Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্প্রীতির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা আসাম সরকারের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০২ পিএম

পরিচয় গোপন করে কোন মুসলিম ছেলে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে বলে দু’দিন আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তার এই বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা শুরু হলে কিছুটা নরম হয়ে বুধবার তিনি বলেন, ‘ধর্মের বাইরে বিবাহ যাতে কোনো বলপ্রয়োগ না করে স্বাধীনভাবে হয়, সেবিষয়ে খেয়াল রাখবে আসামের বিজেপি সরকার।’ একই দিন পৃথক বার্তায় তিনি আবারও জানিয়ে দেন, সরকারের টাকায় আর কোরান শিক্ষা দেয়া হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী প্রচারণার কারণে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ চরম আকার ধারণ করেছে। মুসলিম-বিদ্বেষ ও নির্যাতনের ঘটনাও ক্রমবর্ধমানহারে বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, হিন্দু-মুসলিম বিয়ে ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে সম্প্রতি প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপন ঘিরে ভারতজুড়ে তাণ্ডব শুরু হয়। হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে বাধ্য হয়ে ওই বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। হিন্দু-মুসলিম বিয়ের ঘটনাকে বিজেপি নেতারা ‘লাভ-জিহাদ’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছেন। ওই বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করেই দু’দিন আগেই বিশ্বশর্মা লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের মতো পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে সমালোচনার মুখে বক্তব্য সংশোধন করে বুধবার তিনি বলেছিলেন, ‘আসামের মেয়েরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভ জিহাদের মতো বিপদের শিকার হচ্ছেন। পরে মেয়েরা তালাক নিতে বাধ্য হচ্ছেন।’ এটাকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তার অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় গোপন করে ভিন ধর্মের মেয়েদেরকে বিয়ে করছেন মুসলিমরা। যে কেউ ধর্মীয় পরিচয় লুকিয়ে বিয়ে করলে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। ফের ক্ষমতায় এলে এ বিষয়ে সরকার কড়া পদক্ষেপ নেবে। আসামে এ ধরণের বেশ কিছু মামলা সনাক্ত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলাও প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কয়েকদিন আগেই হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারের টাকায় আর কোরান শিক্ষা নয়, বন্ধ করে দেয়া হবে সরকার সব পরিচালিত মাদরাসা। বুধবার আবার সেই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের টাকায় যদি কোরান শিক্ষা দিতে হয়, তাহলে বাইবেল ও ভগবত গীতাও শিক্ষা দেওয়া উচিৎ। তাই আমরা ঠিক করেছি, সরকারি টাকায় ওইসব ধর্মশিক্ষা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি অর্থে কোনও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে দেয়া হবে না। নভেম্বরেই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে সরকার।’ তিনি জানিয়েছেন, সরকারি সমস্ত মাদরাসাকে সরকারি স্কুলে পরিবর্তিন করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষকদের স্কুলেও নিয়োগ করা হবে। উল্লেখ্য, আসামে বর্তমানে ৬১৪টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদরাসা রয়েছে। এদের মধ্যে ৩টি রয়েছে ছেলেদের আর ৫৭টি মেয়েদের। বাকি সমস্তগুলিই কো-এড।

সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়ে প্রকাশ্যে এ ধরণের সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেয়ায় সমালোচিত হয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তবে এ সবই বিজেপি’র বিভেদের রাজনীতির অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যগুলোর মতোই আসাম সরকারও মুসলমানদের কোনঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছে। তারই প্রমাণ হচ্ছে, টোলগুলো (হিন্দুদের ধর্মীয় ও সংস্কৃত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান) চালু রেখে শুধুমাত্র মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত। সূত্র: টিওআই।



 

Show all comments
  • Md. Younus biswas ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৪৮ পিএম says : 0
    ভারতে মুসলিম সংখ‍্যালঘু সম্প্রদয়ের উপর চরম নির্যাতন চলছে। আর এস এস, বিশ্ব হিন্দু পিরষদ, বাজরং,শিবসেনা সমস্ত সম্প্রদায়িক শক্তি আজ এক হয়ছে বি জি পির পতাকা তলে। সময় হয়ছে সমস্ত মুসলিম শক্তির এক হওয়ার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ