মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে করোনা মহামারীর কারণে ভারতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহামারীর প্রকোপ কমে গেলেও ভারতের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব থাকবে অন্তত ২০২৫ সাল অবধি। চলতি দশকের মাঝামাঝি নাগাদ দেশটির অর্থনৈতিক উৎপাদন মহামারীপূর্ব সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ কম থাকবে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্যগুলো জানানো হয়েছে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ প্রিয়াংকা কিশোর বলেছেন, ‘মহামারীর আগে থেকেই ভারতের অর্থনীতি কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। আগামী কয়েক বছরে এ চাপ আরো বাড়তে পারে। আগামী পাঁচ বছরে ভারতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা মহামারীর আগের ৬ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই কম।’ তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের আগে থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এসব প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে রয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যালান্স শিটের দুর্বল অবস্থা, ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পতন ও শ্রমবাজারের ভঙ্গুর অবস্থা। সামনের দিনগুলোয় প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ আরো বাড়বে। ভারতীয় অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়বে এবং তা হবে সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে বাজে সংকট। এসব কারণে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার কভিড-১৯ পূর্ব সময়ের তুলনায় অনেকটা কম থাকবে।’
অবশ্য এ মন্দা ভাবও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতকে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে রূপ দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে মোদির। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতির আকার ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থনীতির আকার প্রায় দ্বিগুণে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা উচ্চাভিলাষীই বটে, যখন মহমারীসহ অন্যান্য প্রতিকূল স্রোতের কারণে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মোদি সরকার অবশ্য প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিতে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে সেগুলো চাহিদায় গতি আনার প্রত্যাশা তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মন্দায় পড়ার অবস্থায় রয়েছে ভারতের অর্থনীতি।
করোনা প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে মোদি সরকার গত মে মাসে আর্থিক ও মুদ্রানীতি সহায়তা হিসেবে ২০ লাখ কোটি রুপির (২৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার) প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দিচ্ছেন। এছাড়া সম্প্রতি বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারারদের ভারতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি রুপির (২ হাজার কোটি ডলার) প্রণোদনা কর্মসূচিরও অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মাসিক বুলেটিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপিতে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ সংকোচন দেখতে হতে পারে ভারতকে। এ পূর্বাভাস সত্যি হলে অর্থবছরের প্রথমার্ধের দুই প্রান্তিকেই দেশটির জিডিপি কমবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি সংকুচিত হয়েছিল ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর অর্থনীতির ভাষায়, টানা দুই প্রান্তিকে কোনো দেশের জিডিপি সংকুচিত হলে দেশটির অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ২৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান প্রকাশের কথা রয়েছে।
আরবিআইয়ের হালনাগাদ পূর্বাভাস বলছে, চলতি অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ধারণা করছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকোচনের। সূত্র: টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।