতে বামফ্রন্টের শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লক একটি সর্বদলীয় সভা আহ্বান করেছে ২৯ ডিসেম্বর।কলকাতার এই সভায় বাম নেতৃত্বের পাশাপাশি ডাকা হয়েছে তৃণমূলকেও। সভায় থাকার কথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। ব্লকের পক্ষ থেকে নকশালপন্থী দল ও কংগ্রেসকেও সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন, নেতাজির নামে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। আগের দাবি স্মরণ করিয়ে বলেছেন, ২৩ জানুয়ারি ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। প্রথম সারির সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কেন বিজেপিকে ডাকা হয়নি? ডয়চে ভেলেকে দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “সুভাষচন্দ্রের মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত হচ্ছে বিজেপি। তারা হিন্দুত্বের নামে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করে। সুভাষ ধর্মের বিরোধী ছিলেন না। কিন্তু তিনি রাজনীতিতে, দেশ পরিচালনায়, প্রশাসনে ধর্মকে স্থান দেননি। আজকের বিজেপি সরকার এই কথায় বিশ্বাস করে না। তাই তাদের আমরা আমন্ত্রণ করতে পারি না।”

এরই সঙ্গে বড় যে প্রশ্নটি উঠছে, তার কেন্দ্রেও রয়েছে রাজনীতি। নেতাজির জন্মশতবর্ষ পালনে বিজেপি ও তৃণমূলের সক্রিয়তা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে, এমনটা মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিজেপিকে ঘিরে। যদিও এনডিএ সরকার নেতাজি সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ্যে এনেছিল বহু বছর পর। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠছে, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষের মতো বাঙালির আবেগ কাছে টানার জন্যই কি নেতাজি নিয়ে এতটা তৎপর গেরুয়া শিবির? অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসুর বক্তব্য, "ভোটের জন্যই নেতাজি এবার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। গোবলয়ের দল হিসেবে বিজেপির যে পরিচিতি, সেটা মুছতেই বিজেপির এই উদ্যোগ। তৃণমূল, বাম বা বাংলা কংগ্রেসের থেকেও গেরুয়া শিবির যে কোনো অংশেই কম বাঙালি নয়, সেটা বোঝাতেই নেতাজিকে নিয়ে এই তৎপরতা।”

মূলত পশ্চিমবঙ্গের দল হিসেবে তৃণমূলের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ স্বাভাবিক। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি নেতাজিকে হাতিয়ার করে যেভাবে বাঙালির আবেগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাতে ব্রেক কষতে অতিসক্রিয় হয়ে উঠছে তৃণমূল। তাই রবীন্দ্রনাথের মতোই নেতাজিকে কেন্দ্র করে দুই শিবিরের টানাপোড়েন তুঙ্গে উঠতে পারে জানুয়ারিতে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ