মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন নির্বাচনে ভোটগণনার শেষ মুহূর্তে এসেও দোদুল্যমান পরিস্থিতি। তবে এখন পাল্লা অনেক ভারী জো বাইডেনের দিকেই। কোন মিরাকল না ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনই হোয়াইট হাউসের দখল নিতে যাচ্ছেন। এখনও ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে যে পাঁচটিতে ফল ঘোষণা হয়নি, তার তিনটিতে এগিয়ে গিয়েছেন বাইডেন। এর মধ্যে জর্জিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে রীতিমতো সুতায় ঝুলছে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান। সেখানে ভোট গণনায় জো বাইডেন এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ১ হাজারেরও কম ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন। আর মাত্র কয়েক হাজার ভোট গণনা বাকি আছে। পাশাপাশি, পেনসিলভেনিয়াতেও গতকাল এগিয়ে গিয়েছেন বাইডেন। আর নেভাদাতে আগে থেকেই এগিয়ে ছিলেন তিনি।
তবে কঠিন হলেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনাও। সরকারীভাবে ঘোষিত রাজ্যগুলির নিরিখে এখন ফল বাইডেন ২৫৩, ট্রাম্প ২১৪। অ্যারিজোনাতে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাইডেনের প্রাপ্ত ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ২৬৪। জয় নিশ্চিত করতে তার প্রয়োজন আর মাত্র ৬টি ইলেক্টোরাল ভোট। এর মধ্যে চমকপ্রদভাবে জর্জিয়ায় এগিয়ে গিয়েছেন বাইডেন। জর্জিয়ার ১৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। তবে জর্জিয়ায় বাইডেন জয় পেলে তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাইডেনের প্রাপ্ত পপুলার ভোটের সংখ্যা ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ২৭টি। তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। সংখ্যার হিসাবে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৯টি ভোট।
উইসকনসিন এবং মিশিগানের মতো রিপাবলিকান ঘাঁটি বলে পরিচিত রাজ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ায় আগেই পাল্লা ভারী ছিল ডেমোক্র্যাটদেরই। এবার জর্জিয়ারও দখল নিতে চলেছেন বাইডেন। জর্জিয়ায় বাইডেন জয় পেলে তা হবে ডেমোক্র্যাট পার্টির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এই রাজ্য ১৯৬৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চার বার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে শেষ বার এই রাজ্য থেকে জিতেছিলেন বিল ক্লিনটন, ১৯৯২ সালে। জর্জিয়ার আশে-পাশের রাজ্যগুলো সব রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে, আমেরিকার রাজনৈতিক মানচিত্রে যেগুলো লাল রং-এ দেখানো হয়। বাইডেন জয়ী হলে মানচিত্রে জর্জিয়া হবে লাল সমুদ্রে একটি নীল দ্বীপ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকানরা। কিন্তু গণনা যত এগিয়েছে ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন বাইডেনের ডেমোক্র্যাটরা। গতকাল দুপুর পর্যন্তও ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন দেড় হাজারের মতো ভোটে। কিন্তু বিকালে গণনায় দেখা গেছে, ট্রাম্পকে পিছনে ফেলে ৯১৭ ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন বাইডেন। ফলে এখানে যে কেউ জিততে পারেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই জর্জিয়ায় জিতে গেলেই বাইডেনের সামনে কার্যত হোয়াইট হাউসের রাস্তা পরিষ্কার।
পেনসিলভেনিয়াতেও গতকাল রাতে লিড নিয়েছেন বাইডেন। এই রাজ্যে ইসি ভোট ২০টি। গতকাল রাত পর্যন্ত গণনা হয়েছে ৯৮ শতাংশ ভোট। তাতে বাইডেন ট্রাম্পের থেকে ৫ হাজার ৫৯৭ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার এই ব্যবধান ছিল দেড় শতাংশেরও বেশি। তবে নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প এগিয়ে প্রায় দেড় শতাংশে। এখানেও গণনা শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশের মতো। এই তিন রাজ্যই রিপাবলিকানদের ঘাঁটি। পাশাপাশি নেভাদাতেও ১১ হাজার ৪৩৮ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। সেখানে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৬। ইসি ভোটের নিরিখে তিনটিই বড় রাজ্য। ফলে জর্জিয়া বা পেনসিলভেনিয়ার যে কোনও একটিতে রিপাবলিকানরা জিতলেই কিন্তু বাইডেনের জয় নিশ্চিত। আলাস্কায় (ইসি ভোট ৩) ট্রাম্পের জয় প্রায় নিশ্চিত। অন্য দিকে ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি দুই রাজ্য অ্যারিজোনা (ইসি ভোট ১১) এবং নেভাদায় (ইসি ভোট ৬) এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। অ্যারিজোনায় দু’জনের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান দেড় শতাংশের মতো। নেভাদায় ১ শতাংশেরও কম। পর্যবেক্ষকদের মতে, অ্যারিজোনা বা নেভাদা হারিয়েও যদি জর্জিয়া বা পেনসিলভেনিয়ায় জিততে পারেন বাইডেন, তা হলেই কিস্তি মাত করে দিতে পারবেন। উল্টো দিকে অঙ্কের হিসেবে ট্রাম্পের সামনেও রাস্তা খোলা রয়েছে। আলাস্কায় জয় প্রায় নিশ্চিত তার। পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া এবং নর্থ ক্যারোলিনা ধরে রেখে যদি অ্যারিজোনা বা নেভাদার যে কোনও একটি শেষ মুহ‚র্তে জিতে যান, তা হলে কিন্তু দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউসের মসনদে তিনিই বসবেন। যদিও এই সমীকরণ বেশ কঠিন বলেই মনে করছেন আমেরিকার ভোট পর্যবেক্ষকরা।
ট্রাম্পের ভোটগণনা স্থগিতের দাবি খারিজ: এদিকে, হারের মুখে ভোট গণনা স্থগিতের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্প শিবিরের আনা গণনায় কারচুপির অভিযোগ ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছে মিশিগান ও জর্জিয়ার আদালত। ওই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তার পরেও নাছোড় ট্রাম্প। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। জর্জিয়া নিয়ে রিপাবলিকানদের নালিশ, চেথাম কাউন্টির এক অবজার্ভার দেখেছেন নির্দিষ্ট সময়ের পরে পৌঁছনো ব্যালট বেআইনিভাবে বৈধ ব্যালটের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। মামলাগুলি গৃহীত হয়েছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও ট্রাম্প নিজে টুইট করেছেন, ‘পেনসিলভেনিয়াতে বড় আইনি জয়’। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্ব›দ্বীর ভোটের ব্যবধান কয়েকটি ক্ষেত্রে ১ শতাংশেরও কম। ফলে যে কোনও মুহ‚র্তে পরিস্থিতি বদলের সম্ভাবনা। যদিও ঘোষিত ফলের হিসেবে ট্রাম্পের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকায় বাইডেনের পক্ষে যে কোনও একটি রাজ্যে জেতাই যথেষ্ট। ট্রাম্পকে জিততে হবে ৪টি রাজ্যেই। অ্যারিজোনা এবং আলাস্কায় ভোটগণনা শেষ হলেও এখনও কিছু বিতর্কের জেরে আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশের খবর। ওই দুই রাজ্যে ১১ এবং ৩টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। কিন্তু ৪ রাজ্যের পাল্লা বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে ঝুঁকে পড়লেই ফের চার বছরের জন্য ক্যাপিটল হিলের দখল কায়েম করবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং নেভাদা রাজ্যের দিকে তাকিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী দুই শিবির। সব মিলিয়ে চার দিন পরেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভোটের গণনা অব্যাহত। সূত্র : সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।