পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
চুক্তি মেনে নাগরনো-কারাবাখের শেষ প্রদেশেও পৌঁছে গেল আজারবাইজানের সেনাবাহিনী। টাঙিয়ে দেওয়া হলো দেশটির জাতীয় পতাকা। গত কয়েক দশক ধরে নাগরনো-কারাবাখ দখলে রাখে আর্মেনিয়া। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এটি আজেরি ভ‚খÐ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। দীর্ঘ বিরোধের একপর্যায়ে এ বছরের সেপ্টেম্বরে শেষের দিকে তীব্র লড়াইয়ে দুই পক্ষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয় সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ দুইটি। ডয়চে ভেলে জানায়, চুক্তি অনুসারে মঙ্গলবার নাগরনো-কারাবাখের সর্বশেষ অঞ্চল লাচিন প্রদেশে পৌঁছে যায় আজারি সেনারা। সেখানে আজারবাইজানের পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়। এদিন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নতুন বাস্তবতার সূচনা হলো। এটা উদ্যাপনের সময়। বহু দিন ধরে প্রতীক্ষার পর সাফল্য অর্জন করেছে আজারবাইজান।’ নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সই করা শান্তিচুক্তিতে বলা হয়, নাগরনো-কারাবাখের ম‚ল তিনটি প্রদেশ বা অঞ্চল আগদাম, লাচিন এবং কালবাজার আজারবাইজানের হাতে সমর্পণ করতে হবে আর্মেনিয়াকে। আর্মেনিয়ার সরকার এ চুক্তিতে সই করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে দেশটির জনগণ। তাদের বক্তব্য, এর ফলে সব লাভই আজারবাইজানের হলো। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ানও সে কথা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু চুক্তি বদলের আর কোনো সম্ভাবনা ছিল না। এরপর থেকে আর্মেনিয়াতে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। এমনকি পাশিনিয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টাও হয়। এর মধ্যেই আর্মেনিয়ার এবং নাগরনো-কারাবাখের যোদ্ধারা এলাকা ছাড়তে শুরু করেন। নাগরনো-কারাবাখের ওই তিনটি অঞ্চল ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য আর্মেনিয়াকে সময় বেঁধে দেয় আজারবাইজান। আগদাম এবং কালবাজারে আগেই ঢুকে পড়েছিল আজেরি সেনা। মঙ্গলবার তারা পৌঁছে যায় লাচিনে। তাদের সঙ্গে লাচিনে পৌঁছেছিল রাশিয়ার সেনাও। শান্তিরক্ষায় এই মুহ‚র্তে নাগরনো-কারাবাখে প্রায় দুই হাজার রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে। কৌশলগতভাবে লাচিন গুরুত্বপ‚র্ণ অঞ্চল। লাচিনের রাস্তা নাগরনো-কারাবাখের রাজধানীর সঙ্গে আর্মেনিয়ার যোগাযোগ স্থাপন করে। ফলে লাচিন আজারবাইজানের হাতে থাকার অর্থ, আর্মেনিয়ার সঙ্গে নাগরনো-কারাবাখের সরাসরি যোগাযোগ পথের উপর একটি বড় বাধা। আজারি সেনা এখনো পর্যন্ত নাগরনো-কারাবাখের যে অঞ্চলেই ঢুকেছে সেখানেই দেখেছে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে সেখানকার আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠীর মানুষ পালিয়ে গিয়েছেন। লাচিনেও সেই একই ছবি দেখা গিয়েছে। তবে সেখানে থেকে যাওয়া ৪৮ বছর বয়সী স্থানীয় মুদি দোকানদান জানান, নিজের বাড়ি ছেড়ে যেতে মন চায়নি তার। তাই থেকে গিয়েছেন। এতদিন ধরে তিলে তিলে তৈরি করেছেন দোকান, সংসার। যদি চলে যেতে হয়, তা হলে সব কিছু পুড়িয়ে দিয়ে যাবেন। ডয়চে ভেলে এ খবর জানায়। অপরদিকে, নাগরনো-কারাবাখে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তুরস্ক ও রাশিয়া। আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর ছেড়ে যাওয়া আজারবাইজানি ভ‚খÐে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় নজরদারি করতে একটি যৌথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে আঙ্কারা ও মস্কো এই চুক্তি স¦াক্ষর করে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া-আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার মধ্যে সাক্ষরিত নাগার্নো-কারাবাখ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তুরস্ক ও রাশিয়ার যৌথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। এখন যত দ্রæত সম্ভব এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু করার বিষয়ে কাজ চলছে। বিবৃতিতে যৌথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রযুক্তিগত বিভিন্ন দিক এবং এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তুরস্ক ও রাশিয়ার যৌথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র কিভাবে কাজ করবে তা বিস্তারিত জানায়নি তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ বিষয়ে এর আগে কর্মকর্তাদের দেয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল - এই যৌথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আজারবাইজানে প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাছাড়া এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছিলেন, নাগার্নো-কারাবাখসহ আজারবাইজানের বিভিন্ন এলাকায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি তুরস্কের সামরিক বাহিনী শান্তি ও নিরাপত্তা নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যবেক্ষণ ও তদারকির কাজ করবে। ডয়চে ভেলে, ডেইলি সাবাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।