মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একটি নির্বাচনের ফলাফলে বদলে যেতে পারে সারা দুনিয়ার চিত্র। মানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে যাওয়ার কারণে বিশ্বে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। তাদের ধারণা এবার বিশ্বে গণতান্ত্রিক চর্চা আরও বৃদ্ধি পাবে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈশ্বিক নীতি কী হতে যাচ্ছে তা এরইমধ্যে স্পষ্ট। ফরেন পলিসি বিষয়ক ম্যাগাজিনে বাইডেন নিজেই গত মার্চে এ নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন, প্রচারাভিযানেও তিনি প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার সেই সব বক্তৃতা-বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর এবং নিবন্ধই আজ বিশ্লেষণের খোরাক। এখানে বিশ্লেষকরা খুঁজছেন- খোলনলচে পরিবর্তিত বাইডেনের বিদেশনীতি এশিয়া অঞ্চলে কি প্রভাব ফেলবে? কাছের প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার এবং অল্প দূরে তবে সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ চীনের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের বোঝাপড়াটা কেমন হবে?
সীমান্ত ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা ভারত ও চীন সম্পর্কের বরফ গলাতে যুক্তরাষ্ট্রের আদতে কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে কি-না? ইত্যাদি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ যোগাযোগের বিপরীতে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেনের প্রথাগত পররাষ্ট্রনীতি ফিরিয়ে আনার ঘোষণায় সবকিছু যেন ওলট-পালট ঠেকছে খোদ বিশ্লেষকদের কাছে।
তারা তাদের বিশ্লেষণে অন্তিম মুহূর্তে এসে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভারত ও বাংলাদেশ সফরের মানেও খুঁজছেন। গোটা আমেরিকা যখন নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছিল সেই সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার ভারত সফরে ব্যস্ত।
তারও আগে দিল্লি হয়ে আচমকা ঢাকায় আসেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান। নির্বাচনে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পরাজয়ের বিষয়টি ওই সব সফরেও আলোচনায় ছিল। বাইডেন চমকের পর নতুন করে সেটি সামনে এসেছে।
বলা হচ্ছে- এসব সফরও না-কি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাচনী রাজনীতির অংশ। ৩রা নভেম্বরের ভোটে ট্রাম্পের পরাজয় এবং জো বাইডেনের জয় ঘোষণা পরবর্তী বিবিসি ও সিএনএন-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাইডেনের বৈশ্বিক নীতির মূল ফোকাস হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা।
দুনিয়াজুড়ে একনায়কতন্ত্রের উত্থান চেষ্টার বিপরীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জোর দিবেন তিনি। বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে- ট্রাম্প প্রশাসন গৃহীত পররাষ্ট্রনীতির অনেক কিছুই উল্টে যাবে ২০শে জানুয়ারি বাইডেনের শপথ গ্রহণের পরপরই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামানের মতে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, প্রাপ্ত রিপোর্ট এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে বাইডেনের বিদেশনীতি হবে ট্রাম্পের নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত।
দু’জনের পররাষ্ট্রনীতিতে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং বিশ্বে অবাধ চলাচল- এই চার মূলস্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত বাইডেনের পররাষ্ট্র বা বৈশ্বিক নীতি। ওই নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তিনি যাবতীয় উদ্যোগ নিবেন। তার এসব উদ্যোগ এবং উদ্যমে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, বৈশ্বিক এবং ট্রান্স আটলান্টিকের বিদ্যমান কর্মসূচিতে আমূল পরিবর্তন আসবে, যার হাওয়া লাগবে দুনিয়াজুড়ে।
এ নিয়ে মার্চে বাইডেন যে নিবন্ধ লিখেছেন তাতে উপরোল্লিখিত চার মূল নীতির আলোকে আরো কিছু মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাইডেন বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি নির্মূলের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন দুর্নীতি জনগণের অধিকারের ওপর আঘাত। যেসব দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে তা সবল করা তথা দেশগুলোতে সক্রিয় গণতন্ত্র চর্চা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনে বাইডেন অগ্রসর হবেন বলে মনে করেন তিনি। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে জেনারেল (অব.) মুনীরুজ্জামান বলেন, বাইডেন এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি তার বৈশ্বিক নীতির বাস্তবায়নে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে ফোকাল পয়েন্টে রাখবেন।
ট্রাম্প আমলে অনেক বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে আন্ডারমাইন্ড করা হয়েছিল বা অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। তিনি মনে করেন বাইডেন পৃথিবীর নেতৃত্ব দানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূমিকা তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস চালাবেন। মাল্টিলেটারালিজম বা বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ ঘটাবেন। ট্রাম্প প্রত্যাখ্যাত প্যারিস চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনবেন। নতুন করে ইরানের সঙ্গে পরামাণু অস্ত্র নিরোধ বিষয়ক আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করবেন।
এ সংক্রান্ত চুক্তি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেই হয়েছিল উল্লেখ করে ওই বিশ্লেষক বলেন, যদিও ট্রাম্প তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। বাইডেন ইতিমধ্যে তার ১০০ দিনের ৩ অগ্রাধিকার ঘোষণা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা সংক্রান্ত প্যারিস এগ্রিমেন্টে ফিরে যাওয়া, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি ও বৈশ্বিক উদ্যোগ জোরদারকরণ এবং সর্বশেষ বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কা সামাল দিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া বাইডেনের দীর্ঘ পাঁচ দশকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ১২ বছরই কেটেছে সিনেটের ফরেন রিলেশনন্স কমিটির উচ্চ পদে।
বলা হচ্ছে এ পর্যন্ত যেসব তথ্য বেরিয়েছে তাতে পুরনো মিত্রদের সঙ্গে সমপর্কন্নোয়নের চেষ্টা, মধ্যপ্রাচ্য বিশেষত: ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়া, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর ট্রাম্প আমলে জারি হওয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটের গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজা হবে তার দ্রুত পদক্ষেপগুলোর অন্যতম। এসব বিষয়ে তার সুস্পষ্ট নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।