Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জালিয়াতির অভিযোগের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিবৃতি

হার স্বীকারে রিপাবলিকান দলে মতভেদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

একটি ভোটিং মেশিন সিস্টেম ‘দেশজুড়ে ট্রাম্পের ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ভোট মুছে ফেলেছে’ বলে বৃহস্পতিবার আবারও ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর কয়েক ঘন্টা পরেই তার এই অভিযোগের বিরোধিতা করে একটি বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা। এদিকে, নির্বাচনে পরাজয় অস্বীকারের প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিতে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার দেয় বিবৃতিতে নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে ঘোষণা করে বলেন, ‘এই নির্বাচন আমেরিকান ইতিহাসে সর্বাধিক সুরক্ষিত ছিল’এবং ভোটের কোনও ব্যবস্থা নিয়ে আপোস করা হয়েছে তার ‘কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি’। বিবৃতিটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাইবারসিকিউরিটি এবং অবকাঠামো সুরক্ষা বিভাগ দ্বারা বিতরণ করা হয়েছে, যা রাজ্যগুলিতে ভোটদান প্রক্রিয়া সুরক্ষিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ট্রাম্পের নিজস্ব ক্যাবিনেট থেকেও এ এজেন্সিতে লোক নিয়োগ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যবহৃত ভোটদান ব্যবস্থার তদারককারী ও সমন্বয়কারী কাউন্সিল এর আগে ট্রাম্পের এসব অভিযোগের বিরোধিতা করেছিল।

দেশজুড়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলে দিয়েছেন যে, কোনও রাজ্যে পদ্ধতিগত জালিয়াতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি, ভোটের অবকাঠামোতে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের কোনও চিহ্ন নেই এবং কোনও নির্বাচনে ঘটে যাওয়া এপিসোডিক ভুলের বাইরে কোনও হার্ডওয়্যার বা সফ্টওয়্যার ব্যর্থতার কোনও চিহ্নই না দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। যে দলটি এ বিবৃতি জারি করেছে তারা হলো. নির্বাচনী অবকাঠামোগত সরকার সমন্বয় পরিষদ, যার মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সহায়তা কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং সারা দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নির্বাচন পরিচালকগণের সচিবরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। তাদের সাথে ভোটিং মেশিন তৈরিকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি ও দলীয় নেতা এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা নির্বাচনের ফল মেনে না নেয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করবেন। তবে শুধুমাত্র অল্প কয়েকজনই প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করতে রাজি হয়েছেন।

এ বিষয়ে রিপাবলিকান নেতা ও ওহাইয়োর গভর্নর মাইক দেওয়াইন বলেন, ‘জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত বলার সময় এসেছে।’ অ্যারিজোনার রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফল মেনে নিতে অস্বীকার করলেও তার রাজ্য পরাজিত হচ্ছেন।’ এবং ক্যাপিটল হিলের বেশ কয়েকটি রিপাবলিকান সিনেটর সাবধান করে দেয়ার সুরে বলেছেন, নতুন কমান্ডার ইন চীফ হিসাবে বাইডেনকে গোয়েন্দা ব্রিফিংয়ের অধিকার দেয়া উচিত। শীঘ্রই তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রত্যয়িত হবেন এবং তার স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে ।
ট্রাম্পের কখন ফলাফল মেনে নেয়া উচিত, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিনেট ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান আইওয়া সিনেটর চার্লস ই গ্রাসলে এমনকি প্রেসিডেন্টের জন্য বাস্তবতা স্বীকার করার জন্য একটি সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তা হচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর- রাজ্যের ফলাফল অনুযায়ী ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধি দল প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট প্রদানের আগের দিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগণনা এখনো চলছে। সেইসঙ্গে দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ফারাকও বেড়ে চলেছে। অ্যারিজোনা রাজ্যে বাইডেনের জয় প্রায় নিশ্চিত হলেও ট্রাম্প এখনো পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ। এখনো পর্যন্ত রিপাবলিকান দলের স্বীকৃতি না পেলেও বাইডেন অবিচল থেকে ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি করে চলেছেন। অ্যারিজোনায় রিপাবলিকান দলের দীর্ঘ সাফল্যে ইতি টেনে ডেমোক্র্যাটিক দলের জো বাইডেন জয়ের পথে চলেছেন বলে এডিসন রিসার্চ নামের প্রতিষ্ঠান পূর্বাভাষ দিেেয়ছে। ফলে বাইডেনের ঝুলিতে ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট পড়বে এবং তার জয় সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করার আর কোনো অবকাশই থাকবে না। ‘পপুলার ভোট› বা সরাসরি ভোটের মানদন্ডেও তিনি ট্রাম্পের তুলনায় ৫২ লাখেরও বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আছেন।
আরও কয়েকটি রাজ্যে ভোটগণনা চললেও বাইডেনের জয়ের অঙ্কে কোনো পরিবর্তনের আশা কার্যত লোপ পেয়েছে। ট্রাম্প ব্যাপক নির্বাচনি অনিয়মের অভিযোগ করে চললেও কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারছেন না। ফলে এখনো পর্যন্ত আদালতেও তার অভিযোগ ধোপে টিকছে না। এমনকি অ্যারিজোনা রাজ্যের কিছু অংশে নতুন করে ভোটগণনা করে সামান্য কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে, সার্বিক ফলের উপর যার কোনো প্রভাব পড়ছে না। মার্কিন প্রশাসনের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ সাইবার নিরাপত্তা এবং নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের ইতিহাসে এটাই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ নির্বাচন। এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ট্রাম্পের একগুঁয়ে মনোভাবের পক্ষে রিপাবলিকান দলের মধ্যে সমর্থনে চিড় ধরতে শুরু করছে। এখনো দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে বাইডেনের জয় স্বীকার না করলেও তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রথা অনুযায়ী বাইডেনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থার ‘ব্রিফিং’ শুরু করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। অর্থাৎ তারা কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন, যে তারা না মানলেও বাইডেন পরবর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন।

প্রথা অনুযায়ী জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামের ফেডারেল কর্তৃপক্ষ এখনো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ধার্য বাজেট হস্তান্তর করে নি। ভবিষ্যৎ বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ রন ক্লেইন এমএসএনবিসি নেটওয়ার্ককে বলেন, ঠিক সময়ে এই অর্থ হাতে পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আগামী বছরের শুরুতে দেশে করোনা টিকা প্রদানের সরকারি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হলে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে, বলেন ক্লেইন। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস।



 

Show all comments
  • Afiya Jahan Asmani ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    শয়তানটা পাগল হয়ে গেছে পরাজিত হয়ে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিৎ। মনে হয় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ট্রাম্প জয়ী হতো। এটা কি বাংলাদেশ পাইছেন রাতের ভোটে পাশ হয়ে যাবেন???
    Total Reply(0) Reply
  • Masum Talukder ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    সভ্য দেশের (যারা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করে) অসভ্যতা দেখে লজ্জা লাগে!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Feruz Ahammed ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    ভরসা রাখুন আমাদের দেশের সিইসির উপর সে আমেরিকার নির্বাচনের বিষয়টা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে,অবশ্যই ইসি সাহেব ট্রাম্পের সকল ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নাকচ করে সুষ্ঠু নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করবে,এর জন্য মাত্র কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Babul Mahmud ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    পুতিন আর শি জিং পিং এর পাল্লায় পরে এই সব করছে ট্রাম্প। বাট সে নিজ দলেরই তো সমর্থন পাবেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Arif Ahmad ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজ্জত এর চরম পর্যায়ে উপনীত হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mujahid Ali ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
    আমেরিকায় আইন আছে, বাংলাদেশের মত আগের দিন রাত্রে ব্যলট বাকস ভর্তি করে পরের দিন ভোটারদের পিটানো আর গুম করা হয়না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ibrahim Akon ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    আমার মনে হয় ডোনাল ট্রাম বাংলাদেশ কে ফলো করছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Azim Uddin ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    ক্ষমতা একটি প্রকান্ড বটগাছের মতো। এটা যখন ডালপালা মেলে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তখন সেখানে সাধু বাবাদের আগমন ঘটে এবং লালসালু বেঁধে তারা বন্ডামিতে লিপ্ত হয়। সুতরাং এটা এখন আর তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ারদের মাথায় ও বটগাছ গজিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Wasim Ahmed ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    ট্রাম্প বাংলাদেশের সিইসি কে একটা ফোন দেন দেখবেন আগামিকাল আপনাকে বিজয়ি ঘোষণা করে দেবেন প্রমিস।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim ahmed ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৪৯ পিএম says : 0
    The election result will be same as USA if a fair and a genuine election is arranged in Bangladesh at this moment. And, the evils will complain same as the evils in the USA now. Bcoz, they are evils and not humem.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ