চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মানুষকে আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টি করতে গিয়ে তিনি ফেরেশতাদের আপত্তি উপক্ষো করেছেন। তাদেরকে এই পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন তারা বলল, তুমি কী পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা প্রতিনিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জানো না।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ৩০)।
আল্লাহর মহব্বতের সৃষ্টি মানুষকে তিনি সৃষ্টির সবচেয়ে সুন্দর করে বানিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘ আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে’। (সূরা ত্বিন : আয়াত ৪)। সমস্ত সৃষ্টির বেলায় আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেছেন, তখন বলেছেন, ‘হও’ তা ‘হয়ে গেছে’। কিন্তু সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে আল্লাহ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি বললেন, হে ইবলিশ, আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাকে সেজদা করতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, নাকি আগে থেকেই তুমি অহংকারী ছিলে?’ (সূরা সা’দ : আয়াত ৭৫)।
মানুষের জীবন ও মরণের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর হুকুম ছাড়া যেমন কেউ পৃথিবীতে আসতে পারে না, তেমনি ইচ্ছে করলেই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়াও যায় না। তাই আত্মহত্যা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে নিজেই নিজেকে হত্যা করার সুযোগ নেই, সেখানে অন্য কেউ কিভাবে বিনা অপরাধে বা বিনা বিচারে একজনকে হত্যা করতে পারে? হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহপাক সর্বপ্রথম হত্যা মামলার মিমাংসা করবেন এবং বান্দার যাবতীয় আমলের মধ্যে নামাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন। (সহীহ মুসলিম)।
বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করা তো দূরে থাক। তিনটি অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো অপরাধে কাউকে হত্যা করার কথাও শরীয়তে পাওয়া যায় না। হাদীস ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনটি অপরাধের দরুণ একজন মুসলীমকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায় । ১. বিবাহিত হয়েও ব্যভিচার করলে। ২. কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করলে। ৩. নিজ ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করলে। (তিরমিজী শরীফ)।
মানুষ যখন নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে যায়, তখন তাদের মধ্যে দেখা দেয় মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। তারা তাদের মনুষত্ব্য হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়। এহেন পরিস্থিতিতে একজন মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে না। পরিচয়হীন লাশ, ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ ও বস্তাবন্দি কঙ্কাল যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। অথচ মানুষ হত্যা মহাপাপ।
হত্যাকান্ড প্রকাশ্যে করলে হয় প্রকাশ্য হত্যা আর গোপনে করলে হয় গুপ্ত হত্যা। আমাদের সমাজে আজ মহামারীর মতো বিচারবহির্ভূত গুপ্ত হত্যা হচ্ছে। কাউকে হত্যা করার শাস্তি একটাই, মৃত্যুদন্ড। চাই সে হত্যা গোপনে হোক বা প্রকাশ্য। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে তার বিচারের মাধ্যমে শাস্তি হোক, তাতে কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু অপরাধীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিনা বিচারে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা কোনো সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না।
শিরকের গুনাহের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ মানুষ হত্যা করা। রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন, ‘মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট সমস্ত পৃথিবী ও তাঁর যাবতীয় বস্তু ধ্বংস হয়ে যাওয়া ততোটুকু ক্ষতিকর নয়, যতোটুকু ক্ষতিকর একজন মুসলমান নিহত হওয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ)। নবী করীম (সা.) বলেছেন, যদি আসমান জমিনের সকল অধিবাসী একজন মুসলমানকে অবৈধভাবে হত্যা করার জন্য একমত পোষন করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
আদর ও ভালোবাসা দিয়ে আল্লাহ যেমন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তেমন মায়া ও মুহাব্বাত দিয়ে তিনি মানুষ জাতির সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। একজন মানুষের জীবন, সম্পদ, মানসম্মান আল্লাহর কাছে এত দামি যে, কোরআন ও হাদিসে এসব বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আল কোরআনে তো আল্লাহ একজন মানুষ হত্যা করাকে গোটা মানব-জাতিকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।