Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে ইস্যুতে ঘায়েল হতে পারেন ট্রাম্প

মার্কিন নির্বাচনে আজ ভোট গ্রহণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা- দু’দিক থেকেই বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি।

প্যানডেমিকের ভয়াবহ এই চিত্র এখনও বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি। বরঞ্চ নির্বাচনের ঠিক আগে সংক্রমণের সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়ছে। প্রতিদিন এখন প্রায় ৮৯ হাজার আমেরিকান নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। মার্কিন বিশ্লেষকদের মধ্যে বড় কোনো দ্বিমত নেই যে আমেরিকায় এবারের নির্বাচনে এক নম্বর ইস্যু - করোনাভাইরাস। তাদের অনেকেই বলছেন, এবার রেকর্ড আগাম ভোটের অন্যতম কারণ কোভিড। বিধিনিষেধের কারণে আজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার উদ্বেগ যেমন এই আগাম ভোটারদের মধ্যে কাজ করেছে তেমনি অনেক পর্যবেক্ষকের মতে - কোভিড মোকাবেলায় সরকারের পারফরমেন্সে নিয়ে তাদের মনোভাব ব্যালটের মাধ্যমে দেখাতে অনেকেই উন্মুখ।

ইতিমধ্যে, রেকর্ড ৯ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন যা ২০১৬ সালে দেয়া মোট ভোটার উপস্থিতির ৬০ শতাংশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গত সাত মাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্যানডেমিক সামাল দিতে যা করছেন বা বলছেন, ভোটের সিদ্ধান্তে তার প্রভাব কী হচ্ছে? দু’দিন আগেও ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিবিসির একজন সংবাদদাতা ভোটারদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুনেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণী বলেছেন, ‘যেভাবে তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন তা খুবই দুর্বল।’ অন্যদিকে মাঝবয়েসী শ্বেতাঙ্গ এক নারীর কথা ছিল এরকম, ‘প্রেসিডেন্ট চাইছেন সবাই যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়ুক। আমি সেটা পছন্দ করছি।’ আরেক শ্বেতাঙ্গ তরুণীর বক্তব্য, ‘অত্যন্ত ভালো কিছু তিনি করেননি, আবার যে খুব খারাপ কিছু করেছেন তাও আমি বলব না।’

ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক জো গার্সটেনসন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসের মোকাবেলা যা করছেন অধিকাংশ আমেরিকান তাতে খুশী নন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যা করছেন তা হলো প্রতিদিনের পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে সেই মত তিনি সাড়া দিচ্ছেন।’ সর্বশেষ জনমত জরীপও বলছে যে প্রতি ১০ জন আমেরিকানের ৭ জনই মনে করছেন কোভিড-১৯ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ‘ভুল বার্তা’ দিচ্ছেন। তবে রিপাবলিকান সমর্থকদের সিংহভাগই এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের পেছনেই রয়েছেন। অধ্যাপক গার্সটেনসন বলেন, ‘শুধু যে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মতামতে ভিন্নতা রয়েছে তাই নয়, এলাকা ভিত্তিতেও জনমত ভিন্ন। যে এলাকার মানুষ এই প্যানডেমিকে মানুষ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা ক্ষিপ্ত।’ যেমন, বছরের শুরুর দিকে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জনমত জরীপে জো বাইডেন খুব সামান্য এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গ্রীষ্মে ঐ রাজ্যে কোভিড-১৯ ভয়ঙ্কর রূপ নেয়ার পর বাইডেনের পক্ষে সমর্থন অনেক বেড়েছে। অ্যারিজোনায় এই প্যানডেমিকে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫ হাজার ৯২০ জন।

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবারও বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে ট্রাম্পের সমর্থনে তেমন কোনো ভাটা দেখা যায়নি। কিন্তু অক্টোবর মাসে হঠাৎ সংক্রমণ হুহু করে বাড়তে থাকায় জনমত ঘুরে গেছে। সর্বশেষ জনমত জরীপে উইসকনসিনে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে সাত থেকে ১৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেছেন। এছাড়াও, যে রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানদের অন্যতম একটি ঘাঁটি সেই টেক্সাসেও ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ মনোভাবে স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, দুই দফা সংক্রমণে টেক্সাস বিপর্যস্ত। কোভিডে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৪০ জন মারা গেছে। টেক্সাসের চিত্রশিল্পী শেন রেইলি তার রাজ্যে কোভিডে এত লোকের মৃত্যুতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় রক্ষণশীলদের ভোট দিয়েছি। কিন্তু এই প্যানডেমিক মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা যা করছে তাতে জীবনে প্রথমবারের মত আমি ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেব।’ তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব ক্রোধের তেমন তোয়াক্কা করছেন না। দু’দিন আগে শনিবার পেনসিলভানিয়ার নিউটন শহরে শনিবার এক সভায় তিনি তার প্রতিদ্ব›দ্বীকে নিয়ে মশকরা করে বলেন, ‘জো বাইডেন কি বলছেন আমি গতকাল তা দেখলাম। তার মুখে সেই একই বুলি - কোভিড, কোভিড আর কোভিড। বলার মত তার কাছে আর কিছু নেই।’ ট্রাম্পের ঐ প্রচারণা সভায় অনেকের মুখেই মাস্ক ছিলনা।

শনিবার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি একটি হিসাব প্রকাশ করেছে যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রচারণা সভার কারণে অতিরিক্ত ৩০ হাজারেরও বেশি লোক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে অতিরিক্ত ৭০০ জন। অবশ্য সরেজমিনে তদন্ত নয়, বরঞ্চ প্রচলিত একটি গাণিতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে তারা এই রিপোর্ট দিয়েছে। অবশ্য অধ্যাপক গার্সটেনসন মনে করেন, বহু মানুষের ভোটের সিদ্ধান্তের পেছনে করোনাভাইরাস প্যানডেমিক একমাত্র বিবেচ্য নয়। তিনি বলেন, ‘খুব কম রিপাবলিকানই, বিশেষ করে যারা দলের ঘোরতর সমর্থক, তাদের দলীয় আনুগত্য ভঙ্গ করে জো বাইডেনকে ভোট দেবেন।’ তবে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যদি আমেরিকায় রাজনৈতিক পট বদলে যায়, কোভিড নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারফরমেন্সকেই তার প্রধান কারণ হিসাবে দেখা হবে।

অধিকাংশ সমীক্ষায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে। এতটাই এগিয়ে যে ২০০৮ সালের পর আর কোনও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এতটা শক্তিশালী দেখায়নি। সমীক্ষাকে পাত্তা না দিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এখনও হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন, তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। ভোটের ফল তার বিপক্ষে গেলে আইনি রাস্তাতেও হাঁটার জন্য আগেভাগে আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আবার ওই সব সমীক্ষাকেও ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট পরবর্তী দাঙ্গার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।

জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে রয়টার্সের করা সমীক্ষায় বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, ট্রাম্পের ৪২ শতাংশ।‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সমীক্ষাতেও উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনার মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এগিয়ে থাকছেন বাইডেন। অন্যান্য সমীক্ষাতেও পাল্লা ভারী বাইডেনেরই। যদিও পপুলার ভোট তথা জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে করা এই সব সমীক্ষা সব সময় শেষ কথা বলে না। এই সমস্ত সমীক্ষায় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে হেরে গিয়েছেন, এমন নজির অনেক রয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু এবার বাইডেন এতটাই এগিয়ে রয়েছেন যে অশনি সঙ্কেত দেখছে রিপাবলিকান শিবির। তা বলে ফাঁকা ময়দান ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন ট্রাম্প। করোনা সংক্রমণের জন্য এ বছর এই ই-মেইল ( আর্লি ভোটিং) ভোটিং বেশি হয়েছে। এই ইমেইল-এ দেয়া ভোটের গণনা হবে পরে। আগে থেকেই এই ভোটিংয়ে কারচুপির আশঙ্কা করে এবং গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ‘এটা ভয়ঙ্কর পদ্ধতি যে ভোটের পর ব্যালট সংগ্রহ করা হবে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।’ অর্থাৎ ট্রাম্প যে সহজে হার মেনে নেবেন না, তা তার কথা থেকেই স্পষ্ট। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Mohammad Sohel Rana ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    তাদের ওখানে ভোট মানে ভোটারের মতামতের উপর নির্ভর করে কে দেশের সেবক হবে,,, অার অামাদের এখানে নির্বাচন এলে অনেক গুলো তর তাজা মানুষ ক্ষুন হয় ঘুম হয় রক্তা রক্তি হয় এর পর নিজেরাই ক্ষমতায় স্থায়ী থেকে যায়,,,,,
    Total Reply(0) Reply
  • ব্যাথার কাব্য ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    ট্রাম্প একজন রিয়াল হিরো। দোস্তো করোনা আক্রান্ত হয়েও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে ট্রাম্প চীনা ভাইরাসকে পরোয়া করে না। বিষয়টা আমেরিকানদের বোঝা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Rana Rana ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    দ্বিতীয়বারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাই ??????
    Total Reply(0) Reply
  • Raihanur Rahaman Rudro ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    আমার কাছে মনে হয় ট্রাম্পই জিতবে
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Hasan Rony ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    জো বাইডেন আরো বিপদজ্জনক হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Satkania Ctg ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    বড় বড় রাষ্ট্র গুলো গারিব রাষ্ট্র গুলো যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে। আর তারা ফায়দা লুটে। যেমন বিগত ৫ বছরে আগে আফগানে জঙ্গী বিরুদ্ধ অভিযান বলে মুসলিম হত্য।লিবিয়ার গার্দিফিকে হত্যার। ফিলিস্থানে যোদ্ধা লাগিয়ে দেয়া। ইত্যাদি ট্রাম্প সেই সুযোগ করে উটতে পারে নাই। না হয় এত দিনে পাকিস্থানের সাথে ভারত,বাংলাদেশের সাথে মায়নমারে যুদ্ধো লেগে যেতো । তাই আমরা কাকে সার্পোট করব চিন্তা করেন আমার মতে ট্রাম্পেই ভাল
    Total Reply(0) Reply
  • Sanjib Chakma ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    আমার মতে ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসের নায়ক হচ্ছেন। কারন সাংঘাতিক কূটনৈতিক এবং চোরা বুদ্ধি সম্পন্ন এই ব্যক্তিকে সহজে বধ করা সম্ভব নয় । তবে জো বাইডেন বর্তমান সময়ে আমেরিকার জন্য সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসূরী।
    Total Reply(0) Reply
  • Raju Chowdhury Himu ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    ট্রাম্প বিশ্বে আমেরিকার শক্তি হ্রাস করেছে, তাই বাইডেন ই হতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel Sarker ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    হে পৃথিবী বাসি তোমরা যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখতে চাও তাহলে ট্রাম্পকে ক্ষমতায় বসাও।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ