মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইতোমধ্যে অনেক ভোটার আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তবুও যেদিন ভোটের দিন সে দিনের অপেক্ষায় থাকে মানুষ। বিশেষ করে বিশ্বের সব চেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তো আদালা কৌতুহল থাকে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের।
আর একদিন পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, সেই আলোচনা চলছে বাংলাদেশেও৷ কিন্তু রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট, ট্রাম্প না বাইডেন, কে জয়ী হলে কেমন প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের উপরে?
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে সাধারণত তেমন পরিবর্তন আসে না৷ তবে এবারের নির্বাচনের পর দেশটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক৷
তার মতে, যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচিত হলে দেশটির চীন-ভারত বিষয়ক সমীকরণে পরিবর্তন আসতে পারে৷ যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে৷ এতে বাংলাদেশের লাভই হবে।
‘‘আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আবারো ক্ষমতায় আসলে মুসলিম বিশ্ব নিয়ে তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে পারে৷ সেটিও বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে,’’ বলেন তিনি৷
তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রধান উদ্বেগ হলো তৈরি পোশাক রপ্তানি৷ ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আসলে এ খাতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ৷’’
তার মতে, হিলারি ক্লিন্টন এখনো দলের রাজনীতিতে বড় প্রভাব রাখেন৷ আর তাই, জো বাইডেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে হিলারির নীতিও প্রতিফলিত হবে৷
‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বায়ন নিয়ে ভাববে’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সাথে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল জায়গাগুলো হলো:
১. করোনা ভাইরাসের টিকা
২. শিক্ষার্থী ভিসা
৩. বৈধ অভিবাসন
৪. জিএসপি সুবিধা
৫. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
৬. বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান
এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক জোট৷
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে৷ গত মাসে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান-এর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়েছে৷ সফরে বিগান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় তারা৷ এই ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তৃতির নীতি অনুসরণ করে আসছিল৷ তাতে পরিবর্তন আসছে৷ ‘‘কারণ ভারতের সাথে প্রতিবেশি দেশগুলোর সম্পর্ক বেশ খারাপ৷ আর তাদের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদের প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখছে না৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী৷''
তিনি বলেন, ‘‘মূল বিষয় হলো অর্থনীতি৷ করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে৷’’
যুক্তরাষ্ট্রে কারা ক্ষমতায় আসলো তার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়ে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে যা হচ্ছিল তাই হবে৷ আর বাইডেন আসলে ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে অর্থনীতি এবং ভাবমূর্তির তা কাটিয়ে উঠতেই ব্যস্ত থাকতে হবে৷ ফলে বহির্বিশ্ব নিয়ে ভাবার তেমন একটা সময় তাদের থাকবে না৷’’
তার মতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সহনশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন অনেক পিছিয়ে গেছে৷ তাই অন্য দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তারা ভবিষ্যতে কবে, কতটুকু কথা বলতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি৷ অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘আমাদের (বাংলাদেশকে) শুধু মাথা ঠান্ডা রেখে উন্নয়নটা ধরে রাখতে হবে৷’’
আর শহীদুল হক মনে করেন, ‘‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বায়ন নিয়ে ভাববে৷ তবে সেটা সময় নিয়ে৷ তার সেই ভাবনায় বাংলাদেশ লাভবানই হবে৷’’
রোহিঙ্গা সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশেই থাকবে বলে মনে করেন তারা৷ আর অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাজারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়বে৷ বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে এরইমধ্যে দু'দেশের আলোচনা শুরু হয়েছে৷ এদিকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের একটি প্রভাব রয়েছে বাংলাদেশের উপরে৷ -ডয়চে ভেলে
1 Attached Images
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।