দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রীদের সাথে আল্লাহ প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির একটি অনন্য সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন। কুরআনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে- নবী মুমিনদের জন্য তাদের প্রাণাধিক প্রিয় এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা। (সুরা আহযাব : ৬)
এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পুত্র-কন্যাগণ। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চারজন কন্যা এবং তিনজন পুত্র ছিলেন। কন্যারা যথাক্রমে যায়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলছুম ও ফাতিমা (রা.)। তিন পুত্র যথাক্রমে কাসিম, আব্দুল্লাহ ও ইবরাহিম (রা.)। তন্মধ্যে আব্দুল্লাহ’র উপাধি ছিল তাহির এবং তাইয়্যিব। তিন পুত্রই বাল্যবয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। কন্যাদের সন্তান-সন্ততি ছিলেন। তন্মধ্যে কনিষ্ঠা কন্যা ফাতিমা (রা.)-কে রাসুল (সা.) তাঁর চাচাতো ভাই আলী (রা.)-এর সাথে বিবাহ দেন। আলী-ফাতিমা দম্পতির সন্তানরা বিশেষভাবে আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত এবং বর্তমানে তাঁদের বংশধররাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর বলে পরিচিত। আহলে বায়েতের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দুই সদস্য ছিলেন আলী-ফাতিমা দম্পতির দুই পুত্র ইমাম হাসান ইবনে আলী (রা.) ও ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রা.)। যখন সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়, যাতে আল্লাহ আহলে বায়েতকে পবিত্র করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইন (রা.)-কে একত্র করে আল্লাহর সামনে পেশ করেছিলেন। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী (সা.) এক সকালে বের হলেন। তাঁর পরনে ছিল কালো নকশাকৃত একটি পশমি চাদর। অতপর হাসান ইবনে আলী আসলেন এবং রাসুল (সা.) তাঁকে চাদরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতপর হোসাইন ইবনে আলী আসলেন। তিনি তাঁকেও চাদরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতপর ফাতিমা আসলেন। তিনি তাঁকেও চাদরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতপর আলী আসলেন। তিনি তাঁকেও চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতপর (কুরআনের আয়াত) তিলাওয়াত করলেন- আহলে বায়েত! আল্লাহ চান তোমাদের থেকে যাবতীয় অপবিত্রতা দুর করে তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র করে দিতে। (সহীহ মুসলিম : কিতাবু ফাদ্বায়িলুস সাহাবা, ২৪২৪)
নাজরানের অধিবাসী খ্রিস্টানদের সাথে বিতর্ক যখন মুবাহালা বা পরস্পর ধ্বংস কামনা করার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইন (রা.)-কে নিয়ে ময়দানে গিয়েছিলেন। যদিও পরে খ্রিস্টানরা ভয় পেয়ে মুবাহালা করা থেকে বিরত থেকেছিল। সান্দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল- ্রচল, আমরা আমাদের এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে আহ্বান করিগ্ধ, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে ডাকলেন এবং বললেন, আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার। (সহীহ মুসলিম : কিতাবু ফাদ্বায়িলুস সাহাবা, ২৪০৪)
এরপর বৃহত্তর অর্থে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রপিতামহ হাশিম ইবনে আবদে মানাফের বংশধর তথা বনু হাশিম গোত্র এবং এর অন্তর্গত বনু আব্দুল মুত্তালিব ও বনু আব্বাস গোত্র, অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা, ফুফু, চাচাতো ভাই-বোনও আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এদের সবার জন্য যাকাত গ্রহন করা হারাম। উল্লেখ্য, আহলে বায়েত হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া শর্ত। কোন অমুসলিম ব্যক্তিকে আহলে বায়েত বলে গণ্য করা হয়না। আহলে বায়েত প্রথমত সাহাবিদের অন্তর্ভূক্ত বলে একটি মর্যাদায় আসীন। এরপর আহলে বায়েত হিসেবে দ্বিগুণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁরা উম্মতের কাছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমানত। যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ। অচিরেই আল্লাহর নিকট থেকে (মৃত্যুর) দূত আসবে এবং আমি তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মধ্যে দুটি মহান বিষয় রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হল আল্লাহর কিতাব (কুরআন), যাতে রয়েছে হেদায়াত এবং নুর। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। অতপর তিনি (সা.) আল্লাহর কিতাবের উপর গুরুত্বারূপ করলেন এবং উৎসাহ প্রদান করলেন। এরপর বললেন- এবং (দ্বিতীয়টি হল) আমার আহলে বায়েত। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। (সহীহ মুসলিম : কিতাবু ফাদ্বায়িলুস সাহাবা, ২৪০৮)
নবী-পরিবারের সদস্যদের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা লালন করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের শর্ত। ইবনে আবি লাইলা তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মু›মিন হবেনা, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার প্রাণের চেয়ে অধিক প্রিয় না হব। এবং আমার পরিবার তার কাছে তার নিজের পরিবার থেকে প্রিয় হবে। এবং আমার বংশধর তার কাছে তার নিজের বংশধর থেকে প্রিয় হবে। এবং আমার সত্ত্বা (ব্যক্তিত্ব) তার কাছে তার নিজের সত্ত্বা থেকে প্রিয় হবে।
(মু›জামুল কাবীর : ইমাম তাবরানী; শু›আবুল ঈমান : ইমাম বায়হাকী)
দ্রষ্টব্যঃ উক্ত হাদিসের সনদে দুর্বলতা রয়েছে।
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, অধ্যয়ণরত- (মাস্টার্স) রিলিজিয়াস স্টাডিজের অধীনস্থ ইসলামিক স্টাডিজ,
এয়ারফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।