পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৯টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতি শুরু হয়েছে। দুই দলের মধ্যে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ চলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি তার নীলনকশা অনুযায়ী বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা সরকারি এজেন্টদের নাশকতা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশকে অস্থিতিশীল করতেই বাস পোড়ানো ও নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর সাথে জড়িতেদের বড় অংশের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ বাস পোড়ানো, নাশকতা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা করেছে। এসব মামলায় পাঁচশ’র বেশি আসামী করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং বিশ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। আসামীর তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইশরাক হোসেনের নাম রয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বাস পোড়ানোর মতো আকস্মিক ঘটনায় মানুষ বিস্মিত এবং হতবাক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ধারণা করতে পারেনি হঠাৎ করে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। বহুদিন ধরেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শীতল অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ থাকলেও বড় ধরনের আন্দোলন ও সংগ্রাম নেই। রাজনীতি সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পরস্পরবিরোধী নানা বক্তব্য ও বিবৃতির মধ্যে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন ইসলামী ও বামপন্থী দল মিছিল ও মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও সরকারবিরোধী বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করেনি। এমন এক রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করে বাস পোড়ানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, কেন ঘটল সেটাই প্রশ্ন। এ ধরনের ত্রাসসঞ্চারী ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। করোনার ভয়াবহ আঘাতে যখন পুরো অর্থনীতি লন্ডভন্ড এবং কোটি কোটি মানুষের বেকার হয়ে পড়া, আয় কমে যাওয়া, দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন বাস পোড়ানোর মতো ঘটনা তাদেরকে আরও শঙ্কিত ও হতবিহ্বল করে তুলেছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তারা কোনোভাবেই এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সাধারণত আন্দোলন-সংগ্রামের সময় রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ মনে করে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ঘটতে পারে। আগে থেকেই তাদের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। রাজনৈতিক শীতল অবস্থায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা তাদের ধারণাতীত ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষ অনেকটাই নিস্পৃহ। করোনার আঘাতে জীবন-জীবিকার তাকিদে রাজনীতির প্রতি তাদের আগ্রহ প্রায় শূন্যের কোঠায়। তারা জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত। অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্তে¡ও তা চাঙ্গা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দেশে চলমান বেকারের সংখ্যার সাথে কর্মহীন হয়ে নতুন বেকার যুক্ত হচ্ছে। গার্মেন্ট খাতসহ বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হচ্ছে। অনেকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা কোনো রকমে খেয়েপরে জীবনযাপন করত, তাদের অনেকে দরিদ্র হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা তাদের ‘নিউ পুওর’ বা নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারাসহ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এখন বাঁচার সংগ্রাম করছে। এমন এক দুঃসময়ে বাস পোড়ানোর মতো বিপজ্জনক ঘটনায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক নিয়ে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা যতই উচ্চাশা পোষণ করুক না কেন, বাস্তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। তারা অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। কোটি কোটি মানুষের বেকার হওয়া এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া এবং এ সীমা বৃদ্ধি থেকে তা কারো বুঝতে বাকি থাকে না। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও তা শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরও শোচনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। আশঙ্কিত এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিকল্প নেই। বাস পোড়ানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিয়ে যে ‘ব্লেম গেইমে’ শুরু হয়েছে, তা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। ঘটনার শুরু থেকেই কোনো ধরনের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ছাড়া একে অপরকে দোষারোপ করার মতো অপরাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করা কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। এর ফলে প্রকৃত সন্ত্রাসীরা যেমন পার পেয়ে যাবে, তেমনি তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমও বৃদ্ধি পাবে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে ‘ব্লেম গেইম’ বন্ধ করতে হবে। তা করা না হলে অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি দল ও বিরোধী দলকে সংযমী ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ঘটনা যারাই ঘটিয়ে থাকুক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিরোধীদলের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অভিযোগ রয়েছে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও প্রমাণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচার সুযোগ করে দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।