মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্টে সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস। অধ্যাবসায় আর পরিশ্রমের নজির গড়ে ৭৭ বছর বয়সে সেই ইতিহাস লিখলেন ডোমোক্র্যাট প্রার্থী জোসেফ রবিনেত বাইডেন জুনিয়র। ইলেক্টোরাল ভোটের হিসাবে বিপুল ব্যবধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন সাবেক এই ভাইস-প্রেসিডেন্ট। নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি গড়েছেন দুইটি রেবর্ড। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পেয়ে ও সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। বাইডেন যে বিজয়ী হচ্ছেন তা গত বৃহস্পতিবারেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ক্ষীণ হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা থাকায় সারা বিশ্ব অপেক্ষায় ছিল ফল ঘোষণার। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চারদিন পর গতকাল বেসরকারীভাবে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফল ঘোষিত হতেই যুক্তরাষ্টজুড়ে আন্দমিছিল করেছেন সমর্থকরা। উদারপন্থী বাইডেন জেতায় বিশ^বাসীও আশায় বুক বেধেঁছেন নতুন এক আমেরিকা দেখার, যারা বিশ্বের উন্নয়ন ও শান্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গতকাল স্থানীয় সময় সকালে পেনসিলভানিয়া ও নেভাডাতে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সংবাদসংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। রাজ্য দুইটিতে ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা যথাক্রমে ২০ ও ৬টি। ফলে, আগের ২৬৪ ইলেক্টোরাল ভোটের সাথে ওই দুই রাজ্যের ২৬টি ভোট যুক্ত হওয়ায় বাইডেনের প্রাপ্ত মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯০টি। এর সাথে জর্জিয়াতেও বাইডেনের জয় প্রায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত ইভির সংখ্যা হবে ৩০৬টি। জয়ের জন্য তার প্রয়োজন ছিল ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট। বাইডেন সেই সংখ্যা পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিশ্চিত হয়ে যায় ট্রাম্পের পরাজয়। নিজের জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বাইডেনও। ৪ রাজ্যের সাম্প্রতিক ফলাফলের গতিপ্রকৃতি দেখে গতকাল বাইডেনের মন্তব্য, ‘আমরা অ্যারিজোনাতে জিতছি, নেভাদাতেও জিতছি। সেখানে লিড দ্বিগুণ হয়েছে।’ শুধুমাত্র ওই ৪ রাজ্যই নয়, বাইডেন এদিন সদর্পে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমরা ৩০০-রও বেশি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট (ইভি) জয় করার পথে।’ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮০টি পপুলার ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন ৭ কোটি ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৫ পপুলার ভোট। শতকরা হিসাবে যথাক্রমে ৫০ দশমিক ৬ ও ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ। গতকাল সকালেই বাইডেন ঘোষণা দেন, তারাই এই দৌড়ে জিতছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আমার সহ-নাগরিকরা, জয়ের চ‚ড়ান্ত ঘোষণা এখনও হয়নি বটে, তবে সংখ্যা স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য কথা বলছে। আমরাই এ দৌড়ে জিতছি।’ তিনি বলেন, ‘এ দৌড়ে আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব। কারণ গোটা দেশ ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে রয়েছে।’
জয়ের খবরে নিউ ইয়র্ক থেকে লাসভেগাস, পেনসিলভেনিয়া থেকে টেক্সাস- সর্বত্রই উল্লাসে মেতেছেন বাইডেন-সমর্থকরা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের জয় নিয়ে নিশ্চিত সমর্থকদের অনেকেই মুখে শোনা গিয়েছে, ‘মানুষ তাদের মনের কথা বলেছেন।’ পেনসিলভেনিয়া জয়ের আগেই ডেমোক্র্যাটরা জিতে নিয়েছিল মিশিগান বা উইসকনসিনের মতো রাজ্য। ৪ বছর আগে যা রিপাবলিকানদের দখলে ছিল। বাইডেন তাই বলেছেন, ‘৪ বছর আগে গুঁড়িয়ে যাওয়া ‘বøু-ওয়াল’-কে আবার গড়ে তুলেছি।’ বাইডেন তার প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পেইনের শুরু থেকেই তিন রাজ্য মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে জিতে ডেমোক্র্যাটিক ‘নীল দেয়াল’ পুনর্র্নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। এটি কেবল ইলেক্টোরাল ভোট জেতার উদ্দেশ্যেই নয়, উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার ওই শিল্প রাজ্যগুলোর শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত শেণীর ভোটারদের সমর্থন অর্জন করাটাও ডেমোক্র্যাটিকদের জন্য নৈতিক বিজয়। কারণ, দলটি সবসময় ওই দুই শ্রেণীর পক্ষেই কথা বলে এসেছে। ফলে পেনসিলভেনিয়া জয়ের সাথে সাথেই বাইডেনের সপ্ন বাস্তব হলো। ডেমোক্র্যাটিকদের জন্যও এটি এক অসাধারণ অর্জন।
পেনসিলভেনিয়ার তুলনায় জর্জিয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় রিপাবলিকানদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। সংখ্যার বিচারে ৪ হাজারের বেশি ভোটে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও সেই ব্যবধান কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ওই রাজ্যের কর্মকর্তারা জর্জিয়াতে ফের গণনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। জর্জিয়ার সাফল্যের কথাও এদিন বাইডেনের মুখে শোনা গেছে। তিনি বলেছেন, ‘৪ ঘণ্টা আগেও আমরা জর্জিয়াতে পিছিয়েছিলাম। এখন আমরাই এগিয়ে। ওখানেও আমরাই জিতব।’ অ্যারিজোনাতেও লিড বজায় রয়েছে বাইডেনের। ওই রাজ্যের ফিনিক্স এবং শহরতলি থেকে হাজার হাজার ব্যালট জমা পড়েছে ভোটগণনা কেন্দ্রে। অন্যদিকে, নেভাদায় নিজের লিড ট্রাম্পের থেকে দ্বিগুণ করে ফেলেছেন বাইডেন। প্রায় ২২ হাজার ৬০০ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
এখন শুধু জর্জিয়ার ফল ঘোষণার অপেক্ষা। সেখানে রয়েছে ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট। বাইডেন পেয়েছেন ২৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৫ ভোট আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ২০৭ ভোট। রাজ্যের নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য পাঠানো ৮ হাজার ভোট আসা বাকি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবারের মধ্যে এসব ভোট আসলে সেটা গণনায় যোগ হবে। এসব ভোটের বেশিরভাগই আটলান্টা আর সাভান্নাহের, যেসব এলাকা প্রধানত বাইডেন সমর্থক। রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্রাড রাফেন্সবের্গার জানিয়েছে, রাজ্যটির ভোট পুনরায় গণনা করা হবে। অর্থাৎ এই রাজ্যের চূড়ান্ত ফলাফল জানতে বেশ অপেক্ষা করতে হবে। বাইডেনের প্রয়োজনীয় ইভি অর্জিত হলেও জর্জিয়াতে বিজয় তার সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করবে। স্থাপিত হবে ৩০০ ইভি জয়ের অনন্য নজিড়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।