Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রণোদনার অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সরকারের তরফ থেকে ১৯ খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার যে প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করে তাতে বড় শিল্পগুলো উপকৃত হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত তেমন উপকৃত হয়নি। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার টাকা পেয়েছে তাতে মোট কর্মসংস্থানের ৮ শতাংশ কর্মজীবী উপকৃত হয়েছে। করোনার কারণে কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে থাকা ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রণোদনার কথা বলা নেই। প্যাকেজগুলোর অর্ধেকের বেশিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয় উল্লেখ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের দেয়া এ প্রণোদনা সুবিধার কথা জানেই না। এর জন্য অর্থছাড় ও ঋণ দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা ও যথাযথ প্রচারের অভাবকে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন। সেন্টর ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও অক্সফাম আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেমিনারে বলা হয়েছে, প্রণোদনা প্যাকেজের পুরোটা বাস্তবায়ন করা গেলে মোট শ্রমশক্তির ১২ শতাংশ এর সুবিধা পাবে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাঠামোগত অবস্থান ও দক্ষতার কারণে প্রণোদনা প্রাপ্তির সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতে প্রণোদনার কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়েছে।

করোনার কারণে দেশে বেকারত্বের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশেচ্ছুকদের সাথে কর্ম হারানো বেকারের সংখ্যা এখন জনসংখ্যার অর্ধেক। দারিদ্র্যের হারও একই সঙ্গে বেড়েছে। করোনার আগে এ হার ২৪.৩ শতাংশ থাকলেও তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, করোনা একদিকে দরিদ্রকে অতি দরিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে, অন্যদিকে বেকারত্বের হার হু হু করে বাড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে যারা কর্মরত তাদেরও অনেকে বেকার হয়ে পড়ছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতরা করোনায় বিধ্বস্থ হয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৬ কোটির বেশি মানুষ যুক্ত। করোনায় তারা কর্ম ও পুঁজি হারিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। নতুন করে শুরু করলেও তা সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতদের অবদান ৫০ ভাগ। অথচ তাদের জন্য তেমন কোনো প্রণোদনার অর্থ বরাদ্দ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতরাও যে ভাল আছে, তা মনে করার কারণ নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করে কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রণোদনার অর্থ যথাযথভাবে ছাড় দেয়া হলে এ খাতের দুর্দশা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হতো। দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত গার্মেন্টে করোনার শুরুতেই সরকার ত্রিশ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনামূলক অর্থ বরাদ্দ করে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দেখা যাচ্ছে, গার্মেন্ট ও বড় শিল্প খাতের বেশিরভাগ অর্থছাড় হয়েছে। বড় শিল্পখাতে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৭০.৮ শতাংশ অর্থ ছাড় কারা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বরাদ্দকৃত ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ছাড় হয়েছে মাত্র ২৮.৪ শতাংশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের অনেকে প্রণোদনার খবর জানে না বলে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তুলনামূলক এ চিত্র থেকে বোঝা যায়, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া ও কাঠামোগত দিক থেকে দক্ষ হওয়ায় প্রণোদনার অর্থ পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও অর্থ ছাড়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহও বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি জড়িত থাকায় অর্থ ছাড় দ্রæত হয়ে যাচ্ছে। কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বরাদ্দ কম থাকায় সেদিকে যেন অর্থছাড় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আগ্রহ কম। তারা ঋণ প্রদানের নানা জটিলতার অজুহাতে অর্থছাড়ে তেমন উৎসাহী হয়ে উঠে না। এমনকি সরকারের প্রণোদনার বিষয়টিও জানান দিচ্ছে না। এতে কৃষি ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তারা প্রণোদনার সুবিধার বাইরে থাকায় অর্থসংকটে পড়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটিও ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন। তার এ আহ্বান যথার্থ এবং সময়োপযোগী। তাঁর এ আহ্বান জানানোর অন্যতম কারণ, তাঁর সরকারের বড় অংকের প্রণোদনামূলক অর্থ বরাদ্দ করা। এ অর্থ পাওয়ার মধ্য দিয়েই অনেক তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। উদ্যোক্তা হলে তরুণরা যেমন স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, তেমনি অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে প্রণোদনার অর্থের সুষ্ঠু বণ্টন এবং তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কর্তৃপক্ষের নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সরকার অর্থ দিয়েছে, অথচ তার বণ্টন ব্যবস্থায় বৈষম্য কিংবা অর্থছাড়ের অদক্ষতায় প্রণোদনার প্যাকেজ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া কাম্য হতে পারে না। এখন সময় এসেছে, প্রণোদনার অর্থ কোথায়, কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং কারা পাচ্ছে, তার সঠিক হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা। কেউ পাবে, কেউ পাবে না কিংবা কেউ তা জানবে না, এ পরিস্থিতি চলতে পারে না। অর্থনীতিকে ধরে রাখতে এবং এগিয়ে নিতে সরকারের আন্তরিক ও সদিচ্ছামূলক প্রণোদনার এ উদ্যোগকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন