পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক লম্বা হতে হতে রাজনীতিকে স্পর্শ করেছে। একে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করা হচ্ছে। নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর পারঙ্গমতা আমাদের অসাধারণ। এ ক্ষেত্রেও আমরা তার প্রমাণ দিচ্ছি। বিষয়টি মোটেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সরকার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করতে চায়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে দ্বিমত প্রকাশ করেন আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখগণ। তারা বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ ইসলামসম্মত নয়। তাদের এ মতামতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন সরকারি দলের কিছু নেতা ও দলীয় সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। জবাবে তারা যা বলেন, তার সারকথা হলো: ইসলামে মূর্তির ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকলেও ভাস্কর্যের ব্যাপারে নেই। ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। ভাস্কর্য মূর্তি নয় শিল্পকর্ম। ইসলামে যদি ভাস্কর্য নির্মাণ নিষিদ্ধই হতো, তাহলে মুসলিম দেশগুলোতে ভাস্কর্য দেখা যেত না।
আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের অভিমত দেন, যেহেতু বিষয়টি ধর্মীয়। এ ব্যাপারে কথা বলার তারাই অধিকতর উপযুক্ত। অতঃপর দেশবরেণ্য কিছু আলেম একটি যৌথ বিবৃতি দেন। তারা বলেন, ভাস্কর্য বা মূর্তি যাই বলা হোক না কেন, যে কোনো উদ্দেশ্যেই তা তৈরি করা হোক না কেন, ইসলামে তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমন কি কোনো মহৎ ব্যক্তি বা নেতার ভাস্কর্য বা মূর্তি স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানোও শরীয়তসম্মত নয়।
এরপর থেকে আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। তাদের প্রতি লাগাতার বাক্যবাণ নিক্ষিপ্ত হচ্ছে, হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের স্বাধীনতাবিরোধী, নব্য রাজাকার, তালিবান ইত্যাদি অভিধায় চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের মাঠে নামার ডাক দেয়া হচ্ছে, ফাইনাল রাউন্ড লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছোড়া হচ্ছে। অথচ, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ না সরকার বিরোধী, না বঙ্গবন্ধুবিরোধী। সরকারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি রয়েছে আগাধ শ্রদ্ধা। তাদের স্বাধীনতাবিরোধী, নব্য রাজাকার, তালিবান ইত্যাদি বলা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং চরমভাবে তাদের হেয়প্রতিপন্ন করার শামিল। আলেম-ওলামা ও পীর মাশায়েখদের এভাবে রাজনীতির শিকারে পরিণত করা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না। তাদের দায়িত্ব তারা পালন করেছেন। ইসলামের নির্দেশনা তারা বলে দিয়েছেন। এটা মানা, না মানা সরকারের এখতিয়ার।
যারা ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে পার্থক্য করেন তারা সঠিক করেন না। ভাস্কর্যকে শিল্পের সঙ্গে আর মূর্তিকে পূজার সঙ্গে মেলানো হয়। যারা মানুষের বা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, তাদেরকে ভাস্কর হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর যারা দেব-দেবীর মূর্তি ও প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ করেন, তাদের বলা হয় শিল্পী বা প্রতিমা শিল্পী। প্রকৃতপক্ষে ভাস্কর ও শিল্পী বা প্রতিমা শিল্পীর মধ্যে কোনো ফারাক নেই। লেনিনের ভাস্কর্য যখন ভেঙ্গে ফেলা হয়, তখন খবর প্রকাশিত হয়, এই বলে যে, ‘লেনিনের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভাস্কর্যকে মূর্তিই বলা হয়। পূজার জন্যই হোক, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যই হোক কিংবা হোক সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য, ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাণ ইসলাম সমর্থন করে না। মূর্তিকে যারা ভাস্কর্য বলে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখাতে চাইছেন, হয় তাদের জানা-শোনার ঘাটতি আছে, না হয় জানা-শোনা সত্ত্বেও তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করছেন।
পবিত্র কোরআনের সূরা নূহের ২৩তম আয়াতে বলা হয়েছে: তারা বলল, তোমরা কিছুতেই নিজেদের উপাস্যকে ত্যাগ করবে না, ছাড়বে না, ওয়াদ্দাআ এবং সুউওয়াকে, ইয়াগুছো, ইয়াউকা, নাসারাকেও নয়। এই আয়াতে যে পাঁচটি মূর্তির কথা বলা হয়েছে, হজরত নূহ (আ.) এর সময় তার সম্প্রদায় তাদের পূজার যোগ্য ভাবত। হজরত নূহ (আ.) সারাজীবন চেষ্টা করেও তাদের ফেরাতে ব্যর্থ হন। হাদিসে আছে, তারা হজরত নূহ (আ.) এর সম্প্রদায়ের আগেই গত হন। তারা পুণ্যত্মা ব্যক্তি ছিলেন। তাদের ইন্তেকাল হয়ে গেলে শয়তান লোকদের এই মর্মে প্ররোচনা দেয় যে, এসব বুযুর্গ ব্যক্তি যে সব স্থানে ইবাদত করতেন, সেসব স্থানে তাদের মূর্তি তৈরি করে দাঁড় করিয়ে দাও এবং তাদের নামে নামকরণ কর। লোকেরা তা-ই করল। এরপর যখন মূর্তিনির্মাতারা মারা গেল এবং যুগপরম্পরা যখন অতিক্রান্ত হলো, তখন লোকেরা ওই সব মূর্তির পূজা শুরু করে দিল। বলাবাহুল্য, এই হলো মূর্তিপূজার শুরু। অর্থাৎ পূণ্যাত্মা ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে মূর্তি তৈরি ও স্থাপন এবং পরবর্তীতে তাদের পূজা-অর্চনা। বস্তুত অভিশপ্ত শয়তানই মূর্তিপূজার উদ্ভাবক ও প্রতিষ্ঠাতা।
ভাস্কর্য, মূর্তি বা প্রতিকৃতি নিষিদ্ধ হওয়ার প্রধান কারণ, এটা তৌহিদী বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং পৌত্তলিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত। পৌত্তলিকরা ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাণ করে তাকে শ্রদ্ধা-ভক্তি জানায় কিংবা আরাধনা করে। এটা নিশ্চিত শিরক। আর শিরকের চেয়ে বড় কোনো গুনাহ নেই। শিরককারীদের গোনাহ আল্লাহ কখনই মার্জনা করবেন না। তৌহিদী আকিদার প্রতি ইসলাম অনমনীয়। এ কারণে পৌত্তলিকতার ধারে-কাছে যাওয়াও নিষেধ করা হয়েছে। ভাস্কর্য বা মূর্তিকে কীভাবে প্রথমে শ্রদ্ধার এবং পরে পূজা-অর্চনার বস্তুতে পরিণত করা হয়, ওয়াদ্দাআ সুউওয়াক, ইয়াগুছা, ইয়াউকা ও নাসারার আরাধ্যে পরিণত হওয়ার ঘটনা তার প্রমাণ।
ভাস্কর্য, মূর্তি, প্রতিকৃতি নিষিদ্ধ হওয়ার আর একটি কারণ হলো, এসব যারা তৈরি বা নির্মাণ করে তাদের মধ্যে এক ধরনের অহংকার সৃষ্টি হয় যে, তারা জীবন্ত সত্ত্বার মতোই তা তৈরি করেছেন, যা আদৌ সঠিক নয়। এদের সম্পর্কে একটি হাদিসে রাসুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে সব লোক এসব তৈরি করে, কেয়ামতের দিন তাদের আজাব দেয়া হবে এবং বলা হবে, তোমরা যা কিছু সৃষ্টি করেছিলে তা জীবন্ত করে দাও। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে: আল্লাহপাক বলেছিলেন: যে আমার ন্যায় সৃষ্টিকর্ম করতে চায়, তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে হতে পারে?
অনেক সময় ছবি, ভাস্কর্য, মূর্তি, প্রতিকৃতি বিত্তবানরা তাদের সখ, জৌলস, বৈভব এবং শিল্পপ্রিয়তা প্রকাশের জন্য বাড়িঘরে, আঙিনায় স্থাপন করে। কোনোরূপ বিলাস-ব্যাসন ও অপচয় ইসলাম পছন্দ করে না। সুতরাং এ সবের বৈধতার প্রশ্ন ওঠে না। ইসলাম কোনো ব্যক্তিকে, তা তিনি যতই সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হোন না কেন, মাত্রাতিরিক্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছে। মহানবী (সা.) প্রশংসার বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তার নিজের ব্যাপারে তিনি বলেছেন: তোমরা প্রশংসার অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি করো না, যেমন করে খ্রিস্টানরা ঈসা ইবনে মরিয়মের সীমালংঘনমূলক প্রশংসা করেছে। তোমরা বরং আমাকে বলবে, আল্লাহর দাস ও তাঁর রাসুল। আল্লাহপাকের কাছে তিনি সব সময় এ বলে দোয়া করতেন যে, হে আল্লাহ, আমার কবরকে তুমি পূজ্যমূর্তি হতে দিও না।
ভাস্কর্য বা মূর্তি শিরক বা পৌত্তলিকতার দিকে টেনে নিয়ে যায় বলে তা নির্মাণ বা স্থাপন নিষিদ্ধ। যারা বলেন, মুসলিম দেশগুলোতে তো বহু ভাস্কর্য রয়েছে; সে সব ভাস্কর্য রাষ্ট্রনায়ক ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের। কামাল আতাতুর্ক, জামাল আবদুন নাসের, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রমুখ রাষ্ট্রনায়ক এবং আল্লামা ইকবাল, রুমি, ফেরদৌসী, শেখ সাদী প্রমুখের ভাস্কর্য বিদ্যমান রয়েছে। যদি ভাস্কর্য নিষিদ্ধই হয়, তবে সে সব দেশে ভাস্কর্য থাকে কী করে? তাদের এ বক্তব্যের জবাবে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, কোনো মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে বলেই এটা ভাবা সঙ্গত নয় যে, ইসলাম তা অনুমোদন করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিস কী বলে সেটাই বিবেচ্য। পবিত্র কোরআনের সুরা হজের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: তোমরা পরিহার করো অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার করো মিথ্যাকথন। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের সময় ঘোষণা দেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মদ, মূর্তি, শূকর ও মৃত প্রাণী বিক্রি হারাম করেছেন। অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখতে, মূর্তিসমূহ ভেঙে ফেলতে, এক আল্লাহর ইবাদত করতে এবং আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করার বিধান দিয়ে। উল্লেখ করা যেতে পারে, মক্কা বিজয়ের সময় রাসুল্লাহ (সা.) কাবাঘরে ও আশপাশে রক্ষিত ৩৬০টি মূর্তি অপসারণ করেন। তিনি কেবল পূজ্যমূর্তিই অপসারণ করেন নাই, হজরত ইব্রাহিম ও হজরত ইসমাইল (আ.) এর কথিত মূর্তিও অপসারণ করেন।
মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তার পিতা আজর স্বয়ং ছিলেন মূর্তিপূজক ও রাজপুরোহিত। তিনি মূর্তি ভেঙেছিলেন এবং মূর্তিপূজার স্থলে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি তার শহরকে নিরাপদ করার, তাকে ও তার পুত্রদের মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে প্রার্থনা করেন। তিনি একই সঙ্গে উল্লেখ করেন, এই মূর্তিরাহু অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মূর্তি-ভাস্কর্যের রাহু এখনো মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এ কারণেই আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ ভাস্কর্য নির্মাণ ও স্থাপনের বিরোধিতা করছেন। যারা এই বিরোধিতাকে মৌলবাদের প্রকাশ, ধর্মনিরপেক্ষতার খেলাপ ইত্যাদি বলছেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া আবশ্যক যে, বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের প্রার্থনালয়ে তাদের পূজ্য দেবদেবীর মূর্তি আছে এবং তারা তাদের পূজা-অর্চনা করে থাকেন নিয়মিত। সে ব্যাপারে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখের কোনো বক্তব্য নেই। যার যার ধর্ম তার তার। এ ব্যাপারে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি করার অধিকার কোনো মুসলমানকে দেয়নি ইসলাম। আমাদের সংবিধানেও প্রত্যেকের স্বাধীন ও নির্বিবাধে স্বধর্ম পালনের অধিকার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান শত শত বছর ধরে এ দেশে শান্তি-সদ্ভাবের সঙ্গে সহমর্মী ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করছে। এই যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, তার মূলে রয়েছে ইসলামের আদর্শ ও মুসলমানদের ঔদার্য। কাজেই, ভাস্কর্যের ব্যাপারে বিরোধিতা বা ভিন্নমত প্রকাশের কারণে ধর্মনিপেক্ষতার হানি ঘটল, সম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটল কিংবা মৌলবাদের উত্থান ঘটল বলে উদ্বেগ প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই।
আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ তাই বলেছেন, যা ইসলামসম্মত। এখানে তাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এই নির্দোষ বিষয়টিকে যারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাইছেন তারাই আসলে এ নিয়ে রাজনীতি করছেন। এই সূত্র ধরে তারা আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের প্রতি কূটবাক্য করছেন। এটা করে তারা তাদের মধ্যে রক্ষিত ইসলামবিদ্বেষই প্রকাশ করছেন। বলা হচ্ছে, তারা নাকি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। তাই তারা ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছেন। এটা ঠিক নয়। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রক্রিয়াটির বিরোধিতা করছেন, তা শরীয়তসম্মত নয় বলে। তারা শ্রদ্ধা জানানোর ইসলামি পদ্ধতি খুঁজে বের করার তাকিদ দিয়েছেন। তাদের তরফে একাধিক প্রস্তাবও এসেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এটি হ্যান্ডেল করছেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি যখন প্রধানমন্ত্রী দেখছেন, তখন আর আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও অসম্মানজনক কথাবার্তা কেন? ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকজন বিশিষ্ট আলেমের বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান হয়ে যাবে। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।
কিন্তু কথা বলা চলছেই। উসকানি দেয়া হচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে ভাঙা রেকর্ডও বাজানো হচ্ছে। এমনকি ইন্ধনও যোগানো হচ্ছে। একটি ভারতীয় পত্রিকায় সম্প্রতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নাকি ইসলামী চরমপন্থার পুনরুত্থান দেখা দিয়েছে। এতে ভারত অতিশয় উদ্বিগ্ন। ভারতের এ উদ্বেগ বাংলাদেশে সঞ্চারিত হোক, ইসলাম বিরোধী একটা ঢেউ সৃষ্টি হোক, খবরটির এমন উদ্দেশ্য থাকা বিচিত্র নয়। এর মধ্যেই কিছু আলামত লক্ষ করা গেছে বৈকি! ইসলামী চরমপন্থার ‘সাক্ষ্য’ হিসাবে ভাস্কর্য ভাঙার তিনটি ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটেছে। কারা এসব করছে, সেটা নিশ্চিত হওয়ার আগেই আঙুল তোলা হচ্ছে তথাকথিত ইসলামী চরমপন্থীদের দিকেই। সরকারের উচিত দ্রুত এ ঘটনাগুলোর তদন্ত করে আসল রহস্য উন্মোচন করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের তরফে স্পষ্টই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা ভাস্কর্য ও মূর্তি সম্পর্কে শরীয়তসম্মত নির্দেশনা জানিয়েছেন মাত্র। তারা তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। তারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার বিরোধী। সেক্ষেত্রে যারা আইন হাতে তুলে নেয়ার কাজটি করেছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে। কোনো কুচক্রী মহল যাতে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।