মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি জিতলে ডোনাল্ড ট্রাম্প হবেন গত ২৮ বছরের মধ্যে প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি পুণরায় নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। যাই হোক একটি জিনিস নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, হারলেও সহজে পরাজয় মেনে নেবেন না ট্রাম্প।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়রের কাছে হারের মুখে এসে ট্রাম্প জালিয়াতির ভিত্তিহীন দাবি তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার আশা, হয় তিনি ক্ষমতায় থাকবেন অথবা হার মানতে অস্বীকার করবেন। তিনি এখনও হেরে যাওয়া রাজ্যগুলিতে পুনর্নির্বাচনের জন্য একটি সংকীর্ণ পথ খুঁজে পেতে পারেন। ইতিমধ্যে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, হেরে গেলে তিনি ফল না মেনে লড়াই চালিয়ে যাবেন। হেরে গেলেও ট্রাম্প অন্তত আরও ৭৬ দিন ক্ষমতায় থাকবেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি তার ক্ষমতা যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারবেন এবং বিরোধীদের উপরে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। তিনি করোনা মহামারির মধ্যেই এফবিআই ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার রে ও সরকারের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি এস ফাউসিসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে বা পাল্টাতে পারেন, যারা তার ইচ্ছা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এবং যদি জানুয়ারির ২০ তারিখে তাকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে বাধ্য করা হয়, তবে ট্রাম্প প্রত্যাশার চেয়ে বেশি স্থিতিশীল থাকতে পারেন এবং নিশ্চিতভাবেই আমেরিকানদের জন্য একটি শক্তিশালী এবং বিপর্যয়কর শক্তি হিসাবে থেকে যাবেন। তিনি এবারের নির্বাচনে ৬ কোটি ৮৭ লাখের মতো ভোট পেয়েছেন যা ২০১৬ সালে প্রাপ্ত ভোটের থেকেও প্রায় ৫৭ লাখ বেশি। তিনি প্রায় ৪৮ শতাংশ পপুলার ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ, তিনি চার বছরের কেলেঙ্কারী, বিপর্যয়, অভিশংসন ও করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরেও জনসাধারণের প্রায় অর্ধেকের সমর্থন ধরে রেখেছেন। এটি তাকে এমন একটি ভূমিকা পালনের শক্তি ভিত্তি দেয় যা জিমি কার্টার এবং জর্জ বুশের মতো প্রথম মেয়াদের পর পরাজিত প্রেসিডেন্টরা পাননি। ট্রাম্প ফক্স নিউজের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য তার নিজের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চালু করার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে ইদানীং তিনি ২০২৪ সালে ৭৮ বছর বয়সে আবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা বলছেন। প্রার্থী হতে না পারলেও টুইটারে তার ৮ কোটি ৮০ লাখ সমর্থক তাকে প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হিসাবে তুলে ধরে এবং উঠতি রিপাবলিকানদের কাছে একজন কিংমেকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে।
গত চার বছরে ট্রাম্পের সাথে বিচ্ছেদ হওয়া অল্প কয়েকজন রিপাবলিকান অফিসারদের মধ্যে একজন অ্যারিজোনার সাবেক সিনেটর জেফ ফ্লেক এ বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল থেকে যদি কিছু স্পষ্ট হয় তবে তা হ’ল প্রেসিডেন্টের বিশাল সংখ্যক অনুসারী রয়েছে এবং শিগগিরই তিনি রাজনীতির মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছুক নন।’
এর ফলে ট্রাম্পকে ক্ষমতা ছাড়ার পরেও রিপাবলিকান সিনেটরদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। আইন পাশ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি প্রেসিডেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী প্রার্থীদের নিয়োগপত্র সুপ্রিম কোর্ট পেশ করে সিনেটই। ফলে প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেন বসলেও, সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগুরু থাকায় তাকে শাসন চালাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রিপাবলিকানদের একটি নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ট্রাম্প নিজেকে তার দলের সব্বোর্চ নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তার কাছে রয়েছে সমর্থকদের সম্পর্কে একটি অসাধারণ তথ্যভাণ্ডার, যা ভবিষ্যতের প্রার্থীরা পেতে চাইবেন। ভবিষ্যতে হয়েতো রিপাবলিকান নেতারা তার কাছ থেকে সমর্থন চাইতে ফ্লোরিডায় অবস্থিত তার মার-এ-লেগো এস্টেটে ভিড় করবেন। ট্রাম্প রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ জিতে তার নিজের দলের মধ্যে শক্ত সমর্থন পেয়েছেন। তিনি বর্ণবাদী বক্তৃতা সত্ত্বেও চার বছর আগের তুলনায় কালো ভোটারদের (১২ শতাংশ) এবং হিস্পানিক ভোটারদের (৩২ শতাংশ) ভোট তিনি এবারের নির্বাচনে বেশি পেয়েছেন।
এ বিষয়ে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম কৌশলবিদ স্যাম নুনবার্গ বলেন, ‘তিনি যদি পরাজিত হন, তাহলে তার প্রতি দলের ভোটারদের এবং তিনি যে নতুন ভোটারদের দলে নিয়ে এসেছেন তাদের অবিশ্বস্ত আনুগত্য বজায় থাকবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে নায়ক হয়ে থাকবেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে হয় ট্রাম্প অথবা তার মনোনীত কেউ প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবেন।’
তবে সব রিপাবলিকানই একই মত পোষণ করেন না। অনেকেই মনে করেন, ‘ট্রাম্প যদি হেরে যান তবে দল তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে এবং তিনি বিদ্রূপ হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ফ্লোরিডার সাবেক হাউস রিপ্রেজেন্টিভ কার্লোস কার্বেলো বলেন, ‘আর কোনও ট্রাম্প আর কখনও হবে না। কপিক্যাটস ব্যর্থ হবে। তিনি ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাবেন, তবে আমেরিকার ইতিহাসের এই অশান্তিকাল থেকে প্রাপ্ত চিহ্নগুলি কখনই মুছে যাবে না।’
প্রকৃতপক্ষে, ট্রাম্প তার ২০১৬ সালে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে সময় তিনি হিলারি ক্লিনটনের কাছে পপুলার ভোটে হেরেও বিজয় অর্জন করেছিলেন। এবার তিনি এমন কোন রাজ্যে জিততে ব্যর্থ হয়েছেন যেখানে তিনি গতবার হেরেছিলেন এবং বুধবার পর্যন্ত তিনি গতবার জয় পাওয়া দুই বা তিন রাজ্যে বাইডেনের কাছে হারিয়েছেন। সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।