পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর পানিবদ্ধতা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বহু লেখালেখি হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো টনক নড়েনি, সমস্যা নিরসনের উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে সামান্য ও মাঝরি ধরনের বৃষ্টিতে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত সড়ক ডুবে যাওয়ার দৃশ্য বছরের পর বছর ধরে চলছে। নাগরিকদের দুর্ভোগ ও দুর্দশার সীমা-পরিসীমা বলে কিছু নেই। সীমাহীন এই দুর্ভোগ এবং দুর্ভাগ্য নিয়েই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নির্বিকার চিত্তে বসে থাকে। নগরবাসীর দুর্ভোগ তাদের তেমন বিচলন ঘটায় না। তারা যেন শুষ্ক মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে। উপরন্তু, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা পানিবদ্ধতার জন্য পারস্পরকে দোষারোপ করেই সময় ক্ষেপণ করে। আশার সংবাদ হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালসমূহ সিটি করপোরেশনের নিকট ন্যাস্তকরণ’ সংক্রান্ত এক পরামর্শ সভা শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ হস্তান্তর কোন প্রক্রিয়ায় করা যায়, এ নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক এবং উপসচিবকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে দুই সিটি করপোরেশনের চারজন করে আটজন এবং ওয়াসার চারজন প্রতিনিধিও থাকবেন। কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
যে কাজটি প্রায় ৩০ বছর আগে করা যেত, তা এখন করা হচ্ছে। ১৯৮৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেয়ার কথা থাকলেও তা ওয়াসাকে দেয়া হয়। ওয়াসা যে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তা সকলেরই জানা। সেই থেকে পানিবদ্ধতা নিরসনের ব্যর্থতার দায়ে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে। এ দোষারোপের মধ্যে পড়ে রাজধানীর পানিবদ্ধতার যেমন নিরসন হয়নি, তেমনি নগরিকদের দুর্ভোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, বর্ষা মৌসুমে মাঝারি মানের বৃষ্টি হলেই পুরো রাজধানী পানিবদ্ধতার শিকার হয়। রাজধানী পরিণত হয় বৃহৎ এক জলাশয়ে। কোমর সমান পানি নিয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের যে দুর্ভোগ তা বর্ণনাতীত হয়ে পড়ে। অবশেষে তিন দশক পর যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুঁশ হয়েছে। রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার মধ্যে যে দোষারোপের অপসংস্কৃতি চলে আসছিল, তার একটি সমাধান হতে যাচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেয়া হচ্ছে। এটি নগরবাসীর জন্য সুসংবাদ হলেও দেখার বিষয় হচ্ছে, দুই সিটি করপোরেশন দায়িত্বটি কিভাবে পালন করে এবং তা করতে কতটুকু সামর্থ্যরে পরিচয় দেয়। দায়িত্বটি সিটি করপোরেশনকে দেয়ার পক্ষেই মত জোরালো ছিল। দায়িত্ব ন্যাস্তকরণ সিদ্ধান্তে দুই মেয়রও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা একে যুগান্তকারী বলে অভিহিত করেছেন। আমরাও আশা করি, যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে দুই মেয়র সফল হবেন। রাজধানীর অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত যে অর্ধশত খাল ছিল, যেগুলোর সিংহভাগ অবৈধ দখলে চলে গেছে কিংবা পরিত্যক্ত হয়ে বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, আশা করি, তারা সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। যেসব লেক, ঝিল, পুকুর রয়েছে সেগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবেন। এমনকি রাজধানীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চার নদীর অবৈধ দখলমুক্তকরণ, সেগুলোর নাব্য ফিরিয়ে স্বাভাবিক স্রােতরায় পরিণত করতে জোরালো উদ্যোগ নেবেন। এসব কাজ করা সহজ নয়। তবে সদিচ্ছা এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলে তা করা কঠিনও নয়। ঢাকার মতো চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সিটি করপোরেশনকেও একই দায়িত্ব দেয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব কাজ করতে যথেষ্ট অর্থেরও প্রয়োজন। সরকারকে আবশ্যকীয় অর্থের যোগান দিতে হবে। দায়িত্ব দিলেই হবে না, দায়িত্ব পালনের সামর্থ্যও বাড়াতে হবে। অর্থাভাবে অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজটি যাতে থেমে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
পানিবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আগাম প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। এ কাজে কী ধরনের পরিকল্পনা নেয়া যায়, কত সংখ্যক লোকবল প্রয়োজন ইত্যাদি জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা নগরবিদদের নিয়ে একটি পরামর্শমূলক কমিটি গঠন এবং তাদের পরামর্শ নিতে পারে। পাশাপাশি পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ সেসব লোকজন রয়েছে তাদের সহযোগিতা নিতে পারে। তাদেরও সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে রাজধানী যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তা সম্পর্কে ধারণা নিতে রাজউককে সঙ্গে নিয়ে তার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে পরিকল্পনা নিতে হবে। এতে পানিবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কাজটি সহজ হতে পারে। আমরা আশা করব, দ্ইু সিটি করপোরেশনের ওপর পানিবদ্ধতা নিরসনের যে দায়িত্ব ন্যাস্ত হতে যাচ্ছে, তা তারা যথাযথভাবে করতে বদ্ধপরিকর হবে। আমরা এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনের সাফল্য কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।