মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের নির্বাচনে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাপিয়ে ভোটারদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে উঠেছেন ‘লড়াকু’ ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন; যিনি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি, বার বার ব্যর্থতার পরও উঠে এসেছেন রাজনীতির কেন্দ্রে। নির্বাচনের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এসেও ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং নিউ ইয়র্কের একটি লিবারেল আর্টস কলেজ পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন।
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন বাইডেন। করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেশি সমর্থন পেয়েছেন তিনি। আবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভোটাররা ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনেই বেশি আস্থা রাখছেন। এক্ষেত্রে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৬ পয়েন্টে। তাছাড়া, দেশকে একতাবদ্ধ রাখার প্রশ্নেও আমেরিকানরা বাইডেনকে বেশি যোগ্য মনে করছেন। এক্ষেত্রে প্রায় ২০ পয়েন্ট বেশি সমর্থন আছে বাইডেনের ঝুলিতে। সব মিলিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হয়ে উঠেছেন ‘সবচেয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।’ অথচ ব্যক্তিগত জীবনে ট্রাজেডির কারণে ডেলাওয়ারের সাবেক এই সিনেটর একাধিকবার রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। হোয়াইট হাউজের দৌড়েও বাইডেন এবারই প্রথম নন। বরং আরও দুইবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা তাকে বার বার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এবারের নির্বাচনে জয় পেলে ওবামা আমলে দীর্ঘ আট বছর ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জো বাইডেনই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।
বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভাইস প্রেসিডেন্টের তকমা দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছিলেন বাইডেন। কিন্তু সেবার ওবামার কাছে হেরে যান তিনি। পরে তিনি ওবামার রানিংমেট হন এবং আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ওই আট বছরে নানা নীতি নির্ধারণীতে দৃঢ়ভাবে প্রেসিডেন্ট ওবামার পাশে থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে গেছেন বাইডেন। তার সেই ভ‚মিকার কথা বলতে গিয়েই ওবামা বলেছিলেন, ‘তিনি (বাইডেন) এখন পর্যন্ত পাওয়া আমেরিকার সেরা ভাইস প্রেসিডেন্ট।’ ওবামা সবসময় ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন বাইডেনকে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করায় বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে বাইডেনের ধারণা খুব স্পষ্ট। তাই রাজনীতিতে ওবামার যেটুকু অনভিজ্ঞতা ছিল তা তিনি খুব সহজেই পূরণ করতে পেরেছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জো বাইডেন ‘মিডল ক্লাস জো’ নামেও পরিচিত। তার এ পরিচয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘বু-কলার’ শেতাঙ্গ ভোটারদের দলে টেনেছিল, ওবামার জয়ে যাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের ‘বু-কলার’ বলা হয়।
ডেলাওয়ার থেকে টানা ছয় মেয়াদে সিনেটর নির্বাচিত হওয়া জো বাইডেন ১৯৭২ সালে প্রথম বার নির্বাচিত হন। অনেকদিন ধরেই ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটার জেমস কেইলব বোগসকে হারিয়ে ৩০ বছরের বাইডেন রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। অথচ, সেবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি হয়েছিল। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর। ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তিনি প্রথমবার প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালের ৯ জুন ওই ঘোষণার পর প্রতিদ্ব›দ্বীদের পেছনে ফেলে তিনি তরতর করে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় বক্তৃতা চুরি করার কেলেঙ্কারি স্বীকার করে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। বাইডেন আইওয়ায় এক সমাবেশে সমাপনী বক্তৃতায় যে কথাগুলো বলেছিলেন, তা ছিল যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা নিল কিনকের একটি ভাষণের হুবহু কপি। কিনক নিজের শ্রমিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা নিয়ে যা বলেছিলেন, তার প্রায় হুবহু বলে যান বাইডেন।
আগের এক ভাষণে একই কথা বলার সময় তিনি কিনকের নাম নিলেও আইওয়ার সভায় তা চেপে যান। সে সময় তারই এক ডেমোক্র্যাটিক প্রতিপক্ষ বিষয়টি সামনে আনেন। এই অভিযোগের সূত্র ধরে বাইডেনের ছাত্রজীবনের একটি ঘটনা সামনে নিয়ে আসা হয়। আইনের ছাত্র হিসাবে বাইডেন তার ‘সাইটেশন’ পেপারে অন্য একজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তিনি অবশ্য তখন বলেছিলেন, এটা যে নিয়ম বহির্ভ‚ত তা তিনি জানতেন না। কিন্তু আবারও একই কান্ড করায় বাইডেনের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সামনে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন বাইডেন। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।