২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সারা বিশ্বে প্রতি বৎসর ১৪ই নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। এই বিশেষ দিনে অর্থাৎ ১৮৯১ সালের ১৪ই নভেম্বর তারিখে বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেন্টিং কানাডায় জন্মগ্রহণ করেন। বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেন্টিং এবং চার্লস বেস্ট ১৯২১ সালে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনসুলিন আবিষ্কার করেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের মূল ভূমিকায় ছিলেন ফ্রেডরিক বেন্টিং। ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে এর উদ্দেশ্য হলো ক্যাম্পেইন বা প্রচারের মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে এর থিম বা মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “The Nurse and Diabetes” ডায়াবেটিস রোগীদের নার্সরা সহায়তা প্রদান করে থাকে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই নার্সদের ভূমিকা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। মোট কথা ডায়াবেটিসকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি অবধারিত।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীরের প্রায় প্রতিটি অংশের ক্ষতি করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিডনি, হার্ট, চোখ, কান, ত্বক, স্নায়ুতন্ত্র, অস্থিসন্ধি এবং প্রজনন তন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যহত করে থাকে। ডায়াবেটিস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সংক্রমনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। ডায়াবেটিসের জটিলতা হিসাবে কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মানুষ যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের চিন্তা, স্মরণশক্তি ও স্মৃতিতে বেশি সমস্যা হতে পারে। এর সার্বিক অর্থ হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস ব্রেনের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় বা সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের একই যোগসূত্র থাকতে পারে একটি হরমোনের সাথে যা অ্যালডোস্টেরণ নামে পরিচিত। গবেষণায় এমনটি দেখা গেছে। অ্যালডোস্টেরণ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যাদের অ্যালডোস্টেরণ হরমোনের পরিমাণ বেশি তাদের দ্বিগুন সম্ভাবনা আছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রে। রক্তে অত্যাধিক পরিমাণে কোলস্টেরল থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের হার্টের রোগ এবং রক্তনালীর রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যায় আর উপকারী কোলস্টেরল বা এইচডিএল এর পরিমাণ কমে যায়। ফলে হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সিনিয়রদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস ও ডিমেনসিয়া রয়েছে তাদের লো ব্লাড প্রেসার থেকে সৃষ্ট মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি তিন জনের দুই জনই মারা যায় হৃদরোগজণিত কারণে। সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রক্তের সুগার রক্তনালীকে ধ্বংস করে থাকে যার ফলে হার্ট এটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তনালী ধ্বংসের কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা স্ট্রোকের ঝুঁকির মধ্যেও থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর কারণে যৌন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস যৌন অঙ্গগুলোর রক্তনালী এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। ফলে যৌন অনুভূতি কমে যেতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের শুকনো ভাব যৌন কার্যক্রমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে যৌন ক্ষমতা নিঃশেষ হওয়া ডায়াবেটিসের জটিলতা হিসাবে দেখা যায়।
যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি এবং পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ হয়ে পায়ের ক্ষতি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের আলাদা যত্ন নিতে হবে। যারা প্রোষ্টেট গ্রন্থি বড় হওয়ার কারণে ওষুধ সেবন করে থাকেন তারা টাইপ-২ ডায়াবেটিস ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। অর্থাৎ এনলার্জড প্রোষ্টেট ওষুধ ডায়াবেটিস ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রোষ্টেট গ্রন্থি বড় হওয়ার কারণে যারা ফিনাসটেরাইড গ্রুপের প্রোসকার এবং ডুটাসটেরাইড বা এভোডার্ট জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে আসছেন তাদের ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডায়েট সোডা পান করলে মারাত্মক ধরণের ডায়াবেটিক চক্ষু রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগী অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে যদি যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ না করে।
এক গবেষণায় দেখা যায় অল্প বয়সীদের মাঝে যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের স্বাভাবিক এর চেয়ে সাত গুন বেশি সম্ভাবনা রয়েছে কিডনি রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে। হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকের সংক্রমনের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি তরুণদের ক্ষেত্রে দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় সেহেতু ডায়াবেটিস রোগীর মুখে বিভিন্ন ধরণের রোগ এবং সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। মুখের অনেক রোগ সহজে ভাল হতে চায় না। আবার মুখের রোগের চিকিৎসায় ডায়াবেটিস থাকার কারণে সব ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। ডায়াবেটিস রোগীদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মুখের যত্ন নিতে হবে। মুখে সামান্য সমস্যা হলেও আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। ডায়াবেটিসের ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন ওষুধ সেবনের কারণে আপনার মুখে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মুখস্ত ওষুধ সেবন না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুণ। শারীরিক ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন ও ডায়াবেটিসজণিত স্নায়ুর ব্যথার উন্নতি ঘটিয়ে থাকে। ব্যায়াম ডায়াবেটিসজণিত স্নায়ুর ক্ষতিকে ধীর করে দেয় অথবা বাধা প্রদান করে। অতএব, ডায়াবেটিস রোগকে কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না। সব সময় আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুখী জীবন যাপন করুন।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।