মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এবার ভারতে মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধ নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপির কতপয় নেতা। কারণ হিন্দু মেয়েরা তাদের নিজ জাতের চেয়ে বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম ছেলেদের বেশি পছন্দ করে। তাই এটা ঠেকাতেই নতুন আইনের চিন্তা করছে তারা। অনেক ভারতীয় তরুণী মুসলিম যুবকদের ভালোবেসে বিয়ে করছে।
আজকাল ভারতে ‘লাভ জিহাদ’ শব্দের ব্যবহার বেড়েছে। সাধারণ মুসলিম যুবকদের সঙ্গে হিন্দু মেয়েদের বিয়েকে এ ধরনের আখ্যা দেয় হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তা এবার আইন করে বন্ধ করার কথা বলছে উত্তরপ্রদেশ বা হরিয়ানার মতো একাধিক রাজ্য।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই প্রসঙ্গে এমনও হুমকি দিয়েছেন, হিন্দু মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে ভিন ধর্মের যারা খেলবে তারা যেন নিজেদের অন্ত্যেষ্টি যাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকে!
তবে দেশটির মুসলিম নেতারা আইন করে তথাকথিত লাভ জিহাদ ঠেকানোর প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে ভারতীয় সমাজে এই ধরনের স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে আবেগ ক্রমশ বাড়ছে এবং রাজনীতিকেরাও তার ফায়দা তুলতে চাইছেন।
গত সপ্তাহে দিল্লির বেশ কাছে হরিয়ানার বল্লভগড়ে নিকিতা তোমার নামে এক হিন্দু মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর ‘লাভ জিহাদ’ নিয়ে ভারতে আবার নতুন করে তুমুল হইচই শুরু হয়।
পরিবারের দাবি, এক মুসলিম যুবক ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে নিকিতাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। এরপরই হরিয়ানা জুড়ে শুরু হয়েছে লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে মহাপঞ্চায়েত, বিক্ষোভ-অবস্থান ও পথ অবরোধ।
রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী অনিল ভিজ ঘোষণা করেছেন, হিন্দু মেয়েদের রক্ষা করতে লাভ জিহাদের “চিকিৎসা করা জরুরি।” দরকার হলে সেটা আইন করেও হতে পারে। এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লালও।
এ দিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টও তাদের এক সাম্প্রতিক রায়ে মন্তব্য করেছে, শুধু বিয়ে করার জন্য কেউ যদি ধর্মান্তরিত হয় তাহলে সেই ধর্মান্তর বৈধ বলে গণ্য হবে না। সেই রায়ের সূত্র ধরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রকাশ্য জনসভা থেকে।
সেই সঙ্গেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “আমাদের মেয়েদের সম্মান নিয়ে যারা খেলবে, তারা যদি নিজেদের না-শোধরায় তাহলে যেন ‘রামনাম সত্য হ্যায়’ ধ্বনির মধ্যে দিয়ে নিজেদের শেষ যাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকে।”
দিল্লিতে সিনিয়র সাংবাদিক নীরজা চৌধুরী বলছেন, “ভারতের সংবিধান ছুঁয়েই শপথ নিয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। তার জানা উচিত দেশের সংবিধান নাগরিকদের যে কোনো ধর্ম, পেশা ইত্যাদি বেছে নেওয়ার অধিকার দেয়। এই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আসলে সাংবিধানিক অধিকার ও আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করার কথাই বলেছেন।”
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য জাফরিয়াব জিলানিও দাবি করেছেন, ‘লাভ জিহাদের’ বিরুদ্ধে আইন করার কোনো এখতিয়ারই মুখ্যমন্ত্রীর নেই।
হায়দরাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসির বক্তব্য, এটা ভারতীয় মুসলিমদের ভিলেন বানানোর আর একটা অজুহাত মাত্র! তার কথায়, “করোনাভাইরাস মহামারিকে যেমন শুরুতে তাবলীগি জিহাদ বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল, সেভাবেই এখন লাভ জিহাদের ধুয়ো তুলছেন আদিত্যনাথ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হলেও তার তো সংবিধানের কিছুই জানা নেই!”
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সমাজ-বিশ্লেষক ড. চারু গুপ্তা মনে করেন, লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন করার কথা বলে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগেই সুড়সুড়ি দিচ্ছে। বলেন, “পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি ভারতে একেবারেই পুরুষশাসিত, আর সেখানে ভাব-ভালোবাসা বা সামাজিক মর্যাদার নামে নিপীড়ন চরম পর্যায়ে যেতে পারে।”
আরও বলেন, “এই লাভ জিহাদের ব্যাপারটাও তাই, এবং মুসলিমরা আমাদের পরিবারের ভেতরে ঢুকে পড়ছে এই ভয় প্রায় প্রতিটা হিন্দু ঘরেই কাজ করে— আর সেটাকেই এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে।”
অবাক করা বিষয় হলো, ভারতের জাতীয় মহিলা কমিশনও তাদের টুইটে লাভ জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করেছে। তারা জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা যে ‘উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে’ সে বিষয়টি নিয়ে সংস্থার চেয়ারপারসন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।