Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কেন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলো?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইসরাইলের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্থ্াপনকারী আরব দেশগুলোর তালিকায় মরোক্কো সর্বশেষ সংযোজন। পশ্চিম সাহারার বিতর্কিত অঞ্চল, এমনকি জাতিসংঘ যেটিকে মরোক্কোর অংশ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, সেটির ওপর মরক্কোকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতির বিনিময়ে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। এছাড়াও, ইসরাইলকে জনসমক্ষে গ্রহণের অতিরিক্ত পুরস্কার হিসেবে মরক্কোর কাছে কমপক্ষে ৪টি অত্যাধুনিক বড় ড্রোন বিক্রির বিষয়ও বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক পুনর্মিলনের মাধ্যমে এই পর্বটির সূচনা ঘটে। আমিরাত-ইসরাইলি সম্পর্ক সম্ভবত কয়েক দশক ধরে প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তিসহ একাধিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুসারে ইসরাইলকে গাজার পশ্চিম তীরের কিছু অংশ পাইয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা স্থগিতের বিনিময়ে আবুধাবি ইসরালের সাথে প্রকাশ্য সম্পর্কে যেতে সম্মত হয়। আমিরাতের কাছে ট্রাম্প প্রশাসনের এফ-৩৫ বিমানের বিক্রয় (যদিও এক্ষেত্রে কংগ্রেসের চুক্তির প্রয়োজন) অনুমোদনের সাথে সাথে প্রকৃত ঘটনাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেখানে এ অঞ্চলে আমিরাতের সামরিক ক্ষমতা এবং আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্খা উন্মোচিত হয়।

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর সুন্নি শাসন কায়েম করা বাহরাইনও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে। এর বিনিময়ে প্রতিবেশী ইরান, যাকে বাহরাইন তার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলনকারী শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রাথমিক বহিরাগত সমর্থক হিসাবে দেখছে, তার বিরুদ্ধে ইসরাইল ও আমেরিকা উভয়ের কাছ থেকে নিরাপত্তা কিনেছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের দ্ব›দ্বগুলোর বিষয়ে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান সামরিক নিষ্ক্রিয়তার আলোকে, উপসাগরীয় শেখরা ক্রমেই ইসরাইলকে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের রক্ষাকারী হিসাবে দেখতে শুরু করেছে।

বাহরাইনি ও আমিরাতী পদক্ষেপে নিরবে উৎসাহিত সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উপস্থিতিতে নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাত করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে ইরানকে প্রাথমিক হুমকি বিবেচনা করে উভয় দেশই তাদের নিরাপত্তার জন্য জনসমক্ষে ইসরাইলি সমন্বয় সাধন চালাচ্ছে। দুটি কারণ সউদীকে এ সিদ্ধান্তে উদ্বুদ্ধ করে। প্রথমটি ছিল, ইরানকে ইঙ্গিত দেয়া যে, রিয়াদ তেহরানের সাথে ভবিষ্যতের শোডাউনে একা থাকবে না, এমনকি যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে কোনও বিরোধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। দ্বিতীয়ত, এমবিএস মার্কিন কংগ্রেসকে খুশি করতে চেয়েছিলেন, যাদের ইসরাইলের পক্ষে বিপুল সমর্থন রয়েছে এবং যারা সাংবাদিক জামাল খাশোগির নির্মম হত্যাকান্ডের পর থেকে তার ওপর নাখোশ।

ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া সুদানের জন্য বিপরীতধর্মী সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ দেশটিকে ইরানের বন্ধু বলে মনে করা হতো। ইয়েমেনের যুদ্ধে হুথিদের বিরুদ্ধে সউদী-আমিরাতের সাথে যোগ দিতে খার্তুমের অস্বীকৃতিতে ধারণা করা হয়েছিল যে, দেশটি ইরানের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। তবে, ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-সমর্থক রাষ্ট্রগুলোর তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিনিময়ে সুদান তার নীতি পরিবর্তন করে, যাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য এবং সম্পর্ক স্থাপন সুদানের জন্য সহজতর হয়ে ওঠে।
একের পর এক ৪টি আরব রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ইসরাইলের সাফল্য ইঙ্গিত দেয় যে, ফিলিস্তিন ইস্যু আরব শাসকদের কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে বিক্রি করে দেয়ার বিষয়টি তাদের শাসনের বৈধতার উপর প্রভাব ফেলবে না। বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের প্রতি বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের বৈরিতা দেশগুলোর ইসরাইলের সাথে ক‚টনৈতিক সংযোগ স্থাপন এবং প্রকাশ্য প্রতিরক্ষা সম্পর্ক শক্তিশালীকরণের পিছনে একটি প্রধান কারণ।

ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রকাশ্য অভিপ্রায় বাস্তবে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সউদী আরব ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে তেল সম্পদ এবং ২টি পবিত্রতম ইসলামী ভ‚মির রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে সউদী আরবের ইসরাইলকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি ইসরাইলের পক্ষে জনসংযোগের একটি বড় সাফল্য হবে এবং ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বাইডেনের প্রচেষ্টা নেতানিয়াহুর বিরোধিতাকে আরও জোরদার করে তুলবে। কারণ, পরাক্রমশালী ইরানের প্রতি সদয় হওয়ার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে কাজ করার চেয়ে ইসরাইল ও সউদী আরব সমর্থিত সমন্বিত জোট বাইডেনের ওয়াশিংটনে বেশি ওজনদার হয়ে উঠবে। সূত্র : দ্য স্ট্র্যাটেজিস্ট।



 

Show all comments
  • Mehedi Hasan ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:২৪ এএম says : 0
    আমার মনে হচ্ছে পার্থিব লাভের জন্যই তারা এটা করেছে
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    শিয়া-সুন্নি বিভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মারিয়া ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
    কোন প্রকৃত মুসলমান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে পারে না
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি তাদেরকে হেদায়েত দান করো
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    এদের নিয়ে কিছু বলতেও আমার রুচিতে বাধে
    Total Reply(0) Reply
  • Mihir ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:১৫ এএম says : 0
    মানুষের সুস্থ বিবেক বুদ্ধি লোপ পেলেই কেবল এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • Mihir ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:১৫ এএম says : 0
    মানুষের সুস্থ বিবেক বুদ্ধি লোপ পেলেই কেবল এসব সিদ্ধান্ত নিতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • sadman ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৯ এএম says : 0
    ক্ষমতা ধরে রাখার জন‍্য রাজতন্ত্রী আরব শাসকদের স্বপ্ন পূরণে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের অংশ। এক্ষেত্রে গোপনে ও প্রকাশ‍্যে সৌদি মোনাফিকি অন‍্যতম।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:২২ পিএম says : 0
    When muslim used to rule the world by the Law of Allah then they become super power not only the were best in science and technology. When muslim deviated from Qur'an and Sunnah and created so many division then All the Kafir's occupied muslim land imposed their kafir Law [Democracy]. Democracy is the Religion of Kafir, What Allah and His Rasul made harram, democracy made Halal: I.E. Riba, singing, music, movies, drama, dancing, free mixing men and women, falling love before marriage and committing illegal sexual intercourse, co-education, man don't keep beard, man wearing tight cloth, men wearing cloth reaching below the Ankle, women wearing indecent clothing [Wester dress], only few women wear Hijab, night club, selling and consuming Alcohol and may more harram things.
    Total Reply(0) Reply
  • শাওন ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১৫ পিএম says : 0
    অামরা মুসলিম হিসেবে নয় একজন মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিনের ওপর নিযার্তনকারীদের কখনো সমথর্ন করবো না। পশ্চিমা বিশ্বে নানা ষড়যন্ত্র করে ইসলামকে ধ্বংশ করতে চাচ্চে।অাল্লাহর কসম,অাল্লাহর গজব শ্রীঘই অপেক্ষা করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ENGG. M. SHOHIDUL ISLAM ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:২৪ এএম says : 0
    সুন্নি শাশকরা খাঁটি মুসলিম হয়েও ফিলিস্তিন এর নির্যাতিত মানুষের পক্ষে না থেকে ইসরাইল এর পক্ষে চলে যাচ্ছে। আর ইরান শিয়া হয়েও ফিলিস্তিন কে সহযোগিতা করছে। এখনতো মনে হচ্ছে শিয়ারা সুন্নিদের চাইতে বেশি মানবিকতা সম্পন্ন।
    Total Reply(0) Reply
  • md alfaz uddin ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:১৫ পিএম says : 0
    allah destroy ... salman ruler of KSA 2nd baster cici of egypt, domestic dog of morocco ruler,bastard ruler of UAE after all aaamerica & bastard tribe israel-Ameen.......................summa AAmeen....................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ