পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে মহাজোটের শরিক ও মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর। বামপন্থি ও ডানপন্থি উভয় দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে, যা ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ডকে। গত জাতীয় নির্বাচনের আসন বণ্টন, নির্বাচনে জয়ের পর মন্ত্রিসভায় শরিক দলের কোনো নেতাকে না রাখা নিয়ে টানাপড়েন চলে আসছে। সে সময় শরিকদের বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালনের প্রস্তাব দেয়া হলে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ। এছাড়া মহাজোটে ইসলামি দলের অন্তর্ভুক্তি ও বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের সখ্যতার কারণে ক্ষুব্ধ শরিকরা। আর ১৪ দলীয় জোটের নিষ্ক্রিয়তার কারণে নেতারা জোটের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকবার।
এদিকে ছোট ছোট কয়েকটি ইসলামী দল ও অনেকগুলো নামসর্বস্ব দল গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জোট শরিক হবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের হতাশ করেছে। আর সরকার কওমী মাদরাসার শিক্ষার স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে হেফাজত ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। সে সময় হেফাজত নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দিয়েছিল। হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের ও বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার ইস্যুতে কওমী আলেমদের সঙ্গে আবারও দূরত্ব বেড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এদিকে হেফাজত ও কওমী আলেমদের সাথে সরকারের দূরত্ব বাড়ায় খুশি আওয়ামী লীগের শরিক বাম দলগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শরীক দলের একজন শীর্ষ নেতা ইনকিলাবকে বলেন, জোটের বাম দল বিশেষ করে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ছোট দলের ভোট কম বলে দীর্ঘদিন ধরে পাত্তা দিচ্ছিল না আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী তকমা কাটিয়ে উঠার জন্য এবং আলেম সমাজের ভোটের আশায় হেফাজত, চরমনাইসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিল। শরিক দলগুলো তখন এর বিরোধিতা করেছিল কারণ হেফাজত বা কট্টর ইসলামি দলগুলো কখনো আওয়ামী লীগের মিত্র হবে না। এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করার মূলনীতি ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন, অসাম্প্রদায়িকতা। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের কথা পাত্তা দেয়নি। এখন তারা বুঝতেছে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর বিরোধী তারা কখনো আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের মিত্র হতে পারে না।
তবে এ বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, দূরত্ব বা টানাপড়েন নয়, যে যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করছেন। প্রত্যেকটি দলের আলাদা আলাদা অবস্থান রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন কৌশল রয়েছে। তাই নিজেদের মতো করে সবাই রাজনীতি করছেন। নেতারা আরো বলেন, যারা আমাদের জোট শরিক তাদের সঙ্গে আদর্শগত মিল রয়েছে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রতির রাষ্ট্র গঠনে ঐকমত্য রয়েছে। এসব মূলনীতিতে আমরা এক জায়গায়।
তারা আরো বলেন, গত নির্বাচনের আসন বণ্টন সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই হয়েছিল। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকার কথা নয়। আর নির্বাচনের দুই বছরের মধ্যে শরিক নেতারা তেমন কিছু প্রকাশ করেননি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইনকিলাবকে বলেন, শরিকদলের সাথে আওয়ামী লীগের কোন দূরত্ব নেই। জোটের বৈঠকে সকল নেতা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন, তাদের কথাও কোনো ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টির কথা উঠে আসেনি। তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোটের মূলনীতি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, মৌলবাদ বিরোধিতার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা। এসব ইস্যুতে শরিকদের মধ্যে কোনো টানাপড়েন নেই।
হেফাজত ইসলামির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের দূরত্ব বাড়ার বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কওমী আলেমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে কোনো অনুষ্ঠানে যেতেই পারেন, তাই বলে হেফাজত আওয়ামী লীগের অংশ হয়ে যায়নি। এছাড়া মূলকথা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন ছাড় নয়। তিনি আরো বলেন, হেফাজতের সাথে সমঝোতা করতে, কিন্তু আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া বা সমঝোতা হবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয় হবে জাতীয় ঐকমত্য, এ ব্যাপারে কারো বিতর্ক করা কাম্য নয়, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, টানাপড়েন বা দূরত্বের কিছু নেই। প্রত্যেকটি দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কৌশল আলাদা। যে যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করেন, বক্তব্য দেন। যদি ভিন্নতা না থাকত তাহলে সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হয়ে যেত, আলাদা দল গঠন করত না। তবে কিছু দল নিয়ে মহাজোট হয়েছে, কেউ আওয়ামী লীগের জোটে না থাকলেও সুসম্পর্ক রাখেন। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, অসাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদবিরোধী মূলনীতিতে ঐকমত্য পোষণ করেন।
এদিকে দূরত্ব বাড়ায় আওয়ামী লীগের কিছু শরিক দল এবং মিত্র দল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আওয়ামী লীগের শরিক দল- সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ, ন্যাপ, ইসলামিক ফ্রন্ট অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।
এছাড়া সরকারের মিত্র জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনের আগে গঠিত জোটে থাকা নামসর্বস্ব ৭০ দলের কোনো অস্তিত্ব নেই এখন। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ও মুফতি রুহুল আমিনের খাদেমুল ইসলামের কর্মকান্ড নেই। ইসলামী ঐক্যজোট (মরহুম নেজামী), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মরহুম হাবিবুর রহমান) ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মান্নান) ও জাকের পার্টির (মোস্তফা আমীর) সঙ্গে আওয়ামী লীগের মিত্র। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে।
সম্মিলিত ইসলামী জোট আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর। এই জোটের শরিক দল ছিল আটটি। এ জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা জাফরুল্লাহ খান দীর্ঘদিন মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৫টি দল নিয়ে সরকারের সমর্থনে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (আইডিএ) নামের জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। এর চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, কো-চেয়ারম্যান ল²ীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল। এই দুজন দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন। এই দলগুলো আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে নির্বাচন করতে চাইলেও সুবিধা করতে পারিনি। এখন সরকারের সাথে দূরত্ব বেড়েছে এবং অস্তিত্ব সংকটেও রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।