মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মার্কিন নিবার্চনে চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ চলছে। এরই মধ্যে নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যে একটি করে কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন দুই প্রার্থী। স্মরণাতীত কালের মধ্যে এবারই সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ভোটের মধ্য দিয়েই শেষ হতে যাচ্ছে না ঘটনার ঘনঘটায় পরিপূর্ণ এ নির্বাচনের উত্তেজনা। পরিস্থিতি বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, ফলাফল যা-ই হোক, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন উভয়েই একই সময়ে নিজেদের বিজয়ী দাবি করে ঘোষণাও দিয়ে দেয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সময়ের ভিন্নতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন সময়ে ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা হয়। ঐতিহ্য মেনে নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের ডিক্সভিল নচ শহরের একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ হয়েছে। এর একটিতে সব ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন বাইডেন। অন্যটিতে ১৬-৫ ভোটে জিতেছেন ট্রাম্প। ভোটগ্রহণ চলছে ভেরমোন্টের, কানেকটিকাট, ইন্ডিয়ানা, কেনটাকি, মাইন, নিউ জার্সি, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ডেলাওয়ার, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ইলিনয়, লুইজিয়ানা, মিশিগান, মিসৌরি, পেনসিলভানিয়া, রোড আইল্যান্ড, সাউথ ক্যারোলিনা, ক্যালিফোর্নিয়া, আইডাহো এবং নেভাডায়। সবশেষ ভোটগ্রহণ হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে।
তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মার্কিন নির্বাচনের চিত্র অন্যরকম। নির্বাচনে জনস্বাস্থ্যই প্রধান ইস্যু। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি, মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার জনের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ আছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সঙ্গে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রশংসাও আছে। তবে ভোটের দিনের জন্য অপেক্ষা করেননি অনেক ভোটার। মোট ২৪ কোটি ভোটারের মধ্যে ১৯ কোটির মত ভোটার এবার নিবন্ধন করেছেন। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীসহ আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন ৯ কোটি ৬০ লাখ।
মার্কিন এক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিজনেস ইনসাইডার বলছে, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থী কোন পরিস্থিতিতে নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা দেবেন, তা এরই মধ্যে ঠিক করে রাখা হয়েছে। দুই শিবির-সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি ধারণা এরই মধ্যে পাওয়াও গিয়েছে। তবে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেয়া মানেই যে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজের প্রয়োজনীয় ভোট অর্জন করে নেয়া নয়, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল রয়েছেন সংশ্লিষ্টদের সবাই। প্রকৃতপক্ষে প্রার্থীদের নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেয়ার চেয়েও প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
এতদিন পর্যন্ত মার্কিন গণমাধ্যম নির্বাচনের রাতেই বিজয়ী প্রার্থী বা জয়ের কাছাকাছি থাকা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এবারকার পরিস্থিতি ভিন্ন। আগাম ভোটসহ নানাবিধ কারণে এরই মধ্যে মার্কিন নির্বাচন যেমন উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তেমনি এ নিয়ে ধোঁয়াশাও বেড়েছে অনেক। সেক্ষেত্রে উভয় প্রার্থী যদি একই সময়ে নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করে দেয়, সেক্ষেত্রে এ উত্তেজনা আরো জোরালো হয়ে উঠতে যাচ্ছে। অ্যাক্সিওসের তথ্য বলছে, যদি শুরুর দিককার ফলাফলে ট্রাম্পের এগিয়ে থাকার কোনো ধরনের আভাস পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মার্কিন সময় অনুযায়ী গতকাল রাতের মধ্যেই নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাইডেনের পরিকল্পনা আরেকটু গভীর। যদি মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো তথ্য ও প্রাক্কলনের ভিত্তিতে তার বিজয়ের সম্ভাবনাকে জোরালোভাবে প্রচার করতে থাকে, সেক্ষেত্রে নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করবেন জো বাইডেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাইডেনের পরিকল্পনা হলো, ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তিনি। এর ঠিক পর পরই যত দ্রুত সম্ভব নিজ প্রশাসনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করে দেবেন তিনি। সেক্ষেত্রে তার শরীরী ভাষা হবে এমন, বাইডেনের হোয়াইট হাউজের অধিপতি হয়ে বসা এক প্রকার নিশ্চিত। বাইডেনের শিবিরের এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণের কারণ হিসেবে অ্যাক্সিওস জানাচ্ছে, ভোটের ফলাফল নিয়ে এরই মধ্যে আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ কারণেই যত দ্রুত সম্ভব এসব কাজ সেরে ফেলতে চাইছে জো বাইডেনের নির্বাচনী শিবির। ফলে সার্বিকভাবে এখন পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, উভয় প্রার্থীরই একই সময়ে নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দেয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি ভোট গণনা চলাকালে বা বিষয়টি আদালতে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই।
এক্ষেত্রে ২০০০ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে জো বাইডেনের শিবির দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওস। ওই সময়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর প্রথমে নিজের হার এক প্রকার মেনে নিলেও পরে ফ্লোরিডায় জর্জ বুশের সঙ্গে তার ব্যবধান কমে আসার পর সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ওই সময়ে শেষ পর্যন্ত ভোট পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিষয়টি মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্তও গড়িয়েছিল, যাতে শেষ পর্যন্ত জর্জ বুশেরই জয় হয়। ওই সময়ে জর্জ বুশের কৌশল বিশ্লেষণ করে অ্যাক্সিওস জানাচ্ছে, জর্জ বুশ সে সময় উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে আগেই নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। রিপাবলিকান জর্জ বুশ যে সময় বিজয়ীর মতো আচরণ করছিলেন, ঠিক সে সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটদের হাবভাব ছিল পুরোপুরি রক্ষণাত্মক। এ বিষয়ে জো বাইডেনের শিবিরের ব্যবস্থাপক জেন ও’ম্যালি ডিক্সনের ভাষ্য হলো, এক্ষেত্রে আমরা আমাদের তথ্য-উপাত্ত ও পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের বিশ্লেষণকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে নিশ্চিত করব, জো বাইডেনই মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে যাচ্ছেন। সূত্র: রয়টার্স, এপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।