Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নবাব সেজে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ১১:০৫ এএম

নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহ খানের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন ঢাকা ১০ সংসদীয় আসনে অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনের প্রার্থী খাজা আলী হাসান আসকারী। অবশেষে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- নবাব খাজা আলী হাসান আসকারীর সহযোগী রহমত আলী ওরফে রাজা, মীর রাকিব আফসার, সজীব ওরফে মীর রুবেল, আহমদ আলী ও বরকত আলী ওরফে রানা।

পুলিশ জানায়, বছর পাঁচেক আগে নিজের নামের সঙ্গে খাজা শব্দটি যোগ করেন আলী হাসান আসকারী। নবাব সলিমুল্লাহ খানের বংশধর খাজা আমানুল্লাহ আসকারীর ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন এই প্রতারক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে নবাবের বংশধর হিসেবে প্রচারণা শুরু করেন। একইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রোগ্রামে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেন। সেসব ছবি প্রচার করতেন ফেসবুকে। এগুলো ছিল প্রতারণার হাতিয়ার।

প্রতারণার কাজে ১০-১২ জনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি চক্র। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করতেন। তারপর কৌশলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন আসকারী। নিজের বিত্ত-বৈভব ও নবাবের বংশধর পরিচয় দিয়ে খাতির জমাতেন। তার বাবার প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ৭০০ নার্স নিয়োগ করা হবে জানিয়ে কর্মী দিতে বলতেন। নবাবের বংশধর হিসেবে অনেকেই তাকে বিশ্বাস করে কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন। টাকা নেওয়ার পরপরই তাদের ফোন আর ধরতেন না। মোবাইল নম্বর ব্লকলিস্টে রাখতেন। কেউ বাড়াবাড়ি করতে চাইলে হত্যার হুমকিও দিতেন।

পুলিশ আরো জানায়, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নার্স নিয়োগের নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন। এছাড়া পোলান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামেও টাকা নিয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার নাম করেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এসব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার নাম ভাঙাতেন তিনি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসকারী স্বীকার করেছেন, তার এই প্রতারণার কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগী ছিল রাশেদ ওরফে রহমত আলী ওরফে রাজা, মীর রাকিব আফসার, সজীব ওরফে মীর রুবেল, আহাম্মদ আলী ও বরকত আলী ওরফে রানা। এরমধ্যে রাশেদ, আহাম্মদ ও বরকত আপন তিন ভাই। বড় ভাই আহাম্মদ তার ম্যানেজার ছিল। রাশেদকে বানাতেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। আর ছোট ভাই বরকত ছিল তার বডিগার্ড।

সিটিটিসির ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আসকারী একজন ভয়ঙ্কর প্রতারক। সে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। নবাবের বংশধর হিসেবে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে সে এসব প্রতারণা করতো। প্রতারণার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ফুপু বানিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামও ভাঙিয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার প্রতারণার আরও কৌশল জানা ও প্রতারণা করে আয় করা অর্থ কোথায় পাচার করেছে, তা জানার চেষ্টা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ