বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরো বছরটাই প্রায় বন্ধ রয়েছে।তবে ক্লাস,অ্যাসাইনমেন্ট,পরবর্তী ক্লাসে পদোন্নতির আগে টিউশন ফির নামে চাপ দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের মতো পুরো বছরের টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।আবার কোথাও কোথাও পরীক্ষার ফি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অ্যাসাইনমেন্টের নামে অনেক অভিভাবক এরকম জিম্মি হয়ে ফি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দু-উপজেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে।এদিকে অভিভাবকদের চাপাচাপিতে প্রায় তিন সপ্তাহ পর গতকাল শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন,পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার,বিজ্ঞানাগার,ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেয়া যাবে না বা নিলেও তা ফেরত দিতে সরকারি নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
অভিভাবকরা বলছেন,পুরো দেশ মহামারি করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের ভয়ে দিশাহারা,করোনার কারণে পুরো দেশের মানুষেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারো বেতন কমে গেছে বা চাকরি চলে গেছে বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলের খরচ চালাতে পারছে না।
সবাই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন উল্লেখ করে তারা বলেন,ঠিকভাবে বাড়িভাড়াও দিতে পারছেন না। এখন বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুল তো পুরো বছরই বন্ধ। তবুও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কিছুই মানছে না,একের পর এক চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। টাকা না দিলে অনেক কটূ কথাও বলছেন শিক্ষকরা।
অনেক শিক্ষার্থীর কাছে এখন টিউশন ফি যেনো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি সংক্রান্ত এখোনো কোনো নির্দেশনা না থাকায় অনেক স্কুলে এরকম জোর করেই টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেছিলেন,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির সঙ্গে আর কোন কোন খাতে অর্থ আদায় করা যাবে তা উল্লেখ করে একটি নির্দেশনা দেয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্রীড়া, মিলাদ-মাহফিলসহ অন্যান্য যে কার্যক্রম হয়নি, নির্দেশনায় সেসব ফি বাদ দেয়া হবে। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক উভয়পক্ষকে উদার হতে আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলনগরের ফজুমিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন,আমি করোনার আগে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সকল বেতন পরিশোধ করেছি। করোনায় প্রায় আট মাস স্কুল বন্ধ আছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করছে।আবার শিক্ষার্থীদের কে অনেক কটুকথা ও বলছে।
এ অভিভাবক আরও বলেন, স্কুলের এখন আনুসঙ্গিক কোনো বিলের তেমন খরচই নেই।স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীরা কোনো কিছুই ব্যবহার করছে না। তারপরও অভিভাবকদের কাছ থেকে সকল বিলের টাকা তারা চাচ্ছে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ রয়েছে। অথচ তারা বিভিন্ন খাতের নাম করে টাকা চাচ্ছে। কিভাবে সব কিছুর এতো টাকা আমরা দেবো।এ অভিভাবক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,চোট একটা চায়ের দোকান করি।করোনার কারনে পুরো ফ্যামিলি নিয়ে অনেক ঝামেলার মধ্যে আছি।আরো কয়েকজন অভিভাবকের একই অভিযোগ।তিনি বলেন, শুধু মাসিক বেতন দিতে চেয়েছি,কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো টিউশন ফি দিতে বলছে।এরকম অনেক অভিভাবকই বলছেন,অন্য খাতের টাকা তারা দিতে চাচ্ছে না। অভিভাকদের বক্তব্য ছাত্রছাত্রীরাও বন্ধের মধ্যে ওই খাতের সুবিধাগুলো ভোগ করেনি। ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে কোনো পড়াশোনা করতে পারেনি। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ সব টাকা চাচ্ছে। আবার অন লাইনে ক্লাসে ছেলেমেয়েদের কোনো লাভই হয়নি। স্কুল ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা হচ্ছে না। অন লাইনে ছাত্রছাত্রীরা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাই দিয়েছে।
তারা আরো বলেন,যেখানে এইচএসসির মতো বড় পরীক্ষা বাতিল করে অটো পাস দেয়ার ঘোষণা হলো। সেখানে এসব ছোট ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কেন পরীক্ষা বাবদ ফি দিতে হবে?আর করোনায় প্রায় আট মাস স্কুল বন্ধ, তাহলে স্কুলের বকেয়া বতেন কেন দেবো? ফজুমিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মত রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র এমনই।স্কুল শিক্ষকদের অসাদাচরণ আর বেপরোয়া চাপ প্রয়োগে শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অন্য কোনো খাত যেমন— শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন,পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেয়া যাবে না বা নিলেও তা ফেরত দিতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তর।অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে। যেনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।টিউশন ফি ছাড়া অন্য খাতে অর্থ নিতে পারবে না স্কুল-কলেজ।করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন থাকা অভিভাবকদের ছাড় দিয়ে স্কুল-কলেজগুলোকে তাদের শিক্ষার্থীদের শুধুই টিউশন ফি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেয়া যাবে না বা নিলেও তা ফেরত দিতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো . গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।তবে এরই মধ্যে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাসের পাশাপাশি বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করলেও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা ভালোভাবে করতে পারেনি। একইভাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এসব অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পেরেছে, কিছু শিক্ষার্থী পারেনি।তবে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিভাবকদের মতদ্বৈততা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু অভিভাবক বলছেন, একদিকে স্কুল বন্ধ ছিলো।অন্যদিকে এ করোনার সময়ে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অতএব তাদের পক্ষে টিউশন ফি দেয়া সম্ভব নয়।
কিন্ত রামগতি-কমলনগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের এমন নির্দেশনা মানতে নারাজ।তারা বেপরোয়া হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করেই চলছে।তবে যদি কোন অভিভাবক চরম আর্থিক সঙ্কটে থাকেন, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তৃপক্ষ। এখানে উল্লেখ্য,কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেনো কোনো কারণে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নশীল হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন সরকারি নির্দেশনা এসেছে।যারা বিভিন্ন নাম করে টাকা নিয়েছে তাদের বিষয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান বলেন বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।এই নির্দেশনা অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়ার হুশিয়ারী দেন।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল মোমিন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।