Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পীরগাছায় ধর্ষকের বাড়ির পাশেই বড় হচ্ছে ধর্ষিতার সন্তান

পীরগাছা (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৪ পিএম

রংপুরের পীরগাছায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশেদুজ্জামান রয়েল। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে রয়েলের পরিবার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এদিকে প্রভাবশালীদের দফায় দফায় বৈঠকে সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে মামলা নেয় পুলিশ। ধর্ষক রয়েলকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ঘটনাটি উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামে।

বুধবার সরেজমিনে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট ধর্ষিতা কিশোরী এক ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছে। রয়েল জামিনে বেড়িয়ে এসেছে। ধর্ষিতার ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তান ধর্ষকের সামনেই বড় হচ্ছে নানা অপবাদে। প্রতিনিয়তই নষ্টা মেয়ে ডাক শুনতে হচ্ছে ধর্ষিতাকে। ধর্ষিতার পরিবার সমঝোতার মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় রয়েল ও তার পরিবারের লোকজন অব্যাহত হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র ও মামলার বিবরণে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর দাদী পাশের আশরাফুজ্জামান ভুট্টুর বাড়িতে কাজ করতেন। এ সময় ওই ছাত্রী দাদীর সঙ্গে প্রায় গিয়ে ভুট্টুর নাতনিকে দেখাশুনা করতো। এক পর্যায়ে ভুট্টুর ছেলে রয়েল মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখায় রয়েল।
গত ২৩ মে ওই ছাত্রীর পেটে প্রচ- ব্যথা হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম প্রতিবেদনে দেখা যায় ওই ছাত্রী ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় ২৭ মে পীরগাছা থানায় মামলা দায়ের হয়। দুই মাস আগে সে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে শিশুটি বাবার পরিচয় ছাড়াই ধর্ষকের বাড়ির পাশেই বড় হচ্ছে।

ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষক রয়েল জামিনে আসার পর তাদের সমঝোতা করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় একটি মহলের সহযোগিতায় রয়েল ও তার পরিবার ধর্ষিতার নামে চার শতক জমি ও তিন লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। শর্ত দেওয়া হয় জন্ম নেওয়া ছেলেটিকে দূরে কোথাও দত্তক হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু ছাত্রীর পরিবার রাজি না হওয়ায় ২০ দিন আগে বাদীর চাচার সহযোগিতায় তার বাবা ও মাকে বেধরক মারপিট করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের তদন্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শিশুটির মা বলেন, আমার বাবা দিনমজুর। মা ও দাদী পরের বাড়িতে কাজ করে। শিশু সন্তান নিয়ে নানা অপবাদ, হুমকি-ধমকি ও কষ্টে দিন যাচ্ছে। আমাকে যে ধর্ষণ করেছে সে জামিনে এসে চোখের সামনে দিয়ে চলাফেরা করছে।

মামলার বাদী মেয়েটির বাবা বলেন, মামলা তুলে নিতে সমঝোতা না করায় প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমার বাবা-মাকে মারধর করেছে। থানায় অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ওদের ভয়ে আমাকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোকুল চন্দ্র বলেন, ভিকটিমের দাদা-দাদীকে মারধরের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে এ বিষয়ে কোন সাক্ষী পাওয়া যায়নি।
পীরগাছা থানার ওসি (তদন্ত) দেবাশীষ রায় বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল না আসায় এখনও মামলার চার্জশীট দেওয়া সম্ভব হয়নি।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম বলেন, বাদীর অভিযোগের বিষয়ে একটি জিডি করে আদালতে দাখিল করা হবে। আদালতের নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ