Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিহারে দ্বিতীয় দফার সাথে ১০ রাজ্যের ৫৪টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১২ পিএম | আপডেট : ৩:১৩ পিএম, ৩ নভেম্বর, ২০২০

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনেই আজ বিহারের রাজ্যসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ চলছে। সকালেই ভোট দিয়েছেন বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদি, রাজ্যপাল ফাগু চৌহান, এলজেপি প্রধান চিরাগ পাসোয়ান। একই সাথে চলছে ভারতের ১০টি রাজ্যের ৫৪টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এর মধ্যে উপনির্বাচন ঘিরে সবচেয়ে বেশি সরগরম মধ্যপ্রদেশ। কারণ সেখানে এক সঙ্গে ২৮টি আসনের ভোটগ্রহণ চলছে।

বিহারে আজ দ্বিতীয় দফায় যে ৯৪টি আসনে ভোট, তার একটি রাঘোপুরে প্রার্থী রাষ্ট্রীয় জনতা দলসহ বিরোধী মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী-পদপ্রার্থী তেজস্বী নিজে। পাশ্ববর্তী সমস্তিপুরের হাসানপুরে প্রার্থী লালুপ্রসাদ-রাবড়ি দেবীর বড় ছেলে তেজপ্রতাপ। লালু-রাবড়ির দুই উত্তরসূরির রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের পাশাপাশি ৯৪ আসনেই জোর টক্করের সম্ভাবনা। মধ্য বিহারের এই আসনগুলিই গত বিধানসভায় নির্ণায়ক হয়েছিল। সে বার আরজেডি এবং জেডি (ইউ) জোট মিলে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দখল করেছিল। ৪২টিতে লড়ে ৩৩টিতে জিতেছিল আরজেডি। আর ৪১ আসনে লড়ে নীতীশের পার্টি পায় ৩০টি আসন। ২০১৫ সালের সেই ভোটে এই জোটের কাছে দাঁড়াতে পারেননি নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। ৯৪ আসনের মধ্যে বিজেপি ৬৩টিতে লড়ে জিতেছিল মোটে ২২টিতে। এ বারও এই আসনগুলিতে প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক ছিল দুই শিবিরই। বিজেপি এবং জেডি (ইউ) এ দফায় জোটে যথাক্রমে ৪৬ এবং ৪৩টি আসনে লড়ছে। অন্য দিকে আরজেডি ৫৬টিতে, বাকিগুলিতে কংগ্রেস ও বামেরা। একসময় কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবে থাকা এলাকাটিতে গতবার একটি আসন পেয়েছিল সিপিআইএম-এল (লিবারেশন)। কংগ্রেস জিতেছিল ৭টি আসনে। এ বার কংগ্রেস, লিবারেশন-সহ তিন বাম দল আরজেডির নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধনের শরিক। তাই গত ভোটের নিরিখে আজকের ৯৪ আসনের মধ্যে ৪১টিতে এগিয়ে মহাজোট। গত নির্বাচনের এক বছরের মাথায় আরজেডির সঙ্গ ত্যাগ করা নীতীশ এ বার বিজেপির হাত ধরায় অঙ্কের হিসাবে ৫২টিতে এগিয়ে জেডি (ইউ)-বিজেপি জোট। কিন্তু বিহারি রাজনীতির পাটিগণিত যে এত সহজ নয়, ভালোই জানেন টানা তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ এবং রাজ্য বিজেপি নেতারাও। তাই ভোট-রাজনীতির অঙ্ক মেলাতে এই দফায় প্রচারে এসে সত্তরোর্ধ প্রধানমন্ত্রী মোদি হাঁটুর বয়সি সদ্য তিরিশ পেরোনো তেজস্বীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। জাত সমীকরণের অঙ্কেও সুবিধাজনক অবস্থায় বিরোধী শিবিরই। লালুপ্রসাদের গড়ে তোলা এম-ওয়াই অর্থাৎ মুসলিম-যাদব ভোট এই দফায় মস্ত ফ্যাক্টর। যে ভোটের সুবিধা গত বার পেয়েছিল নীতীশের দল, এ বার তা হবে না।

আরও একটি কারণেও এই দফার ভোট তাৎপর্যপূর্ণ। ৯৪ আসনের হিসাবে বিজেপি যেমন জেডি (ইউ)-র থেকে বেশি আসনে লড়ছে, তেমনই সামগ্রিক ভাবে বিহারে এনডিএ জোটের প্রধান মুখও হতে চাইছে তারাই। নরেন্দ্র মোদির বিহার ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়ার পিছনে জোট সরকার রক্ষার সঙ্গে রয়েছে নিজের দলকে জেডি (ইউ)-র থেকে এগিয়ে রাখার অঙ্কও। বিজেপি-জেডি (ইউ) সম্পর্কের রসায়ন অতীতে বারে বারে ধাক্কা খেয়েছে নীতীশেরই মোদি বিরোধিতার কারণে। তবে সেই মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, যার গায়ে লেগে ছিল গণহত্যার কলঙ্ক। কিন্তু দু’দুবার দল ও এনডিএ-কে দিল্লির মসনদে আসীন করার কৃতিত্ব যার, সেই নরেন্দ্র মোদিকে অস্বীকারের মতো শক্ত মাটি আর নীতীশের পায়ের তলায় নেই। গদি দখলে রাখতে বরং মোদিরই শরণে আজ নীতীশ। এনডিএ ক্ষমতা দখলে রাখতে পারলে এবং বিজেপি পরিকল্পনা মতো জেডি (ইউ)-র থেকে বেশি আসন পেলে পাশা বদলে যেতেও পারে। চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি-সহ ছোট দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি নীতীশকে হটিয়েও দিতে পারে বলে জল্পনা চলছে।

তেমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে আপাতত গদি বাঁচিয়ে ভোটের পর বিজেপির সঙ্গ ত্যাগের ভাবনা নীতীশ শিবিরও চলছে। নীতীশ জানেন, বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে ফের তার পাশে দাঁড়াতে হাত গুটিয়ে থাকতে পারবে না লালুপ্রসাদ, সোনিয়া গান্ধীদের দল। রাজনীতিতে চিরশক্র, স্থায়ী মিত্র বলে কিছু হয় না। সব অঙ্কেই আজকের ভোট আবারও নির্ণায়ক হতেই চলেছে। নীতীশ কুমার, সুশীল মোদিদের মতো এনডিএ’র প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে তেজস্বীর মতো তরুণদের লড়াইয়ের পরিণতিও অনেকটা নির্মিত হয়ে যাবে আজকের ভোটেই।

এদিকে, মহারাষ্ট্রের ভোটের ইতিহাসে একসঙ্গে এত আসনের উপনির্বাচন কখনও হয়নি। তা ছাড়া কংগ্রেস ছেড়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিজেপিতে যোগদানের পরে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে এই ভোটের উপর। উল্টো দিকে কমল নাথেরও ভাগ্যপরীক্ষা। ফলে উপনির্বাচনেই যেন পুরো বিধানসভা ভোটের মেজাজ মধ্যপ্রদেশে।

এ বছরের মার্চে জ্যোতিরাদিত্য-সহ মধ্যপ্রদেশের ২২ বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের জেরে ওই আসনগুলি খালি হয়। পরে আরও কয়েক জনের দলত্যাগ এবং দুই বিধায়কের মৃত্যুর কারণে মোট ২৮টি আসন খালি হয়। জ্যোতিরাদিত্যদের দলত্যাগের জেরে ১৫ মাসের মাথায় পতন হয় কমল নাথের নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী হন শিবরাজ সিংহ চৌহ্বান। সেই দিক থেকে মধ্যপ্রদেশের এই উপনির্বাচন রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গ্বালিয়রের চম্বল অঞ্চলের ৩টি আসনে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থীদের বাদ দিলে অধিকাংশ আসনেই সরাসরি বিজেপি বনাম কংগ্রেসের দ্বিমুখী লড়াই। দু’পক্ষেরই হেভিওয়েট নেতারা প্রচারে নেমেছিলেন। তবে প্রচার পর্বে বিতর্কও কম ছড়ায়নি। ডবরা কেন্দ্রের কংগ্রেস ত্যাগী বিজেপি প্রার্থী ইমরতী দেবীকে ‘আইটেম’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন কমল নাথ। আবার বিধিভঙ্গের অভিযোগে কমল নাথকে তারকা প্রচারক (স্টার ক্যাম্পেনার)-এর উপাধী কেড়ে নেয় নির্বাচন কমিশন। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। অন্য দিকে জ্যোতিরাদিত্য আবার মুখ ফস্কে ‘হাত চিহ্নে’ বোতাম টিপে ভোট দেয়ার কথা বলে ফেলেছিলেন প্রচারে গিয়ে।

এই ২৮ আসনের জন্য প্রার্থী হয়েছেন মোট ৩৫৫ জন। তার মধ্যে রয়েছেন ১২ জন মন্ত্রীও। শিবরাজ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কংগ্রেস ছেড়ে আসা এই নেতাদের মন্ত্রী করেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৬ মাসের মধ্যে তাদের জিতে আসতে হয়। হেরে গেলে খোয়াতে হবে মন্ত্রীর পদ। উপনির্বাচনে মোট ভোটার ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার। মোট বুথ ৯ হাজার ৩৬১টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩৮টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন

কোভিড আবহের মধ্যেই সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। চলবে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত। শুধু কোভিড আক্রান্তদের ভোট দেয়ার জন্য শেষ এক ঘণ্টা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের ১৯ জেলা জুড়ে থাকা এই আসনগুলির নির্বাচনে মোতায়েন করা হয়েছে ৩৩ হাজার নিরপত্তাকর্মী। রয়েছে ২৫০ ফ্লাইং স্কোয়াড, ১৭৩টি নজরদারি দল এবং ২৯৩টি পুলিশ চেক পয়েন্ট। সূত্র: এবিপি, টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ