Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের কী লাভ জো বাইডেনে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৩৫ এএম

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষেরও দৃষ্টি ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে। অধিকাংশ বাংলাদেশির আশা ছিলো জো বাইডেনের জয়। ট্রাম্পের পরাজয়ের জন্য অনেকে মুখিয়ে ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন৷ দেশটিতে ক্ষমতার এ পরিবর্তন অর্থাৎ জো বাইডেন ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের লাভ বা ক্ষতি কী হতে পারে তা নিয়ে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে বিশ্লেষকদের সাথে৷

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার এ পালাবদলে নানা দিক থেকে সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ৷ অবশ্য এর অনেকটাই নির্ভর করছে সুবিধা আদায় করতে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে কতটা তৎপরতা তার উপর৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে না৷ তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিবর্তন আনে দেশটি৷ এক্ষেত্রে দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যক্তিচিন্তার প্রতিফলনও ঘটে৷

তারা বলছেন, অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ৷

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকের মতে, ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশআলাদা গুরুত্ব পাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এবার আশা করতে পারি বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চোখ দিয়ে দেখবে না৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডনাল্ড ট্রাম্পের জন্য যে পরিমান বিনিয়োগ করেছেন আর বাইডেনকে যতটা উপেক্ষা করেছেন তার একটা ফল হয়তো আমরা দেখতে পাব৷ ভারতে এখন এমন অনেক ইস্যু এখন আছে যা ডেমোক্র্যাটদের পছন্দ না৷ আর এর সুবিধা পাবে বাংলাদেশ৷’’

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে অবস্থানরত ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সরকার আরো উদার হতে পারে৷ বাড়তে পারে বৈধ অভিবাসনের সুযোগও৷ কেননা, বাইডেন সবাইকে নিয়েই ঐক্য গড়তে চান৷ আর বাইডেনের প্রথম দিনের কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে মুসলিম দেশগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও জলবায়ু ফোরামে ফিরে যাওয়া৷ এর সুফলও বাংলাদেশ পাবে৷


তাছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে জিএসপি সুবিধা ও পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো সুবিধা পেতে পারে বলে মত অর্থনীতিবিদদের৷

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীলনীতির কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ট্রাম্পের পুরো সময়ে বাংলাদেশ চেষ্টা করেও জিএসপি সুবিধা ফেরত পায়নি৷ ডিউটি ফ্রি বা কোটা ফ্রি সুবিধা বাংলাদেশ খুব সহজে না পেলেও এবার জিএসপি সুবিধা পাবে বলেই মনে হচ্ছে৷ টিকফার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলাপ-আলোচনা হয়৷ সেখানে বাংলাদেশকে তার বাণিজ্যিক সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করতে হবে৷ কারণ জো বাইডেন উদারনীতির৷’’

জলবায়ু, পরিবেশ, শ্রমিক অধিকার, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গনাইজেশন - এইসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে যুক্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা - এসব বিষয়ে কি নতুন অবস্থানে যাবে বাইডেন প্রশাসন? আর যদি যায় তাহলে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন ভাবনা আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ায় তারা গণতন্ত্র , মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নিয়ে অতীতের মতো কাজ করবে বলে মনে হয়৷ হয়তো একটু বেশিই করবে৷ তবে সেটা কখনো হস্তক্ষেপের পর্যায়ে যাবে না৷ বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা নিয়ে অতীতেও কথা হয়েছে৷ ভবিষ্যতেও হবে৷ তবে সেটা মন্তব্য বা প্রতিবেদনের পর্য়ায়েই থাকবে৷ অর্থাৎ অনেকটা কেতাবি৷ তাদের বিভিন্ন কমিটি রয়েছে৷ তারা প্রতিবেদন দেয়৷ আমার মনে হয় সেভাবেই চলবে৷’’

এ অধ্যাপক মনে করেন, যত কথাই হোক না কেন ভারতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের মতই থাকবে৷ তবে বাংলাদেশ এর ভেতর থেকেই আলাদা গুরুত্ব পাবে৷

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং রামরুর চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘জো বাইডেনের সর্বশেষ বক্তৃতাতায় এটি স্পষ্ট যে তারা মানবিধকার, গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করবে৷ সবাইকে নিয়ে বাইডেন যখন ঐক্যের কথা বলেন তখন সেটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই বলেন৷ বক্তৃতায় দক্ষিণ এশিয়াকেও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি৷’’

ড. সিদ্দিকী বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বাংলাদেশ আরো সমর্থন পাবে৷ পরিবর্তন আসবে অভিবাসন নীতিতে৷’’

তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিষয় স্পষ্ট হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষকরা৷ তারা মনে করেন, চীনের সাথে দেশটির সম্পর্কের বর্তমান যে ধারা তা যদি পরিবর্তনও হয় তবুও তাতে সময় লাগবে৷ আর সেই পরিবর্তন আসলে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে৷ আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পারলে সুবিধাই হবে বাংলাদেশের৷



 

Show all comments
  • Engr A.K.M Zahirul Islam ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১:২৩ পিএম says : 0
    We want to constitutional right , free fair election and back to get democracy like other country where exercise freedom of speech and democracy.
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kuddus ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৫:০৫ পিএম says : 0
    অবস্থাভেদে বিভাজন হোতা তারাই, যাদের আশ্রিত প্রত্যাশী সংখ্যালঘু দেশ সমূহ। সময়ের ব্যবধানে কত আসে কত যায়, আশ্রিত প্রার্থী তীর্থের কাক হয়ে রয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Robiul Islam ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৫:০৫ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের তো কোন পররাষ্ট্রনীতি নাই যেটা আছে এটা যে কতটা হাস্যকর এবং অযৌক্তিক ইমোশন দিয়ে সবকিছু হয়না আমাদের পররাষ্ট্র নীতি কী..? সবার সাথে বন্ধু কারো সাথে শত্রুতা নয় এটা কখনো হয়.? যারা ভালো তাদের সাথে বন্ধুত্ব হবে আমাদের স্বার্থ তাদের সাথে মিলে গেলে তখনই বন্ধুত্ব হবে আর এখন তো দেখা যায় সবাই বন্ধু বাংলাদেশের কোন শত্রু নেই আর এইজন্যই বাংলাদেশের সত্যিকারে কোনো বন্ধু নেই আর এই জন্যই তেমন কোন সুবিধা নিতে পারবে না বাংলাদেশের প্রশাসন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Hossain ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৫:০৬ পিএম says : 0
    তাঁরা আমেরিকান ।ওদের স্বার্থের এতটুকু ছাড় দিবে না তাতে যেই ক্ষমতায় আসুক ।আমাদের উৎসাহী হওয়ার কোন কারন নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Mosaddeque Hasan ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৫:০৭ পিএম says : 0
    প্রয়োজন নেই। আত্মতুষ্টি তা যথেষ্ট। পারার মতো ক্ষমতা থেকে থাকলে আপনাদের চোখে তা পড়তো। নেই বলেই আজ চপেটাঘাত করছেন। এটা সাংবাদিকতার নামে প্রহসন পাঠকদের সাথে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sar Sadee ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৫:০৭ পিএম says : 0
    ঘোড়ার আন্ডা হবে। তাদের যে বৈদেশিক নীতি যা ছিলো, তাই থাকবে। কোরোনা শেষ হলে আবার যুদ্ধ শুরু হবে। অস্ত্র ব্যবসা চাঙ্গা হবে। ইসরাইল কে দিয়ে ফিলিস্তিন কে মারবে। আর নোবেল এ শান্তি পুরুস্কার পাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ