দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
অথচ আমাদের মনে রাখা উচিত ছিলো, এই শয়তানের প্ররোচনার কারণেই মানব জাতি জান্নাতে বসবাস না করে সমস্যা সংকুল এই পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে শুধুমাত্র টিকে থাকার নির্মিত্তে প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাতো করোনা ভাইরাসও দেখি না, আমাদের জীবন প্রতি মূহুর্তে যার উপর নির্ভরশীল, সেই অক্সিজেনকেও তো দেখি না, তাই বলে কি আমরা তাদের উপস্থিতিকে অস্বিকার করবো? নিশ্চয়ই না। আমরা করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার জন্য মাস্ক, হেন্ড গেলাপ্স, এমনকি লাশের মতো আপাদোমস্তক কাপড় আবৃত হতেও প্রস্তুত। প্রশ্ন আসতে পারে কেন? কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কোভিড নাইনটিন বায়ু বাহিত একটি ভাইরাস যা মানব শরীরে প্রবেশ করলে তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্গানগুলো অকার্যকর করে, ২ সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে! মানুষ বাঁচতে চায় তাই সে যে কোন ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। আর আমাদের মহানবী, তিঁনিতো ভূমন্ডল এবং নভোমন্ডলের যত সৃষ্টি আছে, সবার জন্য রাহ্মাতুল্লিল আলামীন। তাই তাঁর দেখানো পথে চললে, শুধু ভাইরাস নয় স্বয়ং ইবলিশ শয়তানও কিছুই করতে পারবে না। শয়তান কিন্তু জানে, সে মহানবীর অনুসারীদের ক্ষতি করতে ব্যর্থ, তবুও সে তার ব্যর্থতা মানতে নারাজ! সে অব্যাহতভাবে আমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, শাবাব আহ্মেদ আলভির মত যাঁরা ছোট বেলা থেকে পারিবারিকভাবে ইসলামী অনুশাসনে বেড়ে উঠেছে, তাঁদের সর্বনাশ করার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র সুযোগও শয়তান হাত ছাড়া করবে না।
শয়তান হয়ত আলভির মৃত্যুতে উল্লাস প্রকাশ করেছে কিন্তু সেতো আর শাবাব আহ্মেদ আলভির উচ্ছ্বাস দেখেনি যেমন সে দেখেনি, সূরা ইয়াসিনে বর্ণিত হাবীবে নাজ্জারের উচ্ছ্বাসকে। শয়তান দেখেছে শাবাবের নিথর দেহ পড়ে আছে কানাডার কোন রাজপথে, শয়তান হয়ত ভেবেছে আল্লাহ্র একটি নেক বান্দাকে আমি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলাম, এটা আমার বড় সফলতা! এই ক্ষেত্রে আমি বলবো শয়তান মূর্খের রাজ্যে বসবাস করছে। মহানবী জানেন, আমার অনুপস্থিতিতে শয়তান বিশ্ব-শাসনের চেষ্টা করবে, তাই মহানবীর ঘোষণা, আমার কোন নেক্কার উম্মত যদি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে শহিদের দরজা লাভ করবে!!!
অর্থাৎ সরাসরি জান্নাতে চলে যাবে। মহানবীর ঘোষণা অনুযায়ী শাবাব আহ্মেদ আলভি ইতিমধ্যে জান্নাতী হয়ে গেছে আলহামদুলীল্লাহ্। শাবাবের জান্নাতি হওয়ার তিনটি কারণ আমি উল্লেখ করছি (১) হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর ভাই হযরত জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হওয়ার সাথে সাথে জান্নাতে পাখি হয়ে উঠে বেড়ানো শুরু করেন, এর জন্য মহানবী তাঁর উপাধি দিয়েছেন জাফর তাইয়ার। (২) শাবাব নামের অর্থ যুবক, একজন যুবক সবার কাছে প্রিয়। অর্থাৎ পিতা মাতার কাছে একজন যুবক যেমন প্রয়োজনীয় সন্তান, মহান আল্লাহ্পাকের কাছেও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একজন যুবকের ভূমিকা অনেক বেশী গ্রহণীয়। বিপরীত দিকে শয়তানও ওর কাজের এসিসটেন্ট বা সহযোগী হিসেবে যুবকদেরই সবার আগে টার্গেট করে। আর আমাদের মহানবী তো ঘোষণাই করেছেন, “আল হাসানু ওয়াল হোসাইন সাইয়্যিদা শাবাবি আহ্লিল জান্নাত”। অর্থাৎ ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা জান্নাতী যুবকদের সর্দার। সুবহানাল্লাহ্। অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি উন্নত রাষ্ট্র কানাডা, যেই রাষ্ট্র কবিরাগুণাহের দুয়ার সবার জন্য অবারিত। সেই রাষ্ট্রে ইসলামী অনুশাসনে নিজের জীবন পরিচালিত করা মানে, জ্বলন্ত আগুণ নিজের হাতের তালুতে চেপে ধরা। তাঁর এই ত্যাগই শয়তানের গাত্র দাহের প্রধান কারণ। আর শয়তান যাঁর উপর যত বেশি অসন্তুষ্ট, মহানবী তাঁর প্রতি তত বেশি সন্তুষ্ট। (৩) আলভির আরেকটি নাম হচ্ছে আহ্মদ। যা আমাদের মহানবীর আসমানী পরিচয়। আল্লাহ্ শব্দ লিখতে ৪টি অক্ষর ব্যবহৃত হয়, আর আহ্মদ শব্দ লিখতেও ৪টি অক্ষর ব্যবহৃত হয় সুবহানাল্লাহ্। আপনি যদি, বাংলায় আল্লাহ লিখেন, তাহলে লিখতে হবে আ+লা+লা+হ্ আর যদি আপনি আহ্মদ লিখেন, তাহলে লিখতে হবে আ+হ+মা+দ উভয় নামের শুরু হয়েছে আলিফ দিয়ে, আবার আপনি যদি আহ্মদ শব্দ থেকে মিম তুলে নেন অর্থাৎ মুহাম্মদ নামের আধ্যাক্ষর মিম তুলে নিলে আহমদ শব্দটি হয়ে যাবে আহাদ, যা মহান আল্লাহ্পাকের অন্যতম সিফাতি নাম সুবহানআল্লাহ! সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম, আহ্মদ নাম মোবারক শুধুমাত্র মহানবীর পরিচয় বহন করে না, আহ্মদ নামের অন্তরালে আহাদ নাম মোবারকও লুকায়িত। আর যেই নাম আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের পরিচয় বহন করে, সেই নাম যে গ্রহণ করবে, তাঁকে বরণ করার জন্য আল্লাহ্ এবং তাঁর হাবীব উভয়েই অপেক্ষায় থাকেন! সংগত কারণে শয়তান শাবাব আহ্মদ আলভিকে হত্যা করে সাময়িকভাবে উৎফুল্ল হলেও চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে শাবাব আহ্মদ আলভীর। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, পৃথিবীতে মানুষ ১টা খুন করলে ১ বার শাস্তি দেওয়া সম্ভব কিন্তু যারা সিরিয়াল কিলার শত শত খুনের আসামি, তাদের শাস্তি হবে কিভাবে? আমি শুধু তাদের কথা বলব না, আমি বলবো শয়তান এবং তার জ্বীন চেলারা প্রতিনিয়ত মানুষকে খুন করে চলেছে অথচ দুনিয়াতে মানুষ তাদের বিচারের কোন সুযোগই পাচ্ছে না, আর এজন্যই মহান আল্লাহ্পাক চূড়ান্ত বিচারের দিন নির্ধারণ করেছেন।
যাতে সবাই সেদিন ন্যায় বিচার পায়। এই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার পূর্বে, মহান আল্লাহ্পাক মৃত্যু নামক একটি জন্তুকে জবেহ্ করে দিবেন। যাতে হাজার হাজার মানুষের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করা যায়। অর্থাৎ ধরুন একজন ব্যক্তি ১ হাজার ব্যক্তিকে খুন করেছে, দুনিয়াতে তাকে ১ বারই ফাঁসি দেওয়া সম্ভব, কিন্তু আখেরাতে যখন মৃত্যুকে জবেহ্ করা হবে, তখন সেই হাজার ব্যক্তির খুনের আসামিকে, হাজার বার ফঁাঁসি দিলেও তার মৃত্যু হবে না। তবে সে প্রত্যেকবারই মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব করবে। তাহলে এই দুনিয়াতে কি আমরা শয়তানকে ছেড়ে দেব? ওর সেচ্ছাচারিতার কাছে আমরা অসহায় আতœসমর্পণ করবো? প্রশ্নই আসে না, আমরা ঘুরে দাঁড়াবো ইনশাল্লাহ্।
আমরা দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেব বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি হৃদয় উজাড় করে দেওয়া দুরুদ ও সালাম পড়ার মাধ্যমে।
লেখক : গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।