মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলাফলে চরম নাটকীয়তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গতরাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী রিপাবলিকান জো বাইডেন জিতেছেন ২৩৮টি ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন ২১৩টি। বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৫৫ হাজার ৭১১ ভোট। এদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ৭৩ লাখ ২১ হাজার ৯৩৭টি ভোট। শতকরা হিসেবে তাদের দু’জনের ভোট প্রাপ্তির হার যথাক্রমে ৫০ দশমিক ২ ও ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। এতে দেখা যাচ্ছে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। ভোট শতাংশের বিচারে বোঝা গিয়েছিল জো বাইডেন এগিয়ে থাকবেন। সেই সমীক্ষা সত্যি প্রমাণ করে প্রাপ্ত ভোটে এগিয়ে থাকতে দেখা বাইডেনকে।
আমেরিকায় বেশ কিছু রাজ্য আছে যেখানে ভোট না হলেও চলে। তারা সব সময়েই হয় রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকে আছেন। তাদের নিয়ে আলোচনা কম। অন্য দিকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেইসব রাজ্য, যেখানে সামান্য শতাংশের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এগুলিই সুইং স্টেট। দোদুল্যমানতার শেষে এরা কোন দিকে ঘেঁষবেন তার ওপরই নির্ভর করবে সামগ্রিক ভোটের ফল। মনে রাখতে হবে, বেশি ভোট পেলেই কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না। তা হলে গতবার হিলারি ক্লিনটনই ক্ষমতায় বসতেন। এ বারেও সেই একই কথা। সেই কারণেই সমীক্ষা বলেছিল দু’শতাংশের মত ভোটে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও তিনি একেবারেই নিশ্চিন্ত নন। কারণ কম ভোট পেয়েও হিসেব করে কয়েকটি রাজ্যে জিতে গেলেই রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় যেতে পারে। সেই হিসেবে নাকি তিন-চার শতাংশ ভোটে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও আসনের হিসেবে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। আর মতদানের হিসেবে ৫ শতাংশের মতো বেশি থাকলে তবেই নিশ্চিত হতে পারতেন বাইডেন। তেমনটা এখনও হচ্ছে না। সেই সঙ্গে খবর পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিচ্ছু রাজ্যে ভোট গণনা নিয়ে যথেষ্ট অশান্তি হবে। ভোটের সম্পূর্ণ ফলাফল আসতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
বিষয়টা যে বেশ জটিল, সেটা বোঝা যাচ্ছে। কারণ গণনার মাঝেই মাঝরাতে বক্তব্য রেখেছেন বাইডেন। দাবি করছেন, তিনিই জিতবেন। আবার গভীর রাতে টুইট করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা ভোট দিচ্ছেন অনেক জায়গায়। একে তিনি বলছেন ‘ভোট চুরি’। পাশাপাশি স্থানীয় সময় বেলা একটা নাগাদ ট্রাম্প বলে দিয়েছেন তিনিই জিতছেন। একইসঙ্গে অবশ্য গণনা বন্ধের দাবিতে আদালতে যাওয়ার হুমকিও ফের দিয়েছেন তিনি।
কোভিডের হানায় বাকি বিশ্বের মতই আমেরিকাও নাজেহাল। বেকারত্ব আকাশ ছুঁচ্ছে। কালো মানুষের প্রতি অবিচারে ফুঁসছে বড় অংশের মানুষ। মার্চ এপ্রিলে সাধারণ করদাতাদের কাছে কিছু ডলার পৌঁছলেও, তারপর থেকে কিন্তু খুব বেশি কিছু ভাবতে পারেননি ট্রাম্প সাহেব। ভোটের আগে জনগণের কাছে কোভিড প্রতিষেধক পৌঁছে দিতে পারলে হয়তো অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ছিল বর্তমান প্রেসিডেন্টের। তেমনটাও ঘটেনি। ফলে সোজা ভাবনায় ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সমীক্ষাও তাই বলছিল গত দু’মাস ধরে। কিন্তু একেবারে শেষের দিকে কোলাকুলি সেয়ানে সেয়ানে। মনে রাখতে হবে, বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন এই নির্বাচনে। যা অনেক সময়েই ক্ষমতা বদলের লক্ষণ। তবে হেরে গেলে নির্বাচনী ফলাফল না মেনে নেওয়ার যে রেওয়াজ, তা সাধারণত পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর। এবার সেই ছোঁয়াচ মার্কিন দেশেও লেগেছে। এতটাই বিভাজনের রাজনীতি ঢুকে পড়েছে সে দেশে যে ট্রাম্প হেরে গেলে নাকি হোয়াইট হাউস না ছেড়ে আইনি লড়াইতে নামবেন। বাইডেনও তেমনটাই বলছেন। যাই হোক, সে সব রাজনীতির ভবিষ্যৎ। আপাতত খেলা শুধু সংখ্যার।
যে সুইং স্টেটগুলোর কথা এইসময় মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, তার মধ্যে শুরুতেই থাকবে ফ্লোরিডা। এখানে গত বার এক শতাংশের সামান্য বেশি ভোটে জিতেছিলেন ট্রাম্প। এ বারে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় তিন শতাংশেরও বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন তিনি। মোটের ওপর গত নির্বাচনে যে ক’টা রাজ্যে সামান্য ভোটে জিতেছিলেন ট্রাম্প, সেগুলিতে কিন্তু খুব খারাপ ফল করছেন না তিনি। এর মধ্যে জর্জিয়া, মিশিগান, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলিনা উল্লেখযোগ্য। পেনসিলভেনিয়াতেও বিপুল ভাবে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। তবে এখানে কয়েকটা গন্ডগোল আছে। মিশিগানে এই সময় ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও সেখানে ভোট গোণা অনেকটা বাকি। তার মধ্যে আবার প্রচুর ভোট আগে দেয়া। সেখানে আবার ৭০ শতাংশই ডেমোক্র্যাটদের ভোট রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পেনসিলভেনিয়াতেও একই ছবি। ফলে ট্রাম্পের এগিয়ে থাকা সম্পর্কে এখনও বেশ সন্দেহ আছে। অন্য দিকে ট্রাম্পের কাছ থেকে অ্যারিজোনা ছিনিয়ে নিতে চলেছেন বাইডেন। এখানে আছে ১১টি আসন। গত বারের ব্যবধান এখানেই বাইশটি কমে যাবে। এক জনের ১১ কমে অন্যের ১১ বাড়লে তেমনটাই হয়।
চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে কয়েকটি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যের ওপরে। কিন্তু ব্যাপক মেইল ভোটের কারণে চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় দেরি হতে পারে। তাতে নির্বাচনে জেতার আশা ছাড়ছে না কোনো পক্ষ। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো তথ্য বিশ্লেষণ করে যেসব ফলাফল দিচ্ছে তাতে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। ফক্স নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের দখলে থাকা অ্যারিজোনায় জিতেছেন বাইডেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। যদি এ তথ্য নিশ্চিত হয় তবে পুরো ভোটচিত্র বদলে যেতে পারে। তবে অন্য কোনো গণমাধ্যমে অ্যারিজোনা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি। রিপাবলিকান গভর্নর ডগ ডসি বলেছেন, ফলাফল নিয়ে এখনই কথা বলার সময় আসেনি।
অনেক আগে থেকেই ট্রাম্প ফ্লোরিডায় জিতে গেছেন বলে গণমাধ্যমগুলোতে তুলে ধরা হচ্ছে। নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ার ফলাফলও পরিষ্কার করা হয়নি। এখন পর্যন্ত সেখানে ৯৫ ও ৮৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা যে ব্যাপক জয়ের আশা করেছিলেন, ফলাফলের প্রাথমিক চিত্রে তা প্রতিফলিত হয়নি। ফ্লোরিডায় তারা জিততে পারলে চিত্র অন্য রকম হতে পারত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই পক্ষের ভোটযুদ্ধ শেষতক সুইং রাজ্যগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেনসিলভানিয়া। পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়াতে ভোট গণনার হার অনেকটাই ধীর। সেখানে ব্যাপক মেইল ভোট থাকায় পরিস্থিতিও জটিল। ডাকযোগে ভোট আসতে দেরি হওয়ায় ট্রাম্পের লাভ। কারণ এগুলো ডেমোক্র্যাট ভোট হতে পারে। ট্রাম্প নির্বাচনের পর দেরিতে আসা ভোটকে অবৈধ বলেছেন। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাটরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে সিনেটের দখলের আশা তাদের পূর্ণ নাও হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স, সিবিএস, সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।