পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। বিজিবির এয়ার উইংয়ের জন্য কেনা দুটি এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন: হেলিকপ্টার সংযোজন কেবল শুরু, এ যাত্রা বিজিবির সার্বিক কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল করবে বলে আমি মনে করি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্বপালনে এখন থেকে বিজিবি সদস্যরা জলে, স্থলে ও আকাশ পথে বিচরণ করবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজিবির এয়ার উইংয়ের যাত্রা শুরু এই বাহিনীর ইতিহাসে স্মরণীয় ঘটনা হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে এবং অবশ্যই এতে তার সক্ষমতা ও সেবার পরিধি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সীমান্ত প্রতিরক্ষাসহ সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় বিজিবির ভূমিকা ও ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর সার্বিক উন্নয়ন, বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম, আধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লোকবল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার কী করেছে এবং কী করার পরিকল্পনা রয়েছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বিজিবি সদস্যরা দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে এই বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। একদিন এই বাহিনী বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে, এমন প্রত্যাশাও তিনি ব্যক্ত করেছেন।
সীমান্তে সব ধরনের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আধুনিক, সক্ষম ও চৌকস সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিকল্প নেই। বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিহত করার দায়িত্ব পালন করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সীমান্তে নানা প্রকার নাশকতা হয়, অনুপ্রবেশ ঘটে, অস্ত্র, মাদক ও পণ্যের চোরাচালান হয়, মানব পাচার পর্যন্ত হয়। এসব প্রতিরোধ করে সীমান্তকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও অভয় করার দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ওপরই ন্যস্ত। সীমান্ত রক্ষায় দায়িত্ব পালন কিংবা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য হওয়া বিশ্বধর্ম ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। মহানবী সা. বলেছেন: দুটি চক্ষুকে দোজখের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না। একটি ওই চক্ষু, যা আল্লাহর ভয়ে অশ্রু প্রবাহিত করে। অন্যটি ওই চক্ষু, যা জিহাদের সময় সীমান্ত প্রহরায় রত থেকে বিনীদ্র রজনী যাপন করে। অপর এক হাদিসে তিনি বলেছেন: আল্লাহর পথে (ঈমানদারদের জানমাল রক্ষায়) সংগ্রামে ও সীমান্তপ্রহরায় অতিবাহিত করা একটি প্রাতঃকাল বা একটি সন্ধ্যা সারা দুনিয়া ও যাবতীয় সম্পদ অপেক্ষা উত্তম। মহানবী সা. এর এই দুটি হাদিস থেকে সীমান্তপ্রহরার গুরুত্ব ও সীমান্তরক্ষীদের মর্যাদা সহজেই অনুধাবন করা যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত বিদ্যমান। বিজিবিকে এই দু’সীমান্তে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশি হত্যার অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে আছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যখন তখন বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে। কখনো কখনো তাদের অপহরণ করছে। অনুপ্রবেশ ও সম্পদ লুণ্ঠনও নতুন নয়। সীমান্তে হত্যা ও নাশকতা বন্ধে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চললেও এবং ভারত বার বার সীমান্তে ‘শূন্যহত্যার’ প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। কিছু দিন আগে সর্বশেষ বিজিবি-বিএসএফ আলোচনায় ভারত একই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সীমান্ত হত্যা অব্যাহত আছে। ওদিকে মিয়ানমার সীমান্তেও মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিপি) বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই সেইদিনও একজন বাংলাদেশি জেলেকে হত্যা করেছে বিজিপি।
ভারত ও মিয়ানমারের স্পর্ধিত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মোকাবেলায় বিজিবি সব সময় ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। যে কোনো হত্যা, নাশকতা বা অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে আলোচনা, পতাকা বৈঠক ইত্যাদি করে দায়িত্ব শেষ করছে। এতে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হলেও বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে। কথায় বলে: অরক্ষিত সীমান্ত পরাধীনতার নামান্তর। এটা অব্যাহত সীমান্ত হত্যা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়। সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সীমান্তে যখন এই অবস্থা তখন বিজিবি-বিএসএফ’র মধ্যে মিষ্টি বিতরণ, রাখীবন্ধন, সফর বিনিময় ইত্যাদি চরম পরিহাস বলেই মনে হয়। অনেকে বলে থাকেন, সরকারের অবনত নীতির কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, বিএসএফ’র মতো বিজিপিও একই আচরণ করছে। দেশের সীমান্তকে অবশ্যই নিরাপদ ও শান্তির সীমান্তে পরিণত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিজিবিকে সক্রিয় হতে হবে। ত্রিমাত্রিক বাহিনী হলেই চলবে না, তাকে সীমান্ত রক্ষা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে আরও তৎপর ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।